নিখিল কামাথ ভারতের সবচেয়ে কম বয়সী বিলিয়নিয়ারদের একজন। বর্তমানে দেশটির তরুণদের কাছে অনুসরণীয় এক পরিচিত নাম। ভারতের সবচেয়ে বড় ট্রেডিং ব্রোকারেজ জেরোথা ব্রকিং লিমিটেডের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। কিন্তু কৈশোরেই স্কুলের পাট চুকিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর মাত্র ১৭ বছর বয়সে শেয়ার ব্যবসা শুরু করা নিখিল এখন শতাকোটির মালিক।
নিখিল (৩৪) সম্প্রতি হিউম্যানস অব বোম্বে ব্লগকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তার শৈশব থেকে এই জায়গা পর্যন্ত পৌঁছার গল্প বলেছেন। তার এ ঘটনা নিয়ে প্রতিবেদন করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
ছোট্টকালে কেন স্কুল পছন্দ করেননি, এ বিষয়ে নিখিল বলেন, ‘কেউ আপনাকে বলবে না কেন আপনাকে এটা করতে হবে, শুধু বলে তোমাকে এটা করতে হবে। এটা আমার ভালো লাগত না।’
স্কুল ছাড়লেও কী করবেন, তা তিনি জানতেন না, শুধু জানতেন অর্থ উপার্জন করতে হবে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে দ্রুতই তিনি একটি কল সেন্টার থেকে কাজের ডাক পান। এরপর তিনি বাড়ি ছেড়ে বান্ধবীর সঙ্গে থাকতে শুরু করেন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত সেখানে তিনি কাজ করতেন। সেখানে কিছুদিন যাওয়ার পর তিনি সকালের শেয়ার লেনদেনের কাজ শুরু করেন।
তিনি আরও বলেন, একটা সময় তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে দাবা খেলতে শুরু করেন।
নিখিল ১৪ বছর বয়সে তার বন্ধুর সঙ্গে মিলে প্রথম ব্যবসা শুরু করেন। তারা পুরোনো ফোনের বেচাকেনা করতেন। কিন্তু যখন তার মা বিষয়টি টের পেলেন, তখন ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হয়।
তিনি বলেন, ‘মা মনে করেছিল এই ফোনের ব্যবসার জন্যই আমি স্কুলে যাই না। তিনি টয়লেটে একটি ফোন ফেলে দেন। এরপর আবার স্কুলে ফিরি। স্কুল আমার কাছে বিরক্তিকর হয়ে দাঁড়ায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাকে বোর্ড পরীক্ষায় বসতে দিতে চায়নি এবং এ জন্য আমার মা-বাবাকে স্কুলে ডেকে পাঠায়। তারা চেয়েছিল আমি যেন আমার কর্মকাণ্ডের জন্য অনুতপ্ত হই…আর তখনই আমি স্কুলের পাট শেষ করে দিই।’
ফোর্বস ইন্ডিয়া রিচ লিস্টে নিখিল ও তার ভাই নিথিন কামাথ স্থান করে নেওয়ার পর গত জানুয়ারিতে সিএনবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিখিল বলেছিলেন, ‘কলেজ ডিগ্রি না থাকায় কেউ আমাকে কাজে ডাকছিল না। তার মানে হলে আমাকে এমন কিছু করতে হবে যেটাতে এসব ডিগ্রির প্রয়োজন নেই। এর কিছুদিন পরই প্রায় ১৮ বছরের দিকে আমি স্টকস লেনদেন শুরু করি। বাবা আমাকে কিছু অর্থ দিয়ে বলেছিলেন, এটা দিয়ে চালিয়ে নাও। আমার প্রতি তার অগাধ আস্থা ছিল।’
শুধু নিখিলের বাবাই তার ওপর আস্থা রেখেছিলেন, তেমনটা নয়। তার কল সেন্টারের বস ও সহকর্মীরা তাদের অর্থ বিনিয়োগ করতে দিয়েছিলেন। এরপর কল সেন্টার ছেড়ে নিখিল তার বড় ভাইকে নিয়ে কামাথ অ্যাসোসিয়েটস চালু করেন। ২০২০ সালে তারা তাদের ব্যবসার সঞ্চয় তুলে নিয়ে জেরোথা শুরু করেন। ব্লুমবার্গের তথ্যমতে, জেরোথার আর্থিক মূল্য এখন ৩৫ বিলিয়ন রুপি।
জেরোথার সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সিআইও নিখিল হিউম্যানস অব বোম্বেকে বলেন, ‘১৪ বছর বয়সে স্কুলের সমাপ্তি টানা, কল সেন্টারে কাজ করা, এরপর জেরোথা থেকে ট্রু বিকন, এসব অভিজ্ঞতা থেকে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমাকে ভালো করতে হবে। বিলিয়নিয়ার হওয়ার পরও আমার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আমি এখনো সেই মানুষ যে দিনের ৮৫ শতাংশ সময় কাজ করে।’