পুলিশের লাঠিচার্জে আ’হত বিএনপি নেতার মৃ’ত্যু, মহাসচিবের শোক

খুলনায় দলীয় কর্মসূচি পালনকালে গত ২৯ মার্চ পুলিশের লাঠিচার্জে আ’হত ওয়ার্ড বিএনপিনেতা কাজী মো. বাবুল হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। গতকাল রোববার রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তাঁর মৃ’ত্যুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শোক জানিয়েছেন।

নিহত কাজী মো. আবুল হোসেন জেলার ৩১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি ছিলেন।

আজ সোমবার দুপুরে কেডিঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে দলীয় কার্যালয়ের সামনে তাঁর মরদেহ আনা হলে নেতারা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল আলম মনাসহ নেতারা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের শোক

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ সোমবার এক বিবৃতিতে খুলনায় পুলিশের হামলায় আ’হত বিএনপিনেতা কাজী মো. আবুল হোসেনের মৃ’ত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নওগাঁ, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া ও পটিয়াসহ দেশব্যাপী পুলিশের গ্রে’প্তার অভিযান বন্ধ, গ্রে’প্তারকৃতদের মুক্তি এবং মিথ্যা মা’মলা প্রত্যাহারের দাবি করেন।

বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসে নির্বিচারে গু’লি করে মানুষ হত্যার প্রতিবাদে বিএনপি ২৯ মার্চ দেশব্যাপী মহানগর ও ৩০ মার্চ জেলা সদরে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দেয়। দলের এ কর্মসূচিতে স্থানীয় পুলিশ হা’মলা, গু’লি ও লাঠিচার্জ করে। খুলনা মহানগরীর উদ্যোগে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে পুলিশের বেপরোয়া লাঠিচার্জ ও হা’মলায় বিএনপিনেতা বাবুল কাজীসহ ৩০ জন আ’হত হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাবুল কাজী গত রাতে মারা যান। এই ঘটনায় নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের নেই।

মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, ৩০ মার্চ নওগাঁর বিক্ষোভে পুলিশের হা’মলায় ৩০ জন আ’হত হয়। তাদের মধ্যে গু’লিবিদ্ধ অবস্থায় যুবদলনেতা কোহিনুর ইসলামসহ ১৭ জনকে ওইদিন গ্রে’প্তার করা হয়েছে। এছাড়া গত শনিবার নওগাঁ জেলার রানীনগর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. মোশারফ হোসেন, নওগাঁ পৌর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম সাথী এবং বক্তারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আফজাল হোসেন সরদারকে গ্রে’প্তার করেছে পুলিশ।

মহাসচিব বিবৃতিতে জানান, গত ১৪ দিনে ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক চেয়ারম্যান এফ আই ফারুক, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য হেলাল আহমেদ, হালিম ফকির, মহানগর যুবদল সভাপতি মোজাম্মেল হক টুটু, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন জনি, ছাত্রদল নেতা মাহবুবুর রহমান রানা, মহানগর বিএনপি নেতা ওয়াসিম আকরামসহ ১৪ জন, কিশোরগঞ্জে গত তিন দিনে জেলা বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিষয়ক সম্পাদক মো. কাইয়ুম মিয়া, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু নাসের সুমনসহ ২০ জন, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোজাফ্ফর চৌধুরী, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. বাবরসহ ১০ জন, পটিয়ায় বিএনপি নেতা ইমতিয়াজ হাসানসহ ১০ জনকে গ্রে’প্তার করা হয়েছে।

মহাসচিব জানান, ভয়াবহ করোনার মধ্যেও পুলিশ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রে’প্তার করে হয়রানি করছে। পুলিশের হা’মলায় বিভিন্ন এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচির সঙ্গে বিএনপির কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে সরকার বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রে’প্তার ও হয়রানি করছে। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হয়ে সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের দমন করতে চাচ্ছে। এটা সরকারের ভ্রষ্টাচার নীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি মোহাম্মদ বাবুল কাজীর আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। এছাড়া দেশব্যাপী বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি ও মিথ্যা ষড়যন্ত্রমূলক মা’মলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। পাশাপাশি ময়মনসিংহসহ সারা দেশে দমন-নিপীড়ন, হয়রানি ও নেতাকর্মীদের গ্রে’প্তারের উদ্দেশ্যে চালানো পুলিশি অভিযান বন্ধের দাবি করছি।’

উল্লেখ্য, খুলনায় বিএনপির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে জেলা ও মহানগর বিএনপির অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী আ’হত হন। ২৯ মার্চ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নগরের কেডি ঘোষ রোডে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়ের সামনে ওই ঘটনা ঘটেছিল। এতে মারাত্মকভাবে আ’হত হয়েছিলেন জেলার ৩১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সহসভাপতি কাজী মো. বাবুল হোসেন।