ক’রো’নার মতো কঠিন রো’গ থেকে বাঁ’চতে বিশ্বনবির আমল-দোয়া

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন কোনা জাতির মধ্যে বেহা’য়াপনা ও অ’শ্লী’ল’তা ছড়িয়ে পড়বে তখন তাদের মধ্যে এমন এমন নতুন রো’গ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে; যা ইতিপূর্বে কখনো দেখা যায়নি।’ (ইবনে মাজাহ)

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হওয়া প্রাণঘাতী বৈশ্বিক মহা’মারি ক’রো’না’ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও আ’ক্র’মণ এখনো থামেনি। নতুন নতুন লক্ষণ ও ধরণ নিয়ে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোথাও একই লক্ষণ আবার কোনো কোনো অঞ্চলে ভিন্ন লক্ষণ নিয়ে এর প্রকোপ ছড়িয়ে পড়ছে।

ক’রো’নাভাইরাস (কোভিড-১৯) নতুন সৃষ্ট সং’ক্র’মণ রো’গ। এর আগে বহু সং’ক্র’মণ ভাইরাস সৃষ্টি হয়েছে। যেমনটি বলা হয়েছে হাদিসে। ক’রো’না ভাইরাসের আ’ক্রমণ প্রতিহত করতে সচেতনার বিকল্প নেই। এ জন্য মাস্ক ব্যবহার ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি।

ক’রো’না থেকে বাঁ’চতে দোয়াক’রো’নার মতো কঠিন সং’ক্রাম’ক নতুন নতুন রো’গ-ব্যাধি ও ম’হা’মা’রী দেখা দিলে তা থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করার কথা বলেছেন বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। নতুন নতুন কঠিন রো’গ-ব্যাধির বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুটি দোয়া করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে-
– اَللَّهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَ الْجُنُوْنِ وَ الْجُذَامِ وَمِنْ سَىِّءِ الْاَسْقَامِ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাচি ওয়াল জুনুনি ওয়াল ঝুজামি ওয়া মিন সায়্যিয়িল আসক্বাম।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনার কাছে আমি শ্বেত রো’গ থেকে আশ্রয় চাই। মাতাল হয়ে যাওয়া থেকে আশ্রয় চাই। কুষ্ঠু রো’গে আ’ক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আর দুরারো’গ্য ব্যাধি (যেগুলোর নাম জানিনা) থেকে আপনার আশ্রয় চাই।

– اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ وَ الْاَدْوَاءِ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিন মুনকারাতিল আখলাক্বি ওয়াল আ’মালি ওয়াল আহওয়ায়ি, ওয়াল আদওয়ায়ি।’
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি তোমার কাছে খারাপ (নষ্ট-বাজে) চরিত্র, অন্যায় কাজ ও কুপ্রবৃত্তির অনিষ্টতা এবং বাজে অসুস্থতা ও নতুন সৃষ্ট রো’গ বালাই থেকে আশ্রয় চাই।’ (তিরমিজি)সকাল-সন্ধ্যার বিশেষ দোয়া

এ ছাড়াও অনাকাঙিক্ষত ভাইরাস রো’গ ও ব্যধিসহ যে কোনো বিপদাপদ থেকে বেঁচে থাকতে সকাল-সন্ধ্যায় নিয়মিত আমল করা জরুরি। আর তাতেও কঠিন রো’গ থেকে মুক্ত থাকা সহজ হবে। হাদিসে এসেছে-

হজরত উসমান ইবনে আফ্‌ফান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘প্রতিদিন ভোরে ও প্রতি রাতের সন্ধ্যায় যে কোনো বান্দা এ দোয়াটি ৩ বার পাঠ করবে, কোনো কিছুই তার অনিষ্ট/ক্ষতি করতে পারবে না-
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়াদুররু মাআসমিহি শাইয়্যুন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস্সামায়ি ওয়া হুয়াস্‌সামিউল আলিম।’ (তিরমিজি)
অর্থ : ‘ওই আল্লাহ তাআলার নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো কিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’আমল

নতুন সৃষ্ট জটিল ও কঠিন রো’গ ক’রো’না ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকতে হাদিসের ওপর আমল খুবই জরুরি। যে যেখানে অবস্থান করছে, সে ব্যক্তির সেখানে থাকা এবং অন্যকে নিরাপদ রাখতে মাস্ক ও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি। হাদিসের নির্দেশনাও এমন-

হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যদি তোমরা ম’হা’মা’রির (নতুন নতুন রো;গ-ব্যাধির) কোনো সংবাদ শোন, তো সেখানে (আ’ক্রান্ত অঞ্চলে) তোমরা প্রবেশ কা থেকে বিরত থাক। যদি কোনো শহরে বা নগরে কেউ সে ম’হামা’রিতে আ’ক্রান্ত হয়, তো সেখান থেকে তোমরা বের হয়ে (অন্য কোনো অঞ্চলেও) যেয়ো না।’ (বুখারি ও মুসলিম)৪ তাসবিহ’র আমল

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে একদিন এক আরব বেদুইন এসে বললেন- হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে (যে কোনো) একটি ভালো আমল শিখিয়ে দিন-
তখন এ কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই বেদুইনের হাত ধরলেন। আর তাকে (সামনে বসিয়ে) এ শব্দগুলো শেখালেন এবং বললেন এ শব্দগুলো (৪ তাসবিহ) বেশি বেশি পড়বে-

> سُبْحَانَ الله : সুবহানাল্লাহ; আল্লাহ পবিত্র
> اَلْحَمْدُ للهِ : আলহামদুলিল্লাহ; সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য
> لَا اِلَهَ اِلَّا الله : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ; আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই
> اَللهُ اَكْبَر : আল্লাহু আকবার; আল্লাহ তাআলাই মহান (সবচেয়ে বড়)।

লোকটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত এ কথাগুলো শুনে কোনো কিছু না বলে ওঠে চলে গেলেন। (অর্থাৎ এ আমলটির ব্যাপারে তার আগ্রহ বাড়েনি)

তারপরের ঘটনা…
কিছুদূর যাওয়ার পর লোকটি কি যেন চিন্তা করে আবারও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ফিরে আসে। প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (তাঁকে দেখে) মুচকি হাসলেন।
লোকটি ফিরে এসে প্রিয়নবির সামনে বসে বললেন

(হে আল্লাহর রাসুল!) ‘সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, আল্লাহু আকবার’- আপনি যে এ তাসবিহগুলো আমাকে শেখালেন, এ বাক্যগুলো তো আল্লাহর জন্য। এতে আমার জন্য কী রয়েছে? এগুলো পড়লে আমি কী পাবো?

এবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন-
> তুমি যখন বলবে- ‘সুবহানাল্লাহ’; আল্লাহ তাআলা বলবেন- তুমি সত্য বলেছ।
> তুমি যখন বলবে- ‘আলহামদুলিল্লাহ’; আল্লাহ তাআলা বলবেন- তুমি সত্য বলেছ।
> তুমি যখন বলবে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’; আল্লাহ তাআলা বলবেন- তুমি সত্য বলেছ।
> তুমি যখন বলবে- ‘আল্লাহু আকবার। আল্লাহ তাআলা বলবেন- তুমি সত্য বলেছ।

অতঃপর জিকিরকারী ব্যক্তি আল্লাহর কাছে নিজের (কাঙিক্ষত) চাহিদাগুলো (ধারাবাহিকভাবে যা চাইবে) তুলে ধরবে (যেমন)-
> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ اغْفِرْلِىْ) আল্লাহুম্মাগফিরলি, হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করে দিন। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম।> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْزُقْنِىْ) ‘আল্লাহুম্মার জুক্বনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে রিজিক দান করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, তোমাকে ইতিমধ্যে রিজিক দান করেছি।’

> বান্দা বলবে- (اَللَّهُمَّ ارْحَمْنِىْ) আল্লাহুম্মার হামনি’ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে অনুগ্রহ করুন। তখন আল্লাহ বলবেন, ইতিমধ্যে তোমার প্রতি রহম করেছি।

কোনো বান্দা যদি এ ৪ তাসিবহ’র আমল করে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করে ম’হা’ম’রি ক’রো’নাভাইরাস থেকে মুক্ত থাকতে প্রার্থনা করে, তবে হাদিসের ঘোষণা অনুযায়ী মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে ম’হা’মা”রি ক’রো’না ভাইরাস থেকেও মুক্ত রাখবেন। (ইনশাআল্লাহ)

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, সব সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার পাশাপাশি উল্লেখিত হাদিসের আমল, তাসবিহ ও দোয়াগুলোর মাধ্যমে ম’হা’মা’রি ক’রো’না থেকে মুক্তি পেতে বেশি বেশি দোয়া করা।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ম’হা’মা’রি ক’রো’না থেকে মুক্ত থাকতে হাদিসের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী সচেতন হয়ে সবাইকে যথাযথ আমল ও দোয়ার করার তাওফিক দান করুন। আমিন।