রিজিকের মালিক শুধু আল্লাহ তাআলা। তিনি যাকে চান প্রভূত রিজিক দান করেন। আমাদের কাজ হল তার নির্দেশ অনুযায়ী পরিশ্রম করে হালাল উপার্জন করা। পবিত্র কুরআনের আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘সুতরাং তোমরা আল্লাহর কাছে রিজিক তালাশ কর, তার ইবাদত কর এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। তারই কাছে তোমাদের ফিরে যেতে হবে।’ (সুরা আনকাবুত : আয়াত ১৭)
যারা হালাল উপার্জনের চেষ্টা করে আর এ লক্ষ্যে কাজ করে তাদের রিজিকে আল্লাহ তাআলা বেশি বরকত দেন। যেভাবে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘তুমি বল, নিশ্চয়ই আমার রব যার জন্য চান রিজিক সম্প্রসারিত করে দেন এবং সংকুচিতও করে দেন কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ (সুরা সাবা : আয়াত ৩৬)
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন- হে আদম সন্তান! আমার ইবাদতের জন্য তুমি ঝামেলামুক্ত হও, আমি তোমার অন্তরকে প্রাচুর্য দিয়ে ভরে দেব এবং তোমার দারিদ্র ঘুচিয়ে দেব। আর যদি তা না কর, তবে তোমার হাত ব্যস্ততায় ভরে দেব এবং তোমার অভাব দূর করব না।’ (তিরমিজি)
যেহেতু রিজিকে বরকতের মালিক আল্লাহ, তাই আমাদের কাজ হল হালাল উপার্জনের জন্য চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা আর আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম : আয়াত ৭)
অভাবমুক্ত থাকতে করণীয়
অভাবমুক্ত থাকার জন্য আল্লাহ তাআলা আমাদের একটি দোয়া শিখিয়েছেন। অভাব মোচনে যে দোয়াটি আমরা বেশি বেশি পড়বে; তাহলো-
اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَآئِدَةً مِّنَ السَّمَاء تَكُونُ لَنَا عِيداً لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা আনযিল আলাইনা মায়িদাতাম মিনাস সামায়ি তাকুনু লানা ঈদাল্লি আওওয়ালিনা ওয়া আখিরিনা ওয়া আয়াতাম মিনকা ওয়ারযুকনা ওয়া আনতা খায়রুর রাযিকিন।’ (সুরা মায়েদা: আয়াত ১১৪)
অর্থ: ‘হে আমাদের প্রভু-প্রতিপালক আল্লাহ! তুমি আকাশ থেকে আমাদের জন্য খাবার ভরতি খাঞ্চা অবতীর্ণ কর যেন তা আমাদের প্রথম অংশের জন্য আর আমাদের শেষ অংশের জন্য আনন্দোৎসব হবে এবং তোমার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হয়। তুমি আমাদেরকে রিযিক দান কর। প্রকৃতপক্ষে তুমিই উত্তম রিযিকদাতা।’
হজরত মাকহুল রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলো সাতবার বলবে আল্লাহ তাআলা তার সত্তরটি অভাব দূর করবেন। (তন্মধ্যে) সবচেয়ে হাল্কা বিপদ হলো মানুষের অভাব। তাহলো-
لَا حَوْلَ وَ لَا قُوَّةَ اِلَّا بِاللهِ – لَا مَلْجَأ مِنَ اللهِ إِلَّا إِلَيْهِ
উচ্চারণ : ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহি – লা মালঝাআ মিনাল্লাহি ইল্লা ইলাইহি।’
অর্থ : আল্লাহর সাহায্য ছাড়া গুনাহ থেকে বিরত থাকা এবং নেক আমলে মশগুল হওয়া সম্ভব না। আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তার কাছেই আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভাব ও প্রাচুর্যের ব্যাপারে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইতেন।’ (আবু দাউদ)
হজরত আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি অভাবে পতিত হয়, অতঃপর তা সে মানুষের কাছে সোপর্দ করে (অভাব দূরিকরণে মানুষের ওপর নির্ভরশীল হয়), তার অভাব মোচন করা হয় না। পক্ষান্তরে যে অভাবে পতিত হয়ে এর প্রতিকারে আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল হয় তবে অনিতবিলম্বে আল্লাহ তাকে দ্রুত বা ধীর রিজিক দেবেন।’ (তিরমিজি ও মুসনাদে আহমাদ)
হজরত আনাস ইবনে মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি তিনি ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কামনা করে তার রিজিক প্রশস্ত করে দেয়া হোক এবং তার আয়ু দীর্ঘ করা হোক সে যেন তার আত্মীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখে।’ (বুখারি ও মুসলিম)
আমাদের রিজিক তখনই সম্প্রসারিত হবে যখন আল্লাহর হক যথাযথভাবে আদায় করব। আমরা যদি ইবাদতের সময় ইবাদত করি আর বাকী সময় রিজিকের সন্ধান করি তাহলে তিনি আমাদের রিজিকে বরকত দেবেন।
সুতরাং মানুষের উচিত আল্লাহর হক আদায়ের পাশাপাশি বান্দার হকও যথাযথ আদায় করা। যেভাবে আল্লাহ তাআলা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন-
‘অতঃপর নামাজ শেষ হলে তোমরা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (রিজিক) তালাশ কর ও আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।’ (সুরা জুমআ : আয়াত ১০)
তাই আমরা যদি আল্লাহর হক পুরোপুরি আদায় করতে পারি তবেই তিনি আমাদের রিজিকে বরকত দান করবেন এবং রিজিককে সম্প্রসারিত করবেন। আর আল্লাহ তাআলা কোথা থেকে রিজিক দান করবেন তা আমরা কল্পনাও করতে পারব না।
আল্লাহ তাআলার দরবারে আমাদের প্রার্থনা- হে দয়াময় প্রভূ! আপনি আমাদের রিজিকে প্রভূত বরকত দিন আর আমাদেরকে হালাল রিজিক উপার্জন ও খাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।