বিশেষ দিনগুলোতে ঘুরে ঘুরে ফুল বিক্রি করে তারা

রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সোয়া ১২টা। হাতিরঝিলের বিএফডিসি (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন) সিগন্যালের কাছে একটি ছোট বালতিতে গোলাপ ফুল নিয়ে বসে আছে পারভীন। তার বয়স ১৩ বছর। বড় বোন তাকে এখানে রেখে বাড়িতে ফুল আনতে গেছেন।

এর মাঝে পেরিয়ে গেছে দেড় ঘণ্টা। সিগন্যাল ছাড়লে সবাই যার যার গন্তব্যের দিকে রওনা দেয়। তাদের দিকে অপলক তাকিয়ে পারভীন ভাবে, কেউ এসে হয়তো তার ফুল কিনবেন।

আজ পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। এ দুই দিবসের অন্যতম অনুষঙ্গ ফুল। এ দিন শিশু ও কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের হাতে ফুল শোভা পায়। প্রিয়জন কিংবা কাছের মানুষের হাতে একগোছা ফুল তুলে

দিলেই যেন খুশি হয়ে যায় তারা। আর ফুল তো সবারই পছন্দ। তাই এ দিবসগুলো ঘিরে ফুল বিক্রি করে কিছু অর্থ উপার্জনের চেষ্টা করে রাজধানীর ছিন্নমূল মানুষেরা। অবশ্য তাদের কেউ কেউ সারা বছরই ফুল বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।

 

পারভীনের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। সে বলে, ‘ভাই, বছরের এ দিনগুলোতে আমরা ফুল বেচে চলি। শাহবাগ থেকে বড় আপা পাঁচ হাজার টাকার ফুল কিনছে। বেগুনবাড়ি যেখানে ভাড়া থাকি ওখানে সব ফুল রাখা আছে, আপা নিয়ে আসতে গেছে। আমি গোলাপ ফুল বিক্রি করছি। সব ফুল আসলে আপা ফুল দিয়ে মাথার রিং আর হাতের ব্যান্ড বানাবে। আমি বানাইতে পারি না।’

তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে পারভীন। বড় বোনের সঙ্গে রাজধানীর তেজগাঁও বেগুনবাড়ি এলাকায় থাকে। পারভীন আরও বলে, ‘গোলাপ ২০-৩০ টাকা করে বিক্রি করছি। এখন তো দুপুর, তাই হাতিরঝিলে লোকজন কম। বিকেল হলেই মানুষজন আসে, তখন সব ফুল বিক্রি হয়ে যাবে। আমি হেঁটে হেঁটেও বিক্রি করি। পাঁচশ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারলে ২০০ টাকা থাকে।’

 

মধুবাগ ব্রিজের কাছে গোলাপ, জারবেরা, ক্যালেন্ডুলা, গ্লাডিওলাস, মাম আর রজনীগন্ধা মিলিয়ে ফুলের তোড়া বানাচ্ছিল দুই কিশোর রাসেল ও আসলাম। তারা বলে, ‘কাল (শনিবার) সারারাত ফুল সংগ্রহ করে আনছি। এখান থেকে যে যার মতো পছন্দ করে ফুল কিনছে। আর এই ফুলের তোড়া ৫০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হবে। এর চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। আসলে যে যেভাবে চায়।’

তারা আরও বলে, ‘আমরা সারাবছর ফুলের দোকানে কাজ করি। তবে বিশেষ দিনে আমরা নিজেরাই ফুল নিয়ে এসে এভাবে বিক্রি করি। আমাদের কাছ থেকে অনেকেই অল্প টাকায় কিনে হাতিরঝিলে বিক্রি করছে। আমরা তাদের

কাছ থেকে বেশি লাভ করি না। একটা গোলাপ ৫ টাকায় কেনা থাকলে ওরা ১০ টাকায় বিক্রি করে। ওদের লাভ হয়, দু-একটা দিন ওরা ফুল বিক্রি করেই চলে। আর আমাদের ফুলও বিক্রি হয়ে যায়।’

কারওয়ান বাজারের জাহাঙ্গীর টাওয়ার সিগন্যালের কাছে সাত বছর বয়সী জান্নাতের সঙ্গে কথা হয়। সেই দুই হাতে ছয় জোড়া গোলাপ ফুল হাতে সিএনজি, রিকশা ও প্রাইভেট কারের কাছে ছুটে যাচ্ছে। সবাইকে ফুল কেনার অনুরোধ করছে। কেউ কেউ খুশি হয়ে তার ফুল কিনছেন।

কাছে যেতেই জান্নাত বলে, ‘ভাই, ফুল কিনবেন? আমি ফুল বিক্রি করে মাকে টাকা দিই। বিশ টাকা করে একটা গোলাপ, ভালো আর বড়।’