করোনায় থেমে নেই ফাগুনের আমেজ

আজ বসন্ত! ঋতুরাজ বসন্ত। তার মাঝে আছে ভালোবাসা দিবস। দুটিই একদিনে। কবি বলেছেন ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত। ফাল্গুনের হাওয়ায় দোলা লেগেছে প্রকৃতিতে। নতুনরূপে সেজেছে ঋতুরাজ। দখিনা হাওয়া, মৌমাছিদের গুঞ্জন, কচি-কিশলয় আর কোকিলের কুহুতানে জেগে ওঠার দিন আজ- ‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়’।

লাল আর বাসন্তী রঙে প্রকৃতির সঙ্গে নিজেদের সাজিয়ে আজ বসন্তের উচ্ছলতা ও উন্মাদনায় ভাসবে বাঙালি। বসন্ত অনেক ফুলের বাহারে সজ্জিত হলেও গাঁদা ফুলের রঙকেই এদিনে তাদের পোশাকে ধারণ করে তরুণ-তরুণীরা। খোঁপায় শোভা পাবে গাঁদা ফুলের মালা। বসন্তের আনন্দযজ্ঞ থেকে বাদ যাবে না বাংলার কোন অংশ। বসন্তকে তারা নিবিড়ভাবে বরণ করে। বসন্তের বন্দনা আছে কবিতা, গান, নৃত্য আর চিত্রকলায়। সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শনেও বসন্তের ঠাঁই একটু উপরেই থাকে।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে আধুনিককালের বাউল-কবির মনকেও বার বার দুলিয়েছে ঋতুরাজ বসন্ত। বাংলা পঞ্জিকা বর্ষের শেষ ঋতু বসন্তের প্রথম দিনকে বাঙালি পালন করে ‘পহেলা ফাল্গুন-বসন্ত উৎসব’ হিসেবে। বাঙালির নিজস্ব সার্বজনীন প্রাণের উৎসবে এ উৎসব এখন গোটা বাঙালির কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে।

তবে এবারের বসন্ত একটু ভিন্ন। আছে বাসন্তি গন্ধ, আছে বসন্তের আমেজ তবু যেন একটা নীরব ভাব ধরেছে শহর। করোনা বসন্তেও এক কালো থাবা বসিয়েছে। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় কুমিল্লার কোথাও দলবেঁধে শপিং করতে দেখা যায়নি শিক্ষার্থীদের। অনেকেই বাবা-মায়ের সাথে এসে কোন মতে সেরেছেন শপিং। ক্রেতা কম থাকায় শাড়ি-পাঞ্জাবীর দোকানেও তেমন একটা ভিড় নেই।

কুমিল্লার কাপড় পট্টির শাড়ি ব্যবসায়ী আবু রায়হান জানান, প্রতি বছরের ন্যায়ে আশানুরুপ ব্যবসা হয়নি এবার। স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় এই ফাল্গুন ক্রেতা শূণ্য প্রায়।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের দুই শিক্ষার্থী ফাহিমা আর তুহিন সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রিয় মানুষের সাথে ফুল কিনতে না পারায় চাপা কষ্ট নিয়ে অনেকে ঘরের কোণে বসে একটা মুক্ত বসন্তের কথা ভাবছেন।
ফুলের ক্রেতা না থাকায় দোকানিরাও তেমন ব্যস্ত নেই। খেয়ে বসে সময় কাটাচ্ছেন। কুমিল্লার নিউ মার্কেটের ফুলের দোকানী সোহাগ মিয়া জানান, অনেক ফুল এনেছি । কিন্তু ক্রেতা তো তেমন নেই তাই ফুল বিক্রিও তেমন হয়নি এবার । তবুও যা বিক্রি করেছি লোকসান হবেনা আশাকরি।

নগরের ধর্মসাগর এলাকা মৌসুমী ফুল ব্যবসায়ী তানিম, প্রতি বছরের মতো এবার বিভিন্ন রকম ফুল নিয়ে দোকান বসেছেন সিটি করপোরেশনের ধর্মসাগরের প্রথম গেটে। ব্যবসা কেমন জানতে চাইলে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, এবার আমাগো ব্যবসায় অনেক খারাপ। কয়েকজন শিশু ক্রেতা ছাড়া তেমনটা ক্রেতা চোখে পড়ছে না।

কুমিল্লার নাট্যকর্মী এস এম রুবেল জানান, আগের বসন্ত গুলো ভালো ছিল। এবারের বসন্তে গ্রাম থেকেই ফেরা হয়নি। আগের আনন্দ নেই এখন। সকল স্কুল কলেজ বন্ধ থাকায় তেমন কারো সাথে দেখাও হয়নি।