অনিচ্ছায় সুদের টাকা পেলে যা করা উচিত

শেষ হলো জুন মাস। অনেকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টেই পৌঁছে যাচ্ছে বাৎসরিক সুদ/মুনাফা। যারা সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানে, তারা যথাসম্ভব সুদি কার্যক্রম থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করে। কারণ পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের যা বকেয়া আছে তা ছেড়ে দাও—যদি তোমরা মুমিন হও। অতঃপর যদি তোমরা না করো, তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত ২৭৮-২৭৯)

জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (সা.) সুদখোর, সুদদাতা, সুদের লেখক ও তার সাক্ষীদ্বয়ের ওপর অভিসম্পাত করেছেন এবং বলেছেন এরা সবাই সমান। (মুসলিম, হাদিস : ৩৯৮৫)

সুদ সম্পর্কে কোরআন হাদিসের এমন নিষেধাজ্ঞার দরুন মুমিনরা সুদভিত্তিক ব্যাংক থেকে যতটুকু সম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করে। কিন্তু কখনো কখনো নিরুপায় হয়ে সুদভিত্তিক ব্যাংকের সহায়তা নিতে বাধ্য হয়। যেমন—সেলারি অ্যাকাউন্টের কথাই বলা যাক। সরকারি ও বেসরকারি বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সরাসরি হাতে হাতে দেওয়া হয় না। বরং ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়া হয়। সে জন্য কোনো ব্যাংকে প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নামে পৃথক পৃথক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। প্রতিষ্ঠান প্রতি মাসের নির্দিষ্ট তারিখে প্রত্যেকের অ্যাকাউন্টে তার বেতন-ভাতা জমা দিয়ে দেয়। এরপর কর্মচারীরা ব্যাংকে গেলেই সবাই নিজ নিজ বেতন ওঠাতে পারে। এই অ্যাকাউন্ট যেহেতু সেভিংস অ্যাকাউন্ট হয়, ফলে ইচ্ছা না থাকলেও তাদের অ্যাকাউন্টে সুদের অর্থ চলে আসে।

উল্লেখ্য, এখানে চাকরিজীবীর কিছুই করার থাকে না। কোনো চাকরিজীবী এতে আপত্তি করলেও তার জন্য প্রতিষ্ঠান আলাদাভাবে ইসলামী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট করতে দেবে না। তারা সবার জন্য কোনো সুদি ব্যাংকে গ্রুপ অ্যাকাউন্ট করে রাখে। এখানে যেহেতু চাকরিজীবী বাধ্য। অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে তার কোনো এখতিয়ার নেই। তাই ওই সেভিং অ্যাকাউন্ট তথা সেলারি অ্যাকাউন্ট খোলার গুনাহ চাকরিজীবীর ওপর আরোপ হবে না। এর সব দায় ও গুনাহ প্রতিষ্ঠানের হবে।

ধর্মপরায়ণ অনেক মুসলমানই বিষয়টা নিয়ে বেশ চিন্তায় থাকেন। এ পরিস্থিতিতে তাঁদের করণীয় কী, তা অনেকেই জানেন না।

এখানে কর্মচারীদের করণীয় হলো, প্রতি মাসে সেলারি অ্যাকাউন্টে বেতনের অর্থ আসা মাত্র তা তুলে শরিয়া মোতাবেক পরিচালিত কোনো ব্যাংকে রেখে দেবে। যদি নিজের কাজে ক্যাশ রাখার কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা থাকে সেটা আরো ভালো। কিন্তু এর পরও যদি বছর শেষে তার অ্যাকাউন্টে কোনো সুদ চলে আসে, তবে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই সেই টাকা সুদদাতাকে ফেরত দিতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০/১২৪)

কিন্তু ব্যাংকের ক্ষেত্রে যেহেতু নির্দিষ্ট সুদদাতা বের করা অসম্ভব, তাই সওয়াবের নিয়ত না করে কোনো জাকাত খাওয়ার উপযুক্ত মিসকিনকে তা দান করে দিতে হবে। (আহসানুল ফাতাওয়া : ৭/১৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০/১২৬)

কোনো অবস্থাতেই সেই টাকা মসজিদ, মাদরাসা বা কোনো জনকল্যাণমূলক কাজ (যেমন রাস্তাঘাট নির্মাণ, পাবলিক টয়লেট নির্মাণ) ইত্যাদিতে খরচ করা যাবে না। (ইমদাদুল মুফতিন, পৃ. ৫৮৬, ফাতাওয়ায়ে ফকীহুল মিল্লাত : ১০/১৩১)

মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হালাল পথে চলার তাওফিক দান করুন।