দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিদিনই বাড়ছে। সেই সঙ্গে পাল্টা দিয়ে বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। মৃত্যু হারও থেমে নেই। যেই চীন থেকে শুরু হয়েছিল করোনা মহামারি আক্রান্তে সেই চীনকেও ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
এই পরিস্থিতিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ফের সাধারণ ছুটি ঘোষণার না করলেও জোন ভিত্তিক লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। করোনা প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শ মেনে সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার থেকে শুরু হবে এই কার্যক্রম।
এর আগে করোনার সংক্রমণ বিবেচনায় লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের জোন ভাগ করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর মধ্যে লাল রং চিহ্নিত এলাকায় সংক্রমণের হার বিবেচনায় কিছু এলাকাকে লকডাউন করে রাখা হবে। পরীক্ষামূলকভাবে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকাকে এরই মধ্যে লকডাউন করা হয়েছে।
এদিকে ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করেছে সরকার। এছাড়া ঢাকার বাইরে কয়েকটি জেলাকেও এই আওতায় আনা হয়েছে।
জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘নির্দিষ্ট এলাকাকে জোনে ভাগ করে লকডাউনের সিদ্ধান্তকে আমরা কার্যকর বলে মনে করছি। কারণ এই মুহূর্তে সারাদেশে চাইলেই আবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা যাচ্ছে না। কারণ মানুষের জীবিকা সচল রাখতে সরকার স্বাস্থ্যবিধি মানা এবং সরকারি নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার শর্তে সাধারণ ছুটি তুলে নিয়ে অফিস-আদালত সীমিত পরিসরে খোলার অনুমতি দিয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একইসঙ্গে চার-পাঁচটি এলাকা রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন বাস্তবায়ন করা হতে পারে। একটি এলাকাকে শুধু লকডাউন করলেই হবে না। সেখানে বসবাসকারী মানুষের জন্য আমাদের কিছু দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে, এগুলো নিশ্চিত করতে হবে।’
এর আগে গত ১০ জুন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক আদেশে বলা হয়, জেলা পর্যায়ে লকডাউন ঘোষণার ক্ষমতা সিভিল সার্জনের কাছে থাকবে। তিনি এলাকার পরিস্থিতি বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী জানান, সিভিল সার্জনের পরামর্শ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার লকডাউন কার্যকর করবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওই নির্দেশনায় বলা হয়, লকডাউন এলাকার বাসিন্দাদের চলাফেলাও নিয়ন্ত্রিত হবে। কেবলমাত্র জরুরি সেবায় যারা নিয়োজিত আছেন তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে লকডাউন এলাকায় প্রবেশ এবং বাহির হতে পারবেন। এছাড়া যেসব সরকারি চাকরিজীবী আছেন তাদের ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবেন।
এ বিষয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে যে অবস্থায় চলছে সবকিছু সেভাবেই চলবে। নতুন করে কোনও ছুটি ঘোষণা করা হবে না। তবে যে এলাকা রেড জোনের আওতায় থাকবে, সেখানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হবে। ’
তিনি জানান, ১৫ তারিখের (জুন) পরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে আগের মতো নির্দেশনাসহ অফিস এবং গণপরিবহন খোলা থাকবে, সেজন্য একটি অর্ডার জারি করা হবে।
কেন্দ্রীয় টেকনিক্যাল কমিটি সুপারিশ অনুযায়ী, যেসব এলাকায় প্রতি লাখে ১০ জন বা তার বেশি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগী থাকবে সেখানেই রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউন করা হবে। এ অনুযায়ী ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণ সিটির মোট ৪৫টি এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটির ১৭ এবং দক্ষিণ সিটির ২৮টি এলাকা আছে। আর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার ১১টি এলাকা রেড জোনের মধ্যে পড়েছে। ঢাকার বাইরে নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার একাধিক উপজেলাকে রেড জোন চিহ্নিত করা হয়েছে।
ঢাকা উত্তর সিটিতে যেসব এলাকা রেড জোনের আওতায়:
বসুন্ধরা, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, মহাখালী, তেজগাঁও, রামপুরা, আফতাবনগর, মোহাম্মদপুর, কল্যাণপুর, গুলশান, মগবাজার, এয়ারপোর্ট, বনশ্রী, রায়েরবাজার, রাজাবাজার, উত্তরা ও মিরপুর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে যেসব এলাকা রেড জোনের আওতায়:
যাত্রাবাড়ি, ডেমরা, গেন্ডারিয়া, ধানমন্ডি, জিগাতলা, লালবাগ, আজিমপুর, বাসাবো, শান্তিনগর, পল্টন, কলাবাগান, রমনা, সূত্রাপুর, মালিবাগ, কোতয়ালি, শাজাহানপুর, মতিঝিল, ওয়ারি, খিলগাঁও, পরিবাগ, শাহবাগ, ইস্কাটন, কদমতলী, সিদ্ধেশরী, লক্ষীবাজার, এলিফ্যান্ট রোড, সেগুনবাগিচা।
চট্টগ্রাম সিটিতে যেসব এলাকা রেড জোনের আওতায়:
চট্টগ্রাম বন্দরে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড, পতেঙ্গার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড, পাহাড়তলির ১০ নম্বর ওয়ার্ড, কোতোয়ালির ১৬, ২০, ২১ ও ২২ নম্বর ওয়ার্ড, খুলশীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড, হালিশহর এলাকার ২৬ নম্বর ওয়ার্ড।
ঢাকার বাইরে আরও তিন জেলা রেড জোনের আওতায়:
গাজীপুরের সব কটি উপজেলাকে রেড জোনের আওতার মধ্যে আনা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, সদর এবং পুরো সিটি এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আর নরসিংদীর সদর মডেল থানা, মাধবদী ও পলাশ উপজেলা।