গত ২৪ ঘণ্টায় মাত্র ১ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এর আগে গত ৪৮ ঘণ্টায় দেশের কোনও করোনা রোগী শনাক্ত হয়নি। ফলে দেশের এই স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতিতেও ৭ জেলায় জ্বর-সর্দি, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথাসহ করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে আরও ৭ জন মারা গেছেন। এসব মৃত ব্যক্তিদের নমুনা সংগ্রহ করেছে আইইডিসিআর
শ্রীমঙ্গলে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথা নিয়ে যুবকের মৃত্যু
সোমবার (৩০ মার্চ) মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার একটি চা–বাগানে জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথা নিয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। দুলাল বাউড়ি নামের মৃত ওই ব্যক্তির বয়স ৩৫ বছর। তিনি কীর্তন করার জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াতেন। এলাকাবাসীর ভাষ্য, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যেতে পারেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, ওই যুবক জলবসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
ওই চা–বাগানের নিজস্ব হাসপাতালের মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট আমিরুল বলেন, ‘দুলাল বাউড়ি গত শুক্রবার জ্বর নিয়ে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়ে যান। আজ সকালে তাঁর বাসা থেকে খবর এলে আমি তাঁর বাড়িতে যাই। তখন তাঁর ভীষণ জ্বর, শ্বাসকষ্ট ও গলাব্যথা ছিল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। পরে বেলা একটার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।’
মুন্সীগঞ্জে ১২ বছরের এক শিশুর মৃত্যু
সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় সোহরাব হোসেন নামে ১২ বছরের এক শিশু মারা গেছে। সোমবার (৩০ মার্চ) ভোরে উপজেলার বাউশিয়া ইউনিয়নের মনাইরকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে প্রতিবেশীদের মধ্যে করোনাভাইরাস আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। নিহত শিশু সোহরাব ওই গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে।
গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. তাসলিমা আক্তার জানান, রবিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে সর্দি-কাশি ও জ্বর নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয় শিশু সোহরাব। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সোমবার সকালে কর্তব্যরত চিকিৎসক শিশুটিকে ঢাকায় পাঠান। ঢাকায় আসার পথে অ্যাম্বুলেন্সে সে মারা যায়।
যশোরে আইসোলেশন ওয়ার্ডে এক শিশুর মৃত্যু
সোমবার (৩০ মার্চ) সকালে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের জন্য নির্মিত আইসোলেশন ওয়ার্ডের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে চিকিৎসাধীন এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
১২ বছর বয়সী কন্যাশিশুটিকে তার অভিভাবকরা রবিবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরিফ আহমেদ জানান, ভর্তির সময় তার শারীরিক অবস্থার উপসর্গ দেখে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। আজ সোমবার সকালে আইইডিসিআরের স্থানীয় প্রতিনিধিদের তার নমুনা সংগ্রহ করার কথা ছিল।
কাশি ও শ্বাসকষ্টে সুনামগঞ্জে ৫৫ বছর বয়সী নারীর মৃত্যু
সুনামগঞ্জ শহরের পূর্ব নতুনপাড়ায় ৫৫ বছর বয়সী এক নারীর কাশি ও শ্বাসকষ্টে মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৩০ মার্চ) ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত নারীর স্বামীকে করোনা পরীক্ষার জন্য সিলেটে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারেন্টাইনের মাধ্যমে নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগ ও রোগীর স্বজনরা জানান, ওই নারী উচ্চ রক্তচাপ ও শ্বাসকষ্টের রোগী ছিলেন। কয়েকদিন ধরে তিনি সর্দি-কাশিতেও ভুগছিলেন। সোমবার ভোরে পরিবারের লোকজন তাকে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। ওখানে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শেরপুরে তিনদিন জ্বর-শ্বাসকষ্টে একজনের মৃত্যু, বাড়ি ‘লকডাউন’ ঘোষণা
শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ পলাশীকুড়া গ্রামে জ্বর এবং শ্বাসকষ্টে তিন দিন ভোগার পর মারা গেছেন এক ব্যক্তি। রবিবার (২৯ মার্চ) দিবাগত রাতে তার মৃত্যু হয়। তিনি করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ওই বাড়িসহ আশেপাশের ১০ বাড়ি ‘লকডাউন’ ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
এছাড়া ওই ব্যক্তির করোনা পরীক্ষার জন্য আইইডিসিআরে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আজ সোমবার নমুনা সংগ্রহের পর ওই ব্যক্তির দাফন ও জানাজা হয় বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ কে এম আনওয়ারুর রউফ।
কুষ্টিয়ায় সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে এক ব্যক্তির মৃত্যু
সোমবার (৩৯ মার্চ) সকাল জেলায় সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম সকাল সাড়ে ৯টায় গণমাধ্যমকে বলেন, ওই ব্যক্তি তিন দিন ধরে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত ছিলেন। হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই তার মৃত্যু হয়। ধারণা করা হচ্ছে, তিনি করানো ভাইরাস আক্রান্ত হতে পারেন। এ জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) নিয়ম মেনে লাশ দাফন করা হয়।
জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন, ওই ব্যক্তির গ্রামের বাড়িতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জুবায়ের হোসেন চৌধুরীকে পুলিশসহ পাঠানো হয়েছে। নমুনার প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত বাড়িটি লকডাউন করা থাকবে।
বিরামপুরে জ্বর-সর্দিতে এক ব্যক্তির মৃত্যু
দিনাজপুরের বিরামপুরে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে মো. ফরহাদ হোসেন (৪০) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার ভোরে উপজেলার জোতবানী ইউনিয়নের তপসী গ্রামে তিনি মারা যান।
মৃত ফরহাদ হোসেন তপসী গ্রামের মৃত হানিফ উদ্দিনের ছেলে। মারা যাওয়ার পরপরই বাড়ির চার সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে উপজেলা স্বাস্থ্য কার্যালয়। ওই পাড়ায় যাতে কোনো লোক ঢুকতে বা বের হতে না পারে সে জন্য গ্রাম পুলিশের পাহারা বসানো হয়েছে।
জোতবানী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক জানান, ফরহাদ হোসেন কুমিল্লায় কৃষি শ্রমিকের কাজ করতেন। তিনি কুমিল্লায় যে বাড়িতে কাজ করতেন সেই বাড়ির মালিক সৌদি প্রবাসী। সম্প্রতি বাড়ির মালিক সৌদি থেকে দেশে আসেন। এরপর কুমিল্লার প্রশাসন সৌদি প্রবাসীর ওই বাড়ির সকলকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ দেন। এ সময় গত ১০/১২ দিন আগে ফরহাদ হোসেন জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হয়ে কুমিল্লা থেকে পালিয়ে নিজ বাড়িতে আসেন।
সুৃত্র: ব্রেকিংনিউজ