ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে প্রা’ণঘাতি ক’রোনাভা’ইরাসে। বাংলাদেশও বাদ পড়েনি সেই তালিকা থেকে। ক’রোনাভা’ইরাসে সং’ক্র’মণ প্রতিরোধ করতে জুমার নামাজের আগে বাংলা বয়ান বাদ দেয়ার জন্য আহ্বান করেছেন আলেমগন। বর্তমান পরিস্থিতিতে জুমার নামাজকে শুধু ফরজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার কথা বলেছেন তারা।
বুধবার (২৫ মার্চ) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়, প্রা’ণঘা’তী ক’রোনা ভাই’রাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সারা দেশের মসজিদগুলো আপাতত বন্ধ হচ্ছে না। মসজিদগুলো খোলাই থাকবে। জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও জুমার নামাজও চলবে।
তবে ক’রোনা সং’ক্র’মণ থেকে নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত না করে কেউ যেন মসজিদে না যান, সে ব্যাপারে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মসজিদে নামাজের জামাতে মুসল্লি সীমিত রাখতে বলেছে স’রকারি এই প্রতিষ্ঠানটি। ক’রোনা সং’ক্র’মণ থেকে বাঁচতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জনসমাগম বা গণজমায়েত এড়িয়ে চলার বি’ষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নিয়মিত সর্বোচ্চ গণজমায়েত হয় প্রতি সপ্তাহে জুমার নামাজে। মানুষের উপচে পড়া ভিড় হয় মসজিদে মসজিদে।
শোলাকিয়া ঈদগাহের ইমাম মাওলানা ফরীদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে জুমার নামাজকে শুধু ফরজের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা জরুরি। জুমার দুই রাকাত নামাজ এবং খুতবার চেয়ে বেশি কিছু করার প্রয়োজন এ মুহূর্তে নেই।
বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারত এবং মধ্যপ্রাচ্যের সব আলেম জুমা সীমিত করার পক্ষে মত দিচ্ছেন। যতটুকু না হলে জুমা আদায় হয় না, ততটুকু পালন করে বাকি অন্যান্য সুন্নত ও নফল ইবাদত ঘরে আদায় করবে। বাংলায় যে বয়ানটি করা হয়, সেটা কোনো জরুরি বি’ষয় নয়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর প্রয়োজনীয়তাও নেই।
ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক শাইখুল হাদিস ড. মুশতাক আহমদ বলেন, মানুষের নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে যেমন বাজার খোলা রাখতে হয়, তেমনিভাবে মানুষের আধ্যাত্মিক চাহিদা মেটাতে মসজিদও খোলা রাখতে হবে। মসজিদে আজান নামাজ সবকিছু চলবে। মসজিদ রো’গ বহন করে না। রো’গ বহন করে মানুষ। সুতরাং আমরা মসজিদে নি’ষেধাজ্ঞা আরোপ না করে মানুষকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করব।
কিন্তু আমরা যারা আ’ক্রান্ত হওয়ার আশংকা বোধ করছি,অথবা আ’ক্রান্ত হয়ে গেছি, তারা কোনোক্রমেই মসজিদে আসব না। এমনকি যেখানে আ’ক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, এমন স্থানে গমনাগমনও পরিহার করতে হবে।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহিব্বুল্লাহিল বাকি নদবী বলেন, জুমার দিনে শুধু জুমার দু’রাকাত নামাজ ছাড়া অন্যান্য সুন্নত নামাজ নফল ইবাদত ঘর থেকে আদায় করে আসাটাই হচ্ছে সাহাবীদের রীতি। তারা সবাই জুমার নামাজ ছাড়া অন্যান্য আমল ঘর থেকে আদায় করে আসতেন। জুমার দিনে আমাদের দেশে যে বাংলা ওয়াজ হয়, সেটা নফল। বর্তমান যে প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে তাতে বাংলা ওয়াজ পরিহার করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
লালবাগ মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ও ইসলামী ঐক্যজোটের মহাস’চিব মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, জুমার দিন মুসল্লিরা বাড়ি থেকে অজু করে আসবেন। জুমার পূর্বের ও পরের সুন্নত নামাজ, নফল ইবাদাত, কুরআন তেলাওয়াতসহ এই জাতীয় সব কাজ মুসল্লীরা বাড়িতে আদায় করবেন। আমাদের দেশে জুমার দিনে যে বাংলা বক্তব্য প্রদান করা হয় এটা শরীয়তের কোনো বি’ষয় নয়। সুতরাং এটা পরিহার করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি।
গতকাল ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৪টি নির্দেশনা দেয়া হয়। এগুলো হল-
১. ক’রোনাভা’ইরাসে সং’ক্র’মণ রোধে এবং মানুষের ব্যাপক মৃ’ত্যুঝুঁ’কি থেকে সুরক্ষার জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সব ধরনের জনসমাগম বন্ধের পাশাপাশি মসজিদগুলো জুমা ও জামাতে মুসল্লিদের উপস্থিতি সীমিত রাখতে হবে।
২. মসজিদ বন্ধ থাকবে না, তবে ক’রোনা সং’ক্র’মণ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত না করে কেউ মসজিদে আসবেন না।
৩. স’রকার ও বিশেষজ্ঞদের সর্তকতার জন্য যে সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে- তা মেনে চলার জন্য জনগণকে অনুরোধ করা হল।
৪. সবাই অ’পরাধমূলক কাজ-কর্ম থেকে বিরত হয়ে ব্যক্তিগতভাবে তওবা, ইস্তিগফার ও কুরআন তেলাওয়াত অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়।