‘বয়স তো আর কম হলো না। সামনের মাসে ৭০ বছরে পা দেব। কত হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘট ও কারফিউ দেখেছি। কিন্তু স্বাধীনতা দিবসে এমন ঢাকা শহর আর দেখিনি। রাস্তায় মানুষ নেই, গাড়িও চলছে না। ছোটবড় শপিংমল, মার্কেট, হোটেল রেস্টুরেন্ট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালতও বন্ধ। এ মুহূর্তে ঢাকা শহর ঘুরে হাতের কড়া গুণে বলে দেয়া যাবে রাস্তায় কত লোক আছে।’
রমনা পার্কে নিয়মিত প্রাতঃভ্রমণকারী অবসরপ্রাপ্ত একজন সরকারি কর্মকর্তা বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ৭টায় শাহবাগ মোড়ের সামনে দাঁড়িয়ে করোনাভাইরাসের আতঙ্কে প্রায় জনশূন্য রাজধানী ঢাকা সম্পর্কে ঠিক এভাবেই তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছিলেন।
তিনি এও বলছিলেন, ‘স্বাধীনতা দিবসের আনন্দ কেড়ে নিয়েছে অদৃশ্য ভাইরাস করোনা। প্রতিবছর মহান স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ ২৬ মার্চের সকালে শাহবাগে লোকে লোকারণ্য থাকে। আজ মানুষ নেই বললেই চলে।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার আজ থেকে আগামী ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি ছুটির ঘোষণা দিয়েছে। গণপরিবহনসহ সব ধরনের পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া রাজধানীসহ দেশের মানুষকে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছে।
আজ সকালে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক সরেজমিন রাজধানীর ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, রমনা, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর ও হাজারীবাগ থানা এলাকার রাস্তাঘাট প্রায় জনমানবহীন দেখতে পান।
গণপরিবহন সম্পূর্ণ বন্ধ। অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি কাজে নিয়োজিত কিছু গাড়ি ছাড়া রাস্তাঘাটে অন্য কোনো যানবাহনও চোখে পড়েনি। বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকে মাস্ক মুখে লাগিয়ে অলস সময় কাটাতে দেখা যায়। রাস্তাঘাটে তরিতরকারি ও শাকসবজি বিক্রেতাদের কারওয়ানবাজারসহ বিভিন্ন পাইকারি বাজার থেকে পণ্য কিনে রিকশা কিংবা ভ্যানে করে আসতে দেখা যায়।
অন্যান্য বছর মহান স্বাধীনতা দিবসের কাকডাকা ভোর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, সোহরোওয়ার্দী ও রমনা পার্কে নারী, পুরুষ ও শিশুর ঢল নামে। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উচ্চস্বরে দেশাত্মবোধক গান বাজে। আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন সবাই। কিন্তু আজ মাইকের কোনো শব্দ নেই। নেই মানুষের পদচারণা। মারাত্মক ছোঁয়াচে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে নিজেরাই সচেতন হয়ে নিজ নিজ বাড়িতে অবস্থান করছেন। সরকারিভাবেও প্রয়োজন ছাড়া ঘরেই অবস্থান করতে বলা হয়েছে।
দেশে গতকাল (২৫ মার্চ) পর্যন্ত ৩৯ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখলে এ রোগটি ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সে কারণেই স্বাধীনতা দিবসের প্রায় সব অনুষ্ঠান বাতিল করে সরকার।