দেশে প্রথমবারের মতো অ্যামেচার রেডিও নিয়ে প্রদর্শন অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল ১৩ মার্চ গাজীপুর জেলার রাজেন্দ্রপুর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ফাউগান ইকো রিসোর্টে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। প্রদর্শনীর আয়োজন করে দেশের অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের নিয়ে ফেসবুক ভিত্তিক সংগঠন বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও ক্লাব (বিএআরসি)। অনুষ্ঠানের সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম।
এদিন দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলিকম বিষয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা অ্যামেচার রেডিওর প্রদর্শনী উপভোগ করেন।
অ্যামেচার রেডিও বা হ্যাম রেডিও পরিচালনা করা মূলত একটি শখ। শখের বিষয় হলেও এতে জ্ঞান অর্জনের সুযোগ মেলে।
এটি একটি বিজ্ঞানমনস্ক শখ বিধায় ইলেকট্রোনিক্সসহ বেতার তরঙ্গ নিয়ে প্রচুর অধ্যায়নের সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও, দুর্যোগের সময় টেলিযোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম এটি। অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের বলা হয় রাষ্ট্রের অষোঘিত দূত। কেননা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় যখন সব ধরনের টেলিযোগ ব্যবস্থা বিকল হয়ে যায় তখন অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা তাদের বেতার যন্ত্রের সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সার্বিক তথ্য দেশ-বিদেশের সরকারি-বেসরকারি সংস্থা এবং হ্যামদের কাছে তুলে ধরেন। অংশ নেন উদ্ধার কাজেও।
বিএআরসির অ্যামেচার রেডিও প্রদর্শনীতে বিভিন্ন ধরনের অ্যামেচার রেডিও যেমন ওয়াকিটকি, বেজ রেডিও, অ্যান্টেনা, এসডব্লিউআর মিটারসহ বেতার যন্ত্রাংশ এবং টুলস প্রদর্শন করা হয়। বিতরণ করা হয় অ্যামেচার রেডিও সম্পর্কিত লিফলেট
এছাড়াও এই প্রদর্শনীতে আগত দর্শনার্থীদের অ্যামেচার রেডিও সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। যাতে করে আগামীতে তারা অ্যামেচার রেডিও সম্পর্কে জানতে পারে।
অ্যামেচার রেডিও সাধারণত নির্দিষ্ট বেতার তরঙ্গে অবাণিজ্যিকভাবে তথ্য আদান প্রদান, গবেষণা, ব্যক্তিগত প্রশিক্ষণ এবং জরুরি অবস্থায় ব্যবহৃত একটি টেলিযোগাযোগ সার্ভিস।
‘অ্যামেচার’ শব্দটি সাধারণত আর্থিক সংশ্লিষ্টতাবিহীন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগতভাবে প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে আগ্রহী ব্যবহারকারীকে বাণিজ্যিক ব্রডকাস্টিং, জননিরাপত্তা প্রদানকারী সংস্থা অথবা পেশাদার টু-ওয়ে সার্ভিস হতে পৃথক করার জন্য ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশে অ্যামেচার রেডিও পরিচালনার জন্য লাইসেন্স দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। এজন্য প্রতিষ্ঠানটি একটি পরীক্ষার আয়োজন করে। উত্তীর্ণদের কল সাইন দেয়া হয়।
প্রাকৃতিক দূর্যোগ কিংবা জরুরি অবস্থায় অ্যামেচার রেডিও সার্ভিস টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে ভূমিকা রাখে। অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের হ্যাম বলা হয়।
দেশ ও বিদেশের অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের সুবিশাল হ্যাম নেটওয়ার্ক রয়েছে। ফলে যেকোনো দুর্যোগের সময় এসব অপারেটররা একে অন্যকে সহযোগিতা করেন। বিদেশে হ্যামগণ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে সাহায্য করে থাকেন। নোয়া ওয়েদার স্টেশন থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদী দেশব্যাপী প্রচার করেন।
বাংলাদেশ অ্যামেচার রেডিও ক্লাবের সংগঠক চৌধুরী আকবর হোসেন বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই অ্যামেচার রেডিও নিয়ে ধারণা নেই। তাদের এই বিষয়ে ধারণা দেয়ার জন্যই এই প্রদর্শনীর আয়োজন। এতে গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নিয়ে তাদের জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি এই বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করতে সুবিধা হবে। অ্যামেচার রেডিও পরিচালনা যেহেতু একটি স্বেচ্ছাসেবী কাজ তাই এই কাজের অংশীদার হোক গণমাধ্যম কর্মীরাও।
ক্লাবটির আরেক সংগঠক মাহবুবুবর রহমান বলেন, পৃথিবীতে ৩০ লাখেরও বেশি অ্যামেচার রেডিও অপারেটর আছেন। আমাদের দেশে সংখ্যাটা হাতেগোনা। আমরা চাই দেশে অ্যামেচার রেডিও অপারেটর বাড়ুক। এই বিষয়ে সচেতনা বাড়ানো এবং আগ্রহী তৈরির জন্যই এই প্রদর্শনীর আয়োজন। এবং এই ধরনের অনুষ্ঠান বাংলাদেশে এবার প্রথম আয়োজন করা হলো।
প্রদর্শনী উপভোগ করেন বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরামের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ সংগঠনটির নেতা, সদস্যরা এবং তাদের সঙ্গে আগত অতিথিরা।