কোনো শিশু-নারী যেন নির্যাতিত না হয়: প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেবল আমাদের দেশে নয়, আমরা উন্নয়নশীল দেশগুলোয়ও দেখেছি, শিশু ও নারীদের ওপর নির্যাতন মানসিক রোগের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই নারী-পুরুষ প্রত্যেককেই সচেতন থাকতে হবে, যাতে কোনো শিশু ও নারী নির্যাতিত না হয়। বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে যাতে শিশু ও নারীরা সুরক্ষিত থাকে।

সোমবার সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বেগম রোকেয়া দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নারী ও সামাজিক উন্নয়নে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পাঁচ নারীকে রোকেয়া পদক-২০১৯ প্রদান করেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন- বেগম সেলিনা খালেক, অধ্যক্ষ শামসুন নাহার, ড. নূরুন নাহার ফয়জুন্নেছা (মরণোত্তর), মিস পাপড়ি বসু এবং বেগম আখতার জাহান।

শেখ হাসিনা বলেন, মূলত পুরুষই নারীদের ওপর নির্যাতন চালায়। তাই তাদের চিন্তা করা উচিত, তাদেরও মেয়েশিশু রয়েছে এবং তাদের সন্তান যদি অন্য কারও দ্বারা নির্যাতিত হয়, তাহলে তারা কী করবে। সে কারণেই এ ব্যাপারে সচেতনতা খুবই জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের নির্যাতন বন্ধে আইন প্রণয়নই যথেষ্ট নয়, এজন্য সচেতনতা আবশ্যক। তিনি বলেন, শিশু ও নারী সমাজের কল্যাণে পারিবারিক সহিংসতা প্রতিরোধ আইন, যৌতুক প্রতিরোধ আইন, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন এবং নারী উন্নয়ন নীতিমালা ও জাতীয় শিশু উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। আইন প্রণয়নের ফলে সাধারণ মানুষ ও মেয়েদের মাঝে সচেতনতা গড়ে উঠছে।

শেখ হাসিনা জানান, তার সরকার নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করছে। বেগম রোকেয়া চেয়েছিলেন একজন নারী যে কোনো রাষ্ট্রের প্রধান হবেন, তিনি পুরুষ পরিবার ও সমাজের সঙ্গে তালমিলিয়ে এগিয়ে যাবেন এবং সমান অধিকার ভোগ করবেন।

তিনি বলেন, আমরা অন্তত এটা বাস্তবায়ন করেছি এবং আমাদের নারীসমাজ এখন বিজয়ীনীর বেশে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এগিয়ে চলছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আজ নারী উন্নয়নে বেগম রোকেয়ার সারথি হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। এই অগ্রগতি আমাদের ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, জনসংখ্যার অর্ধেককে বাদ দিয়ে দেশের কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে। আমরা সবার সম্মিলিত প্রয়াসে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

নারী পুনর্জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের ১৩৯তম জন্ম এবং ৮৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এদিন সারা দেশে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত হয়। মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বেগম ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা।

মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুন নাহার স্বাগত বক্তৃতা এবং রোকেয়া পদক বিতরণ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। রোকেয়া পদক গ্রহণকারীদের পক্ষে বেগম সেলিনা খালেক পদক গ্রহণের অনুভূতি প্রকাশ করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন গণপূর্ত অধিদফতরের মাধ্যমে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনের আধুনিকায়নের কাজ উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম উপস্থিত ছিলেন।

নয়াদিল্লিতে ৪৩ জনের প্রাণহানিতে প্রধানমন্ত্রীর শোক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার এক শোকবার্তায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৪৩ জনের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।

শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী এই দুর্ঘটনাকে মর্মান্তিক হিসেবে অভিহত করে নিহতদের পরিবারের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা জানান। তিনি বিপর্যয়কবলিত পরিবারগুলোকে ধৈর্যের সঙ্গে এই দৈবদুর্বিপাক মোকাবেলা করা এবং আহতদের আশু রোগমুক্তির মাধ্যমে তাদের দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে সর্বশক্তিমানের কাছে প্রার্থনা জানান।