ছবি: আনিস মাহমুদসহপাঠীদের সঙ্গে একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন ফাহমিদা। রাত সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট স্টেশন থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসে ওঠেন। এর আগে বিকেলে ফাহমিদা মাকে ফোন দিয়ে জানান, তিনি রাতের ট্রেনে ঢাকায় যাচ্ছেন। এটাই ছিল পরিবারকে করা তাঁর শেষ ফোন।
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফাহমিদা ইয়াসমিন ওরফে ইভার (২০) লাশ শনাক্ত করেন তাঁর ভাই আবদুল হামিদ (৩৫)। ফাহমিদা সিলেটের মোগলা বাহার থানার আবদুল্লাহপুর গ্রামের আবদুল বারীর মেয়ে। এ নিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত চারজনের মধ্যে দুজনের লাশ শনাক্ত হয়েছে। এর আগে মনোয়ারা পারভীন (৪৫) নামের আরেকজনের লাশ শনাক্ত হয়। তিনি কুলাউড়ার কাদিপুর ইউনিয়নের গুপ্ত গ্রামের বাসিন্দা বারি মিয়ার স্ত্রী। পারভীনের স্বজনেরা তাঁর লাশ শনাক্ত করেন।
গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টায় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল এলাকায় রেলপথের একটি কালভার্ট ভেঙে উপবন এক্সপ্রেসের পাঁচটি বগি খালে পড়ে যায়। এ দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন নারী ও একজন পুরুষ।
ফাহমিদার ভাই আবদুল হামিদের সঙ্গে কথা হয় আজ সোমবার সকালে কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বোনের জন্য তিনি আহাজারি করছিলেন। বললেন, কাল বিকেলে ফাহমিদা ফোন দিয়ে বলেছিলেন, ‘আম্মা ঢাকায় যাচ্ছি’। তিন ভাই দুই বোনের মধ্যে ফাহমিদা ছিলেন তৃতীয়। তিনি সিলেট নার্সিং ইনস্টিটিউটের বিএসএসি নার্সিং কোর্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। একটি প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পাঁচ-ছয়জন সহপাঠীর সঙ্গে তিনি ঢাকায় যাচ্ছিলেন।
আবদুল হামিদ বলেন, গতকাল বিকেলে মায়ের সঙ্গে শেষবার মুঠোফোনে কথা ফাহমিদার। মাকে বলেছিলেন, ঢাকায় সহপাঠীদের সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন। রাতের উপবন এক্সপ্রেসে করে যাবেন।
ফাহমিদার মৃত্যুর খবর কীভাবে পেলেন জানতে চাইলে ভাই বলেন, আজ ভোররাত চারটার দিকে ফাহমিদার লাশের সঙ্গে থাকা মুঠোফোন থেকে কেউ একজন তাঁর বান্ধবীকে ফোন দিয়ে মৃত্যুর খবর দেন। ওই বান্ধবী পরে তাঁর মাকে (ফাহমিদার মা) ফোনে এ ঘটনা জানান।
কুলাউড়া থানার পুলিশ ফাহমিদার লাশ শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ময়নাতদন্ত ছাড়াই ফাহমিদার লাশ পরিবারের লোকজন বাড়িতে নিয়ে গেছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানিয়েছে, গতকাল দিবাগত রাত দুইটা পর্যন্ত কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চারটি মৃতদেহ ছিল। এর একটি মস্তকবিহীন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৬০ জন। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারাত্মক আঘাত থাকায় ২০ জনকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। হতাহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়তে পারে।