মায়ের মুখে হাসির দিকে যদি কেউ ভালোবাসা ভরা দৃষ্টিতে তাকায় তাহলে একটি হজ্জের সওয়াব পাওয়া যাবে।

বিশ্বে মা দিবস পালন করা হয় বছরে এক দিন। ইসলাম প্রতিদিনই মায়ের প্রতি লক্ষ রাখতে বলেছে। জগৎ সংসারের শত দুঃখ-কষ্টের মাঝে যে মানুষটির একটু সান্ত্বনা আর স্নেহ-ভালবাসা আমাদের সমস্ত বেদনা দূর করে দেয় সেই মানুষটিই হলো “মা”। মায়ের চেয়ে আপনজন পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মায়ের তুলনা শুধুই “মা” । মায়ের সঙ্গে সন্তানের নাড়ির সম্পর্ক। “মা” না হয়েও যারা মায়ের ভূমিকা পালন করেন যেমন_ সৎ “মা”, দুধ “মা” এদেরকেও ইসলাম মর্যাদা দিয়েছে। প্রতিটি সন্তানকে তাদের প্রতি সদাচরণ ফরয করা হয়েছে।

হাদিস শরীফে মায়ের কোল শব্দটি যেভাবে উল্লেখ আছে, বাবার কোল শব্দটি ওভাবে উল্লেখ নেই। “মা” হচ্ছে সন্তানের আদর্শ বিদ্যা নিকেতন। মায়ের আদর অতুলনীয়। ইসলামের নিয়ম অনুযায়ী “মা” হতে গিয়ে যে ইন্তেকাল করেন তাকে শহীদের মর্যাদা দিয়েছে। জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হলে ইসলাম কোনো নারীকে “মা” হতে বাধ্য করেনি। সফল “মা” কে ইসলাম যুদ্ধে বিজয়িনী বলে ঘোষণা দিয়েছে। সন্তানকে আদরসহ লালন-পালন, দুধ পান করানো মায়ের জন্য বাধ্যতামূলক। তবে ভরণ পোষণ, আয়-রোজগার মায়ের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। কোরআনের আলোকে মায়ের মর্যদাঃ
====================== পবিত্র কুরআনের সুরা বনি ইসরাইলে মাতা-পিতার প্রতি সদাচরণ করার নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমাদের প্রভু তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন তোমরা একমাত্র তারই ইবাদত করবে এবং মাতা-পিতার প্রতি সদাচরণ করবে। তাদের একজন বা উভয়ে যদি বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তুমি তাদের প্রতি বিরক্ত হয়ে উহ্ শব্দটি বলো না এবং তুমি তাদেরকে পরিত্যাগ করো না।

আর তুমি তাদের সঙ্গে নম্র ও বিনয়ী হয়ে কথা বলো। [ সুরা বনী ইসরাঈল আয়াত নং- ২৩ ] সুুরা লোকমানে মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, তুমি আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও এবং তোমার মা-বাবার প্রতিও কৃতজ্ঞ হও। [ সূরা লুক্বমান আয়াত নং- ১৪ ] হাদীসের আলোকে মায়ের মর্যাদাঃ
==================== সহীহ আল বুখারীতে বর্নীত আছে যে, এক লোক ইসলামের জন্য যুদ্ধে যেতে চাইলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে মায়ের সেবা করতে নির্দেশ দেন। বুখারি শরিফের আরেকটি হাদিসে এক লোক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার ওপর কার মর্যাদা ও অধিকার সবচেয়ে বেশি। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন তোমার মায়ের। এরপর কার? তিনি বললেন, তোমার মায়ের, প্রশ্ন করা হল অতঃপর? তিনি বললেন, তোমার মায়ের। জিজ্ঞাসা করা হল এরপর? নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার বাবার। অতঃপর সর্বাধিক ঘনিষ্ঠজনদের। এ হাদিসে গর্ভধারণ, দুধ পান ও লালন-পালনের কষ্ট সহ্যের জন্য মায়ের মর্যাদা ৩ গুণ বেশি বলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মায়ের কথা ৩ বার বলেছেন।

এক লোক মাকে কাঁধে নিয়ে কাবা প্রদক্ষিণ করে, ইবনে ওমর (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করল আমার মায়ের হক কি আদায় হল? তিনি বললেন, মায়ের এক দিনের ঋণও শোধ হয়নি। ইসলাম বলেছে, মায়ের প্রতি ভক্তি দৃষ্টি হতে পুণ্য হতে পারে না। হাদিস পড়ে জানা যায়, মায়ের অবাধ্য হলে কোনো পুণ্য কাজে আসে না। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এক সাহাবি মায়ের ওপর স্ত্রীকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে তার মৃত্যুক্ষণে মুখে কালিমা বের হচ্ছিল না। অতঃপর মা তাকে মাফ করে দিলে তার মুখে কালিমা উচ্চারিত হয়। সুনানে আবু দাউদ এর এক বর্ননায় আছে, “মা” হল বেহেস্তের মধ্যবর্তী দরজা। পুত্র নবী হলেও মাকে ইজ্জত করতে হয়। যেমন_ ইসা (আঃ) বলেন, আল্লাহ আমার মাকে শ্রদ্ধা ও তার সঙ্গে পুণ্যময় আচরণ করতে বলেছেন। সবচেয়ে বড় কবিরা গোনাহ হল “মা” ও বাবা কে গালি দেওয়া। মায়ের অবাধ্যকে অবশ্যই তওবা করতে হবে। কোনো পুণ্যময় রাত-দিনের মুহূর্তেও মায়ের অবাধ্যকে ক্ষমা করা হবে না,যদি না সে সংশোধিত হয়। অনেকে মা ও সন্তানদের রেখে অন্যত্র চলে যান। যা ইসলামে জঘন্য অপরাধ। ইসলামে মা বড় না, পিতা বড়_ এটি ডিম আগে না, মোরগ আগে প্রশ্নের উত্তরের মত কঠিন। তবে মর্যাদা যে মায়ের বেশি তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মায়ের বিরুদ্ধে স্বয়ং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও বিচার করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। সুতরাং “মা” যতই মন্দ হোক সন্তানের দায়িত্ব তাকে সম্মান দেওয়া। একটি কিতাবে এসেছে যে ব্যক্তি তার মায়ের পা ধরে চুম্বন দেয় সে যেন বেহেস্তের চৌকাঠে চুমো দিল। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মায়েদের পদতলে সন্তানদের বেহেশত আছে। “মা” হচ্ছেন আল্লাহর বিশেষ রহমত। এ জগতে যারাই বড় হয়েছেন সবাই ছিল মায়ের পাগল ও অনুগত।

আর নেপোলিয়ন মাত্র সেদিন বলেছে, “তুমি আমাকে আদর্শ “মা” দিলে আমি তোমাকে একটি আদর্শ জাতি দেব” এটি ইসলামেরই প্রতিধ্বনি মাত্র। ইসলাম পুণ্যবতী মা ও নারীকে শ্রেষ্ঠ সম্পদ বলেছে। তাই বলে ইসলাম আল্লাহর অবাধ্য হয়ে মায়ের কোনো অন্যায়কে মেনে নিতে বলেনি। বলেছে তার প্রতি মানবিক লক্ষ রাখতে, তার অবদান স্বীকার করে নিতে, তার সঙ্গে সদাচরণ করতে। অমুসলিমরা ‘বিশ্ব মা দিবস’ পালন করে বছরে এক দিন। ইসলাম প্রতিদিনই মায়ের প্রতি লক্ষ রাখতে বলেছে। ইসলাম অনুষ্ঠান সর্বস্ব ধর্ম নয়। এটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। চিরন্তন শাশ্বত নির্দেশনা। ইসলাম মাকে মায়া- মমতাহীন ভিন্ন জাতীয় মাম্মি বানায় না। ইসলামে “মা” হচ্ছেন স্নেহের অাঁধার পুণ্যবতী, সন্তানের শুভকামনাকারী, শান্তি, সুখ ও মানবতাময় এক শান্তির অতুলনীয় ঠিকানা। ইসলাম মাকে আদর্শ “মা” হতে বলেছে, বাবা কে আদর্শ বাবা হতে বলেছে। সন্তানকে বলেছে আদর্শ সুসন্তান হতে। তাই আসুন আমরা মাকে ভালোবাসি। পবিত্র ও নির্মল হোক মায়ের মুখের হাসি। সেই মাকে যত্ন নিই। কবি “মা” সম্পর্কে বলেন, ‘বিদেশে, বিরাজ্যে যদি পুত্র মারা যায় পশু-পাখি না জানিতে আগে জানে মায়। আমাদের প্রিয় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরিণত বয়সের মায়ের সান্নিধ্য পাননি। এজন্য তিনি আফসোস করতেন। মায়ের সেবা করতে না পারার কথা তার অন্তরে সর্বদা পীড়া দিত।

এজন্য তিনি দুধ মাতা হালিমা সাদিয়া (রাঃ) কে নিজের গায়ের চাদর বিছিয়ে দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেছেন। মায়ের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সদাচরণ করে তার কিছুটা পূরণ করার চেষ্টা করেছেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বাবা-মায়ের দিকে যত ভালোবাসা ভরা দৃষ্টি যাবে ততবারই হজ্জের সওয়াব হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আক্ষেপ করে বলেছেন ‘যে ব্যক্তি মা-বাবাকে পেল, অথচ এদেরকে সন্তুষ্ট করে জান্নাতের মালিক হতে পারল না, সে ব্যক্তি বড়ই দুর্ভাগা! প্রতিটি সন্তানের কাছে সর্বশেষ মিনতি, আসুন আমরা আমাদের দুঃখিনী মাকে শ্রদ্ধা করি। তাদের স্বপ্ন পূরণ করি, যাদের মা-বাবা বেঁচে নেই তাদের কবরে শান্তি কামনা করি। তাদের আপনদের সম্মান দিই, তাদের দুঃখের সাথী হয়ে যাই। তাদের পদতলে শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধির বেহেশত সন্ধান করে নিজেদের ধন্য করি। আল্লাহু আমীণ।