মুহাম্মাদ ফয়জুল্লাহ : যাকাত ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম একটি স্তম্ভ। প্রাপ্তবয়স্ক হলে যেমনিভাবে নামায ফরয হয়, তেমনি সারাবছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর ঋণমুক্ত হয়ে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকানার এক বছর পূর্ণ হলেও আবশ্যিকভাবে যাকাত আদায় করতে হয়।
বর্তমানে অনেক তরুণ উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী বা চাকুরীজীবীকেই দেখা যায় তার উপর যাকাত ওয়াজিব হয়ে আছে, কিন্তু তিনি এ বিষয়ে না জানার কারণে যাকাত আদায় না করে গুনাহগার হচ্ছেন। তাই আমাদের জেনে নেওয়া কর্তব্য যে সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে আমি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবো এবং আমার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে।
নিম্নে তা প্রদত্ত হলো- ৭.৫ ভরি স্বর্ণ অথবা ৫২.৫ ভরি রূপা হচ্ছে নিসাবের পরিমাণ। –আহসানুল ফাতাওয়া : ৪/৩৯৪; আল ফিকহুল ইসলামী : ২/৬৬৯
দেশি-বিদেশি মুদ্রা ও ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব নির্ধারণে সোনা-রুপা হলো পরিমাপক। এ ক্ষেত্রে অস্বচ্ছল-অসহায়দের জন্য যেটি বেশি লাভজনক হবে, সেটিকে পরিমাপক হিসেবে গ্রহণ করাই শরীয়তের নির্দেশ। তাই মুদ্রা ও পণ্যের বেলায় বর্তমানে রুপার নিসাবই পরিমাপক হিসেবে গণ্য হবে।
যার কাছে সাড়ে ৫২ ভরি রূপা বা এর সমমূল্যের দেশি-বিদেশি টাকা/মুদ্রা বা ব্যবসায়িক পণ্য মজুদ থাকবে, তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে। যে সম্পদের ওপর যাকাত ফরয, তার ৪০ ভাগের এক ভাগ (২.৫০ শতাংশ) যাকাত দেওয়া ফরয।
বর্তমান বাজারে ভরি প্রতি রূপার মূল্য ৭৫০ টাকা। মানভেদে কিছু কম বা বেশিও হয়। তাই আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে রূপার মূল্য ভরি প্রতি মোটামুটি ৭৬২ টাকা ধরে সাড়ে ৫২ ভরি রূপার মূল্য আসে ৪০,০০৫ (চল্লিশ হাজার পাঁচ) টাকা।
অতএব, কেউ যদি ঋণমুক্ত হওয়া এবং সারাবছরের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর পর মোটামুটি সর্বনিম্ন ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা বা এর সমপরিমাণ মূল্যমানের ব্যবসায়িক পণ্যের মালিক হয়, তাহলে তার উপর যাকাত ওয়াজিব হবে। হিসাব করে শতকরা আড়াই টাকা বা হাজারে ২৫ টাকা হারে নগদ অর্থ কিংবা ওই পরিমাণ টাকার কোনো প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে যাকাত আদায় করতে হবে। ৪০ হাজার টাকায় যাকাত আসবে ১০০০ (এক হাজার) টাকা।
রাব্বুল আলামিন আমাদের যথাযথ সময়ে যথাযথভাবে যাকাত আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমীন।
লেখক: মুহাম্মাদ ফয়জুল্লাহ, মুতাখাসসিস ফিল ফিকহিল ইসলামী, আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।