আল্লামা মুশাহিদ বায়ামপুরী ১৩২৭ হিজরি মোতাবেক ১৯০৭ সালে মহররম মাসে শুক্রবার দিনে সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বায়ামপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বায়মপুর বর্তমান কানাইঘাট পৌরসভার অন্তর্গত।
তাঁর বাবার নাম কারী আলিম বিন কারী দানিশ মিয়া। আর মাতার নাম হাফেজা সুফিয়া বেগম। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়।
আল্লামা মুশাহিদ আহমদ বায়ামপুরী তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একজন খ্যাতিমান আলেম, রাজনীতিক, সমাজ সংস্কারক ও লেখক ছিলেন। হাদিস বিশারদ হিসেবে উপমহাদেশে তাঁর ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে। সিলেটের কানাইঘাট দারুল উলূম মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ও শাইখুল হাদিস ছিলেন। সিলেট সরকারি আলিয়াসহ ভারত-বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তানের মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি (এমএনএ) নির্বাচিত হন।
ছোটবেলায় তাঁর বাবা মারা যান। মায়ের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হন। মায়ের কাছেই তাঁর পড়াশোনার হাতেখড়ি। মাত্র সাত বছর বয়সে মায়ের কাছে কোরআন পড়া শিখেন। সঙ্গে বাংলা ও উর্দুও পড়েন।
তার শিক্ষাজীবন
আল্লামা বায়ামপুরী সাত বছর বয়সে গ্রামের পাঠশালায় ভর্তি হন। কানাইঘাট ইসলামিয়া মাদরাসা, যা বর্তমানে দারুল উলুম কানাইঘাট সেখান থেকে মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি প্রাথমিক পড়াশোনা সম্পন্ন করেন। মাধ্যমিক পর্যায়ের পড়াশোনাও এখানেই সম্পন্ন করেন। এরপর কিছুদিন লালারচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। পরে তিনি স্কুলের চাকরি ছেড়ে চলে যান ভারতে।
সেখানে রামপুর আলিয়া মাদরাসায় পাঁচ বছর এবং মিরাঠ আলিয়া মাদরাসায় দুই বছর পড়াশোনা করেন।
এই সাত বছরে তিনি হাদিস, তাফসির, ফেকাহ, আকাইদ, দর্শন প্রভৃতি শাস্ত্রে বিশেষ পাণ্ডিত্ব গ্রহণ করেন। ছাত্র থাকাকালেই তিনি দরসে নেজামির গুরুত্বপূর্ণ কিতাব কাফিয়ার ব্যাখ্যাগ্রন্থ ইযাহুল মাতালিবসহ দুটি কিতাব রচনা করেন।
তবে কিতাব দুটি প্রকাশিত হয় উস্তাদের নামে। ভারতে পড়াশোনা শেষ করে আবার দেশে ফিরে আসেন। সেই লালারচর রহমানিয়া মাদরাসায় শিক্ষকতা করেন। কিন্তু তিনি এতে তৃপ্তি পাচ্ছিলেন না। উচ্চশিক্ষার স্পৃহা তাঁকে অদৃশ্য থেকে টানছিল। চাকরি ছেড়ে আবারও ভারতে। ১৯৩৬ সালে ভর্তি হন বিশ্ববিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম দেওবন্দে।
সেখানে প্রায় দেড় বছর অত্যন্ত সুনাম ও সুখ্যাতির সঙ্গে হাদিসের ওপর সর্বোচ্চ ডিগ্রি গ্রহণ করেন। মেধা তালিকায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে তিনি প্রথম স্থান অধিকার করেন। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি রেকর্ডসংখ্যক নম্বর অর্জন করেন।
কয়েকটি বিষয়ে মোট নম্বরের চেয়েও বেশি নম্বর লাভের গৌরব তিনি অর্জন করেন। তাঁর বোখারি শরিফের পরীক্ষার খতা দেওবন্দ মাদরাসা কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করে রেখেছিল দীর্ঘকাল।
কর্মজীবন
আল্লামা বায়ামপুরী রহ. দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনের পর ভারতেই শিক্ষকতায় আত্মনিয়োগ করেন। বেশ কয়েক বছর ভারতের বদরপুর ও রামপুর আলিয়া মাদরাসায় ইলমে হাদিসের ওপর পাঠদান করেন। সিলেটবাসীর অনুরোধে পরে ফিরে আসেন দেশে। যোগ দেন সিলেট সরকারি আলিয়া মাদরাসায় শাইখুল হাদিস হিসেবে।
সিলেটের গাছবাড়ী জামিউল উলুম কামিলা মাদরাসায়ও তিনি শাইখুল হাদিসের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর শিক্ষকতাকালে গাছবাড়ী মাদরাসাকে ‘দ্বিতীয় দারুল উলূম দেওবন্দ’ হিসেবে অভিহিত করা হতো।
তবে সেই মাদরাসা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ১৯৫৩ সালে চলে আসেন নিজ জন্মস্থান কানাইঘাটে। যোগ দেন কানাইঘাট ইসলামিয়া মাদরাসায়।
এই প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘দারুল উলূম কানাইঘাট’। সেখানে তিনিই ১৯৫৪ সালে চালু করেন দাওরায়ে হাদিসের ক্লাস। একাধারে সেই মাদরাসার পরিচালক ও শাইখুল হাদিস ছিলেন আল্লামা বায়ামপুরী রহ.। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত এখানেই তিনি হাদিসের সুমহান খেদমত করে গেছেন।
তাঁকে ঘিরে সিলেটের এক প্রান্তের অঁজপাড়া গাঁয়ের এই মাদরাসায় ছুটে আসতেন দেশের নানা প্রান্তের শিক্ষার্থীরা।
১৯৫৭ সালে সর্বভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা দারুল উলূম দেওবন্দের শায়খুল হাদিস সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. ইন্তেকাল করেন।
তাঁর ইন্তেকালের পর দেওবন্দে শায়খুল হাদিস পদ শূন্য হয়। তখন সেই পদ পূরণে যে তিনজন ক্ষণজন্মা আলেমের নাম প্রস্তাব করা হয়েছিল আল্লামা বায়ামপুরী ছিলেন তাদের অন্যতম। কিন্তু তিনি নিজ জন্মভূমিতে হাদিসের দরস ছেড়ে তখন যেতে রাজি হননি।
পূর্ব সিলেটের সব মাদরাসাকে এক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে ১৯৫৩ সালে তিনি গঠন করেন ‘পূর্ব সিলেট আযাদ দীনি আরবী মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড’।
তিনি আজীবন এই বোর্ডের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বর্তমানে ওই বোর্ডের অধীনে প্রায় ১৭৫টি মাদরাসা পরিচালিত হচ্ছে।
সামাজিক সংস্কার আন্দোলন
তখন মুসলিম সমাজে শিক্ষাদীক্ষা তেমন ছিল না। শিরক, বেদআত আর কুসংস্কারে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল মুসলমানরা। মুসলিম সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন আল্লামা বায়ামপুরী রহ.। তিনি সিলেটের আনাচে-কানাচে মানুষের মধ্যে ওয়াজ-নসিহত করে বেড়াতেন।
সামাজিক নানা অসঙ্গতি, কুসংস্কার ও অনাচারের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। ধর্মীয় ও বিজ্ঞানভিত্তিক তাঁর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা সর্বমহলে জনপ্রিয় ছিল। রমজানে সিলেটের বন্দরবাজার জামে মসজিদে তারাবির পর থেকে সাহরি পর্যন্ত তাফসির ও ওয়াজ নসিহত করতেন।
শত শত মুসল্লি রাত জেগে তাঁর উপভোগ্য ও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শুনতেন। অনেকে দূরদূরান্ত থেকে এসে হোটেলে অবস্থান নিতেন তাঁর বয়ান শোনার জন্য। শিক্ষার্থীরা খাতা-কলম নিয়ে তাঁর বয়ান শুনতে বসতো। তাঁর সেই মজলিস হতো সব শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্য উন্মুক্ত এক পাঠশালার মতো।
রাজনৈতিক জীবন
রাজনীতিতেও বিশাল ভূমিকা ছিল আল্লামা বায়ামপুরী রহ.-এর। রাজনীতিতে তিনি ছিলেন তাঁর উস্তাদ ও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর অনুসারী।
শিক্ষকের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে তিনি জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তিনবার জাতীয় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।
সর্বপ্রথম ১৯৬২ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট নির্বাচনে চেয়ার প্রতীকে নির্বাচন করে বিপুল ভোটে এমএনএ (মেম্বার অব ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি) নির্বাচিত হন। ১৯৬৫ সালেও তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে গোলাপফুল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
১৯৭০ সালে তিনি জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের দলীয় প্রতীক খেজুর গাছ নিয়ে নির্বাচন করেন। প্রথমবার বিজয়ী হলেও শেষ দুইবার সামান্য ভোটে পরাজিত হন। এমএনএ থাকাকালে আল্লামা বায়ামপুরী রহ. দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে পার্লামেন্টে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।
রাষ্ট্রের নামকরণে পাকিস্তান প্রজাতন্ত্রের পরিবর্তে ‘ইসলামী প্রজাতন্ত্র পাকিস্তান’ লেখায় তাঁর ভূমিকা ছিল। কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন করা যাবে না এই আইন তিনি পাকিস্তানের সংসদে উত্থাপন করেছিলেন। তার দাবির মুখে একটি অর্ডিন্যান্স থেকে ইসলামবিরোধী ধারা বাতিল করতে বাধ্য হয় আইয়ূব সরকার।
জাতীয় শিক্ষাপদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন এবং ইসলামি ভাবধারা প্রতিষ্ঠার জোর দাবি তিনি পার্লামেন্টে তুলে ধরেন। পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি তিনিই প্রথম করেন। তিনি কোরআন-সুন্নাহভিত্তিক শোষণমুক্ত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করে গেছেন আজীবন।
রচনাবলী
এই ভূখণ্ডের আলেমদের মধ্যে কলমের চর্চা এতোটা জোরালো না থাকলেও ব্যতিক্রম ছিলেন আল্লামা মুশাহিদ আহমদ বায়ামপুরী রহ.। দ্বীনের বিভিন্ন অঙ্গনে অবদানের পাশাপাশি লেখালেখির লাইনেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
তিনি জাতিকে কয়েকটি অমূল্যবান বই উপহার দিয়ে গেছেন। তাঁর রচিত ‘ফাতহুল কারীম ফি সিয়াসাতিন্নাবিয়ীল আমীন’ রাজনীতি বিষয়ে একটি অমর গ্রন্থ।
১৯৪৮ সালে ভারতের রামপুর থেকে কিতাবটি মুদ্রিত হয়। পরবর্তী সময়ে ‘ইসলামের রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক উত্তরাধিকার’ নামে বইটির অনুবাদ ইসলামিক ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত হয়। তাঁর রচিত ‘আল-ফুরক্বান বাইনাল হক্বে ওয়াল বাতিল ফি ইলমিত তাসাউফে ওয়াল ইহসান’ গ্রন্থটি তাসাউফ সংক্রান্ত।
তাঁর আরও কয়েকটি গ্রন্থ হচ্ছে: আল ফুরক্বান বাইনা আউলিয়াইর রহমান ও আউলিয়াইশ শাইতান, সত্যের আলো (দুই খণ্ডে), ইসলামে ভোট ও ভোটের অধিকার, সেমাউল কোরআন, ইজহারে হক্ব, আল লাতাইফুর রাব্বানিয়্যাহ ফি সূরাতি তাফসীরিল ফাতিহা। এছাড়া কিছু বই অপ্রকাশিত থেকে যায়।
কৃতিত্ব ও সম্মান
আল্লামা বায়ামপুরী রহ. তিনবার হজ পালন করেন। ১৯৪৭ সালে হজে তিনি মক্কার ইমামের খুতবায় ভুল ধরেন। হাদিসশাস্ত্রে তাঁর পাণ্ডিত্য আরবের আলেমদের তাক লাগিয়ে দেয়।
তৎকালীন সৌদি আরবের বাদশাহ তা দের রাষ্ট্রীয় সংবিধান এনে আল্লামা বায়ামপুরীর সামনে পেশ করে বলেন, আমাদের সংবিধানে কোথাও কোনো ভুল আছে কি না দেখুন।
পরে তিনি জানালেন অন্তত ১৪টি বিষয় সংশোধনযোগ্য। তাঁর জ্ঞানের গভীরতা দেখে সৌদি আলেমরা হতবাক। আল্লামা বায়ামপুরী রহ. তাঁর উস্তাদ হোসাইন আহমদ মাদানীর সঙ্গে অখণ্ড ভারতের পক্ষে ছিলেন। সে সময় অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে যাদের বাড়ি পাকিস্তানে ছিল তাদের ওপর নানা নির্যাতন হতো।
এজন্য এক পর্যায়ে বায়ামপুরী রহ. ভারতের আসামে চলে যান। এই খবর জানার পর সৌদি বাদশা পাকিস্তানি এক মন্ত্রীকে ডেকে বলেন এমন একজন বিজ্ঞ আলেমকে তাড়িয়ে দিয়ে পাকিস্তান আবার মুসলমানদের রাষ্ট্র হয় কেমনে? এতে মন্ত্রী লজ্জিত হলেন এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় আল্লামা বায়ামপুরীকে পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) নিয়ে এলেন।
কানাইঘাট উপজেলা সদরে তথা আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরীরর বাড়ির পাশে সুরমা নদীর উপর যে ব্রিজ নির্মিত হয়, এই ব্রীজ মুশাহিদ বায়মপুরীরর নামে নামকরণ করা হয়েছে। এ ব্রীজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রীজ। সিলেট শহরের বাইরে কেবল কানাইঘাটে সুরমা নদীর উপর এমন ব্রীজ আছে।
ইলমের সমুদ্র
আল্লামা ছিলেন ইলমের এক সমুদ্র। তিনি নিজেই বলেছেন, দিল্লির সর্ববৃহৎ পাঠাগারের এমন অনেক কিতাব তিনি পাঠ করেছেন, যেগুলো আগে কেউ পড়েনি। তিনি সেগুলোর পাতা কেটে কেটে সর্বপ্রথম পাঠক হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। লাইব্রেরিতে গিয়ে এমন কিতাবের খোঁজ তিনি করেছেন যা আগে কেউ করেনি।
কথিত আছে, তিনি যখন দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে শিক্ষা সমাপ্ত করে দেশে ফিরেন তখন তাঁর শিক্ষক সাইয়েদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. বলেছিলেন, আব ইলম সিলেট কি তরফ জা রহা হায় (এখন জ্ঞানবত্তা সিলেটের দিকে যাচ্ছে)। সমকালীন আলেমরা তাঁকে একবাক্যে পণ্ডিত আলেম হিসেবে মেনে নিয়েছেন।
আধ্যাত্মিক জীবন
আল্লামা বায়ামপুরী রহ. প্রথমে হাকীমুল উম্মত হজরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রহ.-এর সঙ্গে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। তবে নিজ উস্তাদ হোসাইন আহমদ মাদানী রহ.-এর কাছ থেকেও আধ্যাত্মিক লাইনে উপকৃত হন।
পরবর্তী সময়ে তিনি মাওলানা ইয়াকুব বদরপুরী রহ.-এর কাছে বায়াত হন এবং তাঁর খেলাফত লাভ করেন।
আধ্যাত্মিকতার জগতে বায়মপুরী রহ. ছিলেন খুব উচুঁমাপের সাধক। তবে তিনি কখনও এটা প্রকাশ হতে দিতেন না। সবসময় নিজেকে আড়াল করে রাাখতেন। বহু জ্ঞানী-গুণীজন তাঁর কাছে ইলমে তাসাউফের দীক্ষা নেন।
তাঁর খেলাফতপ্রাপ্ত কয়েকজন হলেন কানাইঘাট দারুল উলুম মাদরাসার সাবেক মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা শহরউল্লাাহ রহ.,
সিলেটের গোয়াইনঘাট লাফনাউট মাদরাসার সাবেক মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা আব্দুল করীম ছত্রপুরী রহ., গাছবাড়ী মুজাহিরুল উলুম মাদরাসার সাবেক মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা হাবীবুর রহমান রহ., জকিগঞ্জ শিতালঙ্গশাহ মাদরসাার সাবেক মুহতামিম মাওলানা তৈয়বুর রহমান রহ., দারুল উলুম কানাইঘাটের সাবেক মুহতামিম ও শাইখুল হাদিস মাওলানা মুহাম্মদ বিন ইদ্রিস।
পারিবারিক জীবন
আল্লামা বায়াামপুরী রহ. ছিলেন ১১ সন্তানের জনক। ছেলেরা হলেন: ১. মাওলানা ফারুক আহমদ ২. মৌলভী ফরিদ আহমদ ৩. মাওলানা জামিল আহমদ ৪. হাফেজ হাবিব আহমদ ৫. রশিদ আহমদ।
তাঁরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। মেয়েরা হলেন: ৬. রায়হানা বেগম ২. সফিনা বেগম ৩. আয়েশা বেগম ৪. সালমা বেগম ৫. জয়নব বেগম ৬. আমিনা বেগম।
ইন্তেকাল
আল্লামা মুশাহিদ বায়ামপুরী ১৩৯০ হিজরী ১০ জিলহজ মোতাবেক ১৯৭১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঈদুল আজহার রাতে ইন্তেকাল করেন। ঈদুল আজহার দিন আসরের পর তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাজায় ইমামতি করেন তাঁরই ছোটভাই আল্লামা মুজাম্মিল রহ.৷ তাঁর হাতেগড়া প্রিয় প্রতিষ্ঠান কানাইঘাট দারুল উলুম মাদরাসার সামনেই তাঁকে সমাহিত করা হয়।
কবর থেকে সুগন্ধি
আল্লামা বায়ামপুরী রহ.কে দাফনের পর কয়েক দিন পর পর্যন্ত কবর থেকে সুগন্ধি বের হয়। মাঝে বিরতি দিয়ে তিন মাস পর আবার এই সুগন্ধি অনুভব করেন এলাকাবাসী।
ইন্তেকালের ৪০ বছর পর ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে আবারও তাঁর কবর থেকে সুগন্ধি বের হতে থাকে। এই সুগন্ধি লাভের জন্য দেশের নানা প্রান্ত থেকে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ভিড় করেন।
তবে তাঁর কবরস্তান ঘিরে যেন শরিয়ত পরিপন্থি কোনো কর্মকা- না হয় সে ব্যাপারে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করে। তিনি আল্লাহর কত প্রিয় বান্দা ছিলেন এই কারামাত দ্বারাই কিছুটা অনুমান করা যায়।
-তথ্যসুত্র উইকিপিডিয়া