প্রায় দেড় হাজার বছর আগে দেওয়া রাসুল (সা.) এর সেই উপদেশ যুক্তরাজ্যের গবেষণায় প্রমাণিত হলো। সুস্থ সুন্দর ও নিরাপদ জীবন লাভে রাতে দেরি না করে ঘুমিয়ে পড়া এবং ভোরে তাড়াতাড়ি জেগে ওঠার কোনো বিকল্প নেই। ইসলামের বিধানও তাই। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে পাকে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেছেন।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের একদল চিকিৎসকের গবেষণায় সুস্থ থাকতে রাতে জলদি ঘুমাতে যাওয়া এবং সকালে তাড়াতাড়ি ওঠার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। যারা দেরিতে ঘুমাবে এবং দেরিতে ঘুম থেকে উঠবে এদের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি যেমন বেশি তেমনি মৃত্যুর ঝুঁকিও কয়েকগুণ বেশি।
স্বাভাবিক ভাবে রাত জাগা আর দেরিতে ঘুম থেকে ওঠা সমাজে বদঅভ্যাস হিসেবে বিবেচিত এবং এর ক্ষতিকর দিকটি কেউ ভেবে দেখেনি। এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের একদল চিকিৎসকের গবেষণায় বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠেছে।
গবেষক দল ৩৮ থেকে ৭৩ বছর বয়সী ৪ লাখ ৩৩ হাজার মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ জরিপ করেছে। চিকিৎসকদের গবেষণায় যা ওঠে এসেছে। যুক্তরাজ্যের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের চিকিৎসক ডা. পিরেঞ্জ লেভি গবেষণার বিষয়টি এভাবে তুলে ধরেন-
– ‘আমরা দেখেছি যারা দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন তারা নানা ধরনের মানসিক ও শারীরিক জটিলতায় ভোগেন। তাদের গড় আয়ু নিয়মিত সকালে ওঠা মানুষের চেয়ে সাড়ে ৬ বছর কম।
– যারা দেরি করে ঘুমাতে যান এবং সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন তাদের অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যায়। আর যাদের দেহ ঘড়ি অনিয়মে চলে তাদের এ ঝুঁকি বাড়তেই থাকে।
প্রবাদ আছে
‘তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়া আর সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা সুস্বাস্থ্য, সম্পদ আর জ্ঞানের পূর্বশর্ত।’ এবার এ প্রবাদের পক্ষেই প্রমাণ দিলেন যুক্তরাজ্যের একদল গবেষক। তাদের দাবি-
‘যারা নিয়মিত ঘুম থেকে ওঠেন তাদের অকাল মৃত্যুর হার সবচেয়ে কম।’
চিকিৎসক দল ৪ ধরনের মানুষের ওপর এ গবেষণা করে থাকেন। যারা নিয়মিত সকালে ওঠেন আর মাঝে মাঝে সকালে ওঠেন। আবার মাঝে মাঝে দেরি করে ঘুমান এবং যারা নিয়মিত রাত জাগেন, এমন ৪ ধরনের মানুষের ওপর গবেষণা পরিচালনা করেন। তাদের গবেষণায় আরো এসেছে-
– রাত জাগার বদঅভ্যাস যারা গড়ে তুলেছেন তাদের ৯০ শতাংশই মানসিক রোগের শিকার।
– রাত জাগার বদঅভ্যাসে আক্রান্ত ৩০ শতংশ মানুষের ডায়াবেটিকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।
– স্নায়ুবিক সমস্যা থেকে শুরু করে অন্ত্রের রোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে যায়।
চিকিৎসকদের পরামর্শ
মৃত্যু ঝুঁকি, ডায়াবেটিক, স্নায়ুরোগসহ যাবতীয় জটিল রোগ থেকে বাঁচতে সুস্থ জীবন যাপনের জন্য দেরি না করে নিয়ম মাফিক একই সময়ে ঘুমানো এবং ঘুম থেকে ওঠা, ঘুমের সময় মোবাইল ও ল্যাপটপ ব্যবহার না করার মতো অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন এসব গবেষক চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর আগে সর্বকালে সর্বযুগের মহাবিজ্ঞানী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানুষের জন্য এ উপদেশ দিয়েছেন এবং সকাল বেলা তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠে সূর্যোদয়ের আগেই ফজর আদায় করার বিধান নিয়ে এসেছেন।
দেরিতে হলেও চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রিয়নবির নসিহতের পুনরাবৃত্তি করছে মাত্র। এতেই প্রমাণিত হয় যে ইসলামই একমাত্র পরিপূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত সুন্দর জীবন ব্যবস্থা। যার প্রতিটি বিধান মানুষের জন্য উপকারি।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে ইসলামের বিধানে আলোকে জীবন পরিচালনার এবং রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাওয়ার এবং সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গঠন করার তাওফিক দান করুন। সুস্থ ও সুন্দর রোগমুক্ত জীবন উপভোগ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।