যে চার জিনিসকে আল্লাহ্‌ নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন

প্রশ্ন: আল্লাহ্‌ তাআলা আদম (আ.) কে তাঁর নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তার মাঝে নিজ রুহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ তাআলা অবশিষ্ট মাখুলক যেমন ফেরেশতা, জ্বিন ও অন্যান্য সৃষ্টিকেও কি নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন? তিনি এসব সৃষ্টিকুলের মধ্যেও কি নিজ রুহ থেকে ফুঁকে দিয়েছেন? নাকি এটি অন্যসব সৃষ্টি ব্যতীত আদম (আ.) এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও একক মর্যাদা? আল্লাহ্‌ আপনাদেরকে উত্তম প্রতিদান দিন।

উত্তর:

এক: আল্লাহ্‌ তাআলা আদম (আ.) কে খাসভাবে নিজহাতে সৃষ্টি করেছেন যেমনটি তিনি জানিয়েছেন। আদম (আ.) ছাড়া অন্য কোন জীবকে তিনি নিজ হাতে সৃষ্টি করেননি। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন: “তিনি বললেন: হে ইবলীস! আমি স্বহস্তে যাকে সৃষ্টি করেছি, তাকে সেজদা করতে কিসে তোমাকে বাধা দিল? তুমি অহংকার করলে; নাকি আগে থেকেই তুমি অহংকারী ছিলে?” (সূরা সা’দ, আয়াত: ৭৫)

শাফায়াতের হাদিসে এসেছে: “আমি কিয়ামতের দিন সমগ্র মানব জাতির সরদার হবো। তোমরা কি জানো, আল্লাহ কিভাবে একই সমতলে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল মানুষকে একত্রিত করবেন? যেন একজন দর্শক তাদের সবাইকে দেখতে পায় এবং একজন আহ্বানকারীর আহ্বান সবার নিকট পৌঁছায়। সূর্য তাদের অতি নিকটে এসে যাবে। তখন কোন কোন মানুষ বলবে, তোমরা কি দেখছো না, তোমরা কী অবস্থায় আছো এবং কী পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছো। তোমরা কি এমন ব্যক্তিকে খুঁজে বের করবে না, যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের রবের নিকট সুপারিশ করবেন? তখন কিছু লোক বলবে, তোমাদের আদি পিতা আদম (আ.) আছেন। তখন সকলে তাঁর নিকট যাবে এবং বলবে, হে আদম! আপনি সমস্ত মানব জাতির পিতা। আল্লাহ আপনাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর রূহ থেকে আপনার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছেন। তিনি ফেরেশতাদেরকে নির্দেশ দেয়ায় তারা সকলে আপনাকে সিজদা করেছে। তিনি আপনাকে জান্নাতে বসবাস করতে দিয়েছেন। আপনি কি আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করবেন না? আপনি কি দেখছেন না, আমরা কী অবস্থায় আছি এবং কী কষ্টের সম্মুখীন হয়েছি। তখন তিনি বলবেন, আমার রব আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন এর পূর্বে এমন রাগান্বিত হননি; আর পরেও এমন রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে বৃক্ষটি হতে নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু আমি তাঁর অবাধ্য হয়েছি। আমার নফস! আমার নফস! তোমরা অন্য কারো কাছে যাও। তোমরা নূহের কাছে যাও।…”(সহিহ বুখারী (৩৩৪০) ও সহিহ মুসলিম (১৯৪))

ইমাম দারেমী (রহ.) বলেন: “আল্লাহ্‌ নিজ হাত দিয়ে স্পর্শ করে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি ছাড়া অন্য কোন জীবকে তাঁর হস্তদ্বয় দিয়ে সৃষ্টি করেননি। এ কারণে আদম (আ.) কে বিশেষিত করেছেন, মর্যাদা দিয়েছেন এবং এটাকে উল্লেখ করে আদমকে সম্মানিত করেছেন।”(নাকযুদ দারিম আলাল মির্‌রিসি, পৃষ্ঠা-৬৪)

দারেমী, লালাকায়ি ও আজুর্‌রি এবং অন্যান্য আলেম সহিহ সনদে ইবনে উমর (রা.) থেকে উল্লেখ করেছেন যে, তিনি বলেন, “আল্লাহ্‌ চারটি জিনিসকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন: আরশ, কলম, আদন (জান্নাত) ও আদম (আ.)। এরপর অন্যসব সৃষ্টিকে লক্ষ্য করেন বলেন- হও; তখন তারা হয়ে যায়।”

দারেমী হাসান সনদে কিন্দা গোত্রের সর্দার সালেহ এর পিতা মায়সারা নামক তাবেয়ী থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: “নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তিনটি ছাড়া তার অন্য কোন সৃষ্টিকে স্পর্শ করেননি। তিনি আদমকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তাওরাত নিজ হাতে লিখেছেন। জান্নাতে আদন নিজ হাতে লাগিয়েছেন।(নাকযুদ দারেমী, পৃষ্ঠা-৯৯) উক্ত গ্রন্থের মুহাক্কিক শাইখ মানসুর আস্‌সামরি ভূমিকাতে বলেন: “তিনি ছাড়াও অন্যান্য তাবেয়ীগণ থেকে যেমন- হাকীম বিন জাবের ও মুহাম্মদ বিন কাব আল-কুরাযি থেকে সহিহ সনদে এমন বর্ণনা আছে। আমি এ গ্রন্থের যে স্থানে আলোচ্য উক্তিটি রয়েছে সেখানে টীকাতে সেগুলো উল্লেখ করেছি।”

এই হল চারটি জিনিস যেগুলোকে আল্লাহ্‌ নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন: আরশ, কলম, আদন জান্নাত ও আদম (আ.)। আর অবশিষ্ট সকল সৃষ্টি “কুন” শব্দ দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে।

দুই. আর-রুহ: আল্লাহ্‌ তাআলা আদম এবং আদমের সকল সন্তানের মাঝে রুহ ফুঁকে দিয়েছেন। এটি আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকৃত ‘রুহ’। এ রুহকে আল্লাহ্‌র দিকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে সম্মান ও মর্যাদাসূচক হিসেবে। যেমনটি আল্লাহ্‌ আদমের ব্যাপারে বলেছেন: “অতঃপর যখন তাকে পরিপূর্ণ আকৃতি দান করব এবং তার মধ্যে আমার রূহ থেকে ফুঁকে দেব, তখন তোমরা তাকে সেজদা করবে।”(সূরা হিজর, আয়াত: ২৯)

আল্লাহ্‌ তাআলা ঈসা (আ.) এর ব্যাপারে বলেন: “মরিয়ম-তনয় ঈসা মসীহ কেবল আল্লাহ্‌র রাসূল এবং তাঁর বাণী; যা তিনি মরিয়মের কাছে পাঠিয়েছিলেন ও তাঁর পক্ষ থেকে রূহ।”(সূরা নিসা, আয়াত: ১৭১)