একবার হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর নিকট এক ভিক্ষুক আসল, তো তিনি ভিক্ষুককে খাবার দিলেন এবং বললেন যে, বিসমিল্লাহ বলে শুরু কর। ভিক্ষুকটি বলল, বিসমিল্লাহ বলব কেন, আমি তো আল্লাহকে বিশ্বাস করি না। ইব্রাহিম (আঃ) এ কথা শুনে ভিক্ষুকের কাছে থেকে থালা কেড়ে নিলেন এবং বললেন যাও, তুমি আল্লাহকে বিশ্বাস কর না তোমাকে খেতে দিব না।
ভিক্ষুক ঘরের দরজা থেকে বেরিয়েছে মাত্র আল্লাহ তায়ালা তৎক্ষণাৎ ইব্রাহিম (আঃ) এর উপর ওহী নাযিল করলেন, হে ইব্রাহিম, সে আমাকে বিশ্বাস করে না সেটা তার আর আমার মধ্যকার ব্যাপার, কেন তুমি রুটি ফিরিয়ে নিলে, যাও তাকে ডেকে এনে আবার খেতে দাও।
সুবাহানাল্লাহ! আল্লাহ কত দয়াশীল!
মানুষকে আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীব কেন বলছেন ? কারণ আল্লাহ মানুষকে নিজস্ব ইচ্ছা দিয়েছেন ফলে মানুষ আল্লাহকে মানতেও পারে নাও মানতে পারে। মানলে জান্নত আর না মানলে জাহান্নাম। কিন্তু কাউকে জোর করে আল্লাহকে মানানোর অধিকার আল্লাহ মানুষকে দেয়নি। তবে আল্লাহ পৃথিবীতে যে নিদর্শন রেখেছেন তাতে কেঊ নাস্তিক থাকতে পারে না। সামান্য বুদ্ধি থাকলেও যেকেউই বুঝতে পারবে পৃথিবীর এতোকিছু এমনি এমনি সৃষ্টি হয়নি কেউনা কেঊ সৃষ্টি করেছেন ও সুশ্রিংখল ভাবে পরিচালনা করছেন। অবশ্যই একজন স্রষ্টা আছেন
পিতামাতার জুলুম সত্ত্বেও সন্তানের করণীয়
সন্তানের জন্য দুনিয়াতে জান্নাত এবং জাহান্নামের কারণ হয়ে দাঁড়ায় পিতামাতা। দুনিয়াতে যে সব কাজের শাস্তি সুনির্ধারিত অবশ্যম্ভাবী সেগুলো মধ্যে পিতামাতার অবাধ্যতাও একটি। তাই সর্বাবস্থায় পিতামাতার খেদমত করা জরুরি।
যদি কোনো ব্যক্তি প্রতিদিন পিতামাতার কুশল বা ভালোমন্দের ভাব বিনিময় করে, শুধু এ টুকু ভাব-বিনিময়ের জন্যই আল্লাহ তাআলা ওই সন্তানের জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেন। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসেই তা প্রমাণ করে। এমনকি পিতামাতা যদি সন্তানের ওপর জুলুমও করে থাকে।
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন এমন কোনো মুসলমান নাই যার মুসলিম পিতা-মাতা রয়েছে আর সে সকাল সকাল তাদের ভালো-মন্দের খোঁজ খবর নেয়। অথচ আল্লাহ তাআলা তার জন্য বেহেশতের ২টি দরজা খুলে দেন। আর যদি একজন (জীবিত) থাকে তবে একটি দরজা (খুলে দেন)।
আর যদি সে ব্যক্তি তাদের মধ্যকার কোনো একজনকে অসুন্তুষ্ট করে, তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত সে তাকে সন্তুষ্ট করে আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত তার ওপর সন্তুষ্ট হন না। (প্রিয়নবিকে) জিজ্ঞাসা করা হলো- যদি তাদর ওপর জুলুম করেন, তবুও কি? (পিয়নবি) বললেন, যদি তাঁর ওপর জুলুমও করেন তবুও।’ (আদাবুল মুফরাদ)
অন্য হাদিসে হজরত ইবনে আব্বাসের বর্ণনায় এসেছে, ‘যে বক্তি (দিনের) প্রত্যুষে পিতামাতার অনুগত সন্তান হিসেবে তাঁর গাত্রোখান তথা (অজু গোসল; পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা) খেদমত করে; তার জন্য বেহেশতের ২টি দরজাই খুলে যায়। আর যদি তাদের দুই জনের (পিতা-মাতা) একজন থাকে তবে একটি দরজা।
আর যদি ওই ব্যক্তি প্রত্যুষে পিতামাতার অবাধ্য সন্তান হিসেবে গাত্রোখান তথা অন্যায়মূলক আচরণ করে তবে ওই ব্যক্তির জন্য জাহান্নামের ২টি দরজা খুলে যায়। আর যদি তাঁদের মধ্যে একজন জীবিত থাকে তবে (জাহান্নামের) একটি দরজা খুলে দেয়া হয়।
এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলো যে, ‘যদি তাঁরা ওই সন্তানের ওপর জুলুম করে, তবুও কি? প্রিয়নবি বললেন, ‘হ্যাঁ’ যদি তাঁর ওপর জুলুম করেন; তবুও।’ (বায়হাকি; শুআবুল ঈমান)
মনে রাখতে হবে-
দুনিয়া ও পরকালের মুক্তি ও সফলাতার একমাত্র মাধ্যম হলো পিতামাতা। পিতামাতার অবাধ্যতার শাস্তি দুনিয়াতেই হয়ে যায়। তাই পিতামাতার অবাধ্যতা নয়; আনুগত্যই হোক প্রত্যেক সন্তানের একান্ত কামনা। চাই পিতামাতা সন্তানের প্রতি সন্তুষ্ট হোক বা জুলুম করুক।
পরিশেষে…
আল্লাহ তা্আলা মুসলিম উম্মাহকে সর্বাবস্থায় পিতামাতার খেদমত করার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এক মার্কিনী মসজিদে গুলি করতে গিয়ে উল্টো ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন
প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে কানেটিকাটে নিজের বাড়ির কাছের মসজিদে গুলি ছুঁড়েছিলেন সাবেক মার্কিন সেনা টেড হ্যাকি। ২০১৫ সালে এই কাজ করার পরই পাল্টে যায় তাঁর জীবন। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যম বিবিসি একটি ভিডিও প্রকাশ করে, সেখানে দেখা যায়- কানেকটিকাট মসজিদের ভেতরে তার মুসলিম প্রতিবেশীদের পাশে টেড হেকি হাঁটু পেতে প্রার্থনায় মগ্ন।
২০১৫ সালের ১৩ তারিখ শুক্রবার রাতে প্যারিসে সন্ত্রাসী হামলার রাতে, ৪৮ বছর বয়সি হেকি স্থানীয় বারে ড্রিংক করে। সকালে তিনি বাড়িতে গিয়ে রাইফেল লোড করেন। তার বাগানে গিয়ে মসজিদের পাশে কয়েক রাইন্ড রাউন্ড গুলি ছুড়েন। তাকে ঘৃণা করার পরিবর্তে বায়তুল আমান মসজিদের সভাপতি ডঃ মোহাম্মদ কুরআরী হেকি ও তার স্ত্রীর কাছে কি ঘটেছিল সে সম্পর্কে জানতে চান। হামলার পাঁচ মাস পর, কুরেশি তাকে মসজিদে আয়োজিত ‘সঠিক ইসলাম ও উগ্রবাদ’ শীর্ষক সেমিনারে আমন্ত্রণ জানায়।
হেকি এসে হাজির হলে মুসলিমরা স্বাগত জানালেন। হামলার কথা স্মরণ করে সে অনুতপ্ত হয়, অনুশোচনা জন্ম নেয় হ্যাকির অন্তরে। দুই পক্ষের আন্তরিকতা ছিল বিস্মিত হওয়ার মত।সকল ধর্মের মানুষ এই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন। সেখানে প্রকৃত ইসলাম ও উগ্রবাদ সম্পর্কে আলোচনা হয়। সে তার ভুল বুঝতে পারে এবং সবার কাছে ক্ষমা চায়। সবাই তাকে আন্তরিকভাবে ক্ষমা করে দেয়।
হেকি বলেন, আমি আসলে ইসলাম সম্পর্কে এতদিন ভুল ধারণার ওপর ছিলাম। ইসলাম কখনো সন্ত্রানী কর্মকাণ্ড করতে পারে না। পরবর্তীতে ছয় মাসের কারাদণ্ড হয় তার। জেলে থাকার সময় নিয়মিত দেখতে যেতেন মান্নান। এভাবেই তার জীবন পাল্টে যায়।