তারুণ্য মানেই উদ্যম, উচ্ছল, উচ্ছ্বসিত ভাব। আর সেভাবে জগতটাকে ঘুরে ঘুরে দেখার অপ্রাণ চেষ্টা করে তারা। আর শরত্ তো শুভ্রতার ঢেউ হয়ে তারুণ্যের জীবনেও দোল দেয়। এখন আর শীত-হেমন্ত নয়, সারা বছরই ঘুরে বেড়ানোর প্রবণতা দেখা যায় মানুষের মধ্যে। বর্ষা শেষে শরতের শুরুতে প্রকৃতি নিজের রূপের ডালি মেলে ধরে। এই সময় ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসেন এমন মানুষদের জন্য প্রকৃতির এক নয়নাভিরাম সৌন্দর্য-স্থলের খোঁজ জানিয়ে লিখেছেন
মো. জাভেদ হাকিম
প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পারি উজিরপুরের সাতলা বিলে ফুটেছে অজস্র লাল শাপলা। এ কথা জেনে আমিসহ দে-ছুট ভ্রমণ সংঘের চার বন্ধু প্রস্তুত হলাম তা দেখার জন্য। আমি বুড়িগঙ্গা পাড়ের মানুষ হলেও জাহাজ ভ্রমণ বরাবরই আমাকে বাড়তি আনন্দ দেয়। রাত ৯টায় সদরঘাট থেকে জাহাজ ছাড়ল। বরিশাল ঘাটে পৌঁছাব ভোর ৪টায়। এই দীর্ঘ সময় ফেসবুকিং, গল্প-গুজব আর ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম। জাহাজ সময়মতো পৌঁছাল। বাসের অপেক্ষায় দেরি না করে ঘাট থেকেই মাহেন্দ্রতে চেপে ছুটলাম। সাতলা বিলের ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে হলে যতটা সম্ভব ভোরে পৌঁছাতে হবে উজিপুরের নয়াকান্দী গ্রামে। সকালের ফাঁকা রাস্তার সুযোগে প্রায় দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাই নয়াকান্দী। সড়কের পাশেই খেয়া ঘাট। গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে নৌকায় বসলাম। দূর থেকেই চোখে ধরা দিল লাল শাপলার দল। ছোট নৌকা তরতর করে এগিয়ে যায়। যতই এগোয় ততই যেন চোখে মুখে মুগ্ধতা ভর করে। লাল শাপলার রাজ্য দেখে অবাক হয়ে তাকিয়ে রই।
মনে হয় পুরো সাতলা বিলই যেন ফরাসি লাল মখমলে ঢাকা। বিলের মাঝে একটা নিঝুম ভাব। মাঝেমধ্যে ছোট ছোট মাছের লম্পঝম্প। সাতলা বিলের চারপাশ এককথায় অসাধারণ। থৈথৈ পানির বুকে মাথা উঁচু করে থাকা, সবুজে ঘেরা বিচ্ছিন্ন বাড়িগুলোর সৌন্দর্য বেশ দৃষ্টিনন্দন।
মাঝি মতিলাল রায় জানালেন, আগে এখানে সাদা ও বেগুণি শাপলাও ফুটত। এখন আর সেসব শাপলা দেখা যায় না। তিনি প্রায় পঞ্চাশ বছর যাবত এই বিলে এরকম হাজার হাজার শাপলা ফুটতে দেখছেন তিনি। আগে তেমন পর্যটক আসত না। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রচুর দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক সুবিধাও বেড়েছে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে মানুষের আনাগোনাও বাড়তে থাকে। ধীরে ধীরে নৈঃশব্দ ভাবটা গিলে খেল হইচই করা পর্যটকদের বিচরণ। সেই সঙ্গে লজ্জায় যেন লাল টুকটুকে ফুলগুলোও নিজেদের গুটিয়ে নিতে থাকে। তবে আমরা গুটিয়ে যাওয়া ধরনের পর্যটক নই। এসেছি প্রকৃতির সান্নিধ্য লাভের জন্য। সুতরাং সময় থাকতে আরও নতুন কিছু খুঁজে দেখবই। এবার গ্রামটা ঘুরে দেখি। বরিশাল থেকে গোপালগঞ্জ যাওয়ার জন্য কচা নদীর উপর নবনির্মিত সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে এক অন্যরকম প্রকৃতির দেখা মিলল। কচা নদীর চারপাশে চোখ জুড়ানো সব প্রাকৃতিক দৃশ্য। মন জুড়ানো গ্রাম্য পথে হাঁটার সময় চোখে পড়ল, বিলের এক পাশটায় সাদা সাদা কী যেন ভাসছে। স্থানীয়রা জানাল ডেপ ফুল। আবারও নৌকায় করে সেদিকটায় গেলাম। দারুণ সেই দৃশ্য! সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া হেল্প পোস্টের কল্যাণে জানতে পারলাম এগুলো চাঁদমালা ফুল। ডেপ আঞ্চলিক নাম। সত্যি বলতে কী, আমরা এই ফুল আগে কখনো দেখছি তো দূরে থাক, নামই শুনিনি। নাম যেমন চাঁদমালা, পানিতেও ভেসে আছে মালার মতোই। চাঁদমালা দেখতে পাওয়াটা ভ্রমণে আমাদের বাড়তি আনন্দ দিল। বেলা বাড়ার সাথে সাথে আমরাও ফেরার পথ ধরলাম।
কি ভা বে যা বে ন
বাসে ও জাহাজে দুভাবেই যাওয়া যায়। প্রতিদিন রাত ৮টা ৩০মিনিট থেকে ৯টা পর্যন্ত বেশ কয়েকটা বিলাসবহুল লঞ্চ সদরঘাট থেকে বরিশালের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। লঞ্চ টার্মিনাল থেকে রিজার্ভ মাহেন্দ্র অথবা নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে বাসে যেতে হবে উজিরপুর উপজেলার হারতার নয়াকান্দী। বাস ছাড়ে সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে।
ভা ড়া
জাহাজে ডেকে জনপ্রতি ১৫০ টাকা ও কেবিন ১,০০০ টাকা হতে ৫,০০০ হাজার টাকার ওপরে। মাহেন্দ্র সারাদিনের জন্য ২,০০০ টাকা। নৌকা ভাড়া দরদাম করে নেওয়াই শ্রেয়।
ভ্র ম ণ ত থ্য
লাল শাপলার সৌন্দর্য বর্ষায়। ফুটন্ত শাপলা দেখতে হলে সকাল ৮টার মধ্যেই পৌঁছাতে হবে। খাবারদাবারের জন্য তেমন কোনো সুব্যবস্থা নেই। সুতরাং বরিশাল শহরেই সব সারতে হবে।
আ র ও কী কী দে খ বে ন
সাতলা বিলের পাশেই কচা নদীর ওপর নব নির্মিত ব্রিজে উঠে দেখতে পারেন নয়নাভিরাম নৈসর্গিক দৃশ্য। এছাড়া দেখতে পারেন দৃষ্টিনন্দন গুঠিয়া মসজিদ, ঐতিহাসিক দুর্গাসাগর দীঘিসহ কীর্তনখোলা নদীর তীরে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিস্তম্ভ।