প্রেমের টানে ইউক্রেন থেকে আরামবাগে তরুণী

প্রেমের টানে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রেমের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে । এবার ঘটল আরো ব্যতিক্রমি ঘটনা। ফেসবুকে পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় হয় ইউক্রেনের তরুণী লোপাচুক নাদিয়ার।

ধীরে ধীরে সেই সম্পর্ক প্রেমে রূপ নেয়। এখানেই শেষ নয়, তাদের ইচ্ছা ছিল বিয়ে করে সংসার করারও। সংসার করার আশায় সে তার দেশকে ছেড়ে চলে আসে যুবকের কাছে । এসে তরুনী জানতে পারল স্বপ্নভঙ্গের কথা।

ভারতীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিনের খবর, প্রেমিকা লোপাচুক হঠাৎ জানতে পারেন তার ভালবাসার মানুষটা অসুস্থ। খবর পেয়ে আর নিজেকে আটকে রাখতে পারেননি। সুদূর ইউক্রেন থেকেই ছুটে এসেছিলেন হুগলির আরামবাগে।

কিন্তু তারপরই হল স্বপ্নভঙ্গ। জানতে পারলেন যাঁর টানে এতদূর থেকে অজানা-অচেনা দেশ থেকে ছুটে এসেছেন, সেই প্রসেনজিৎ কর্মকার আসলে প্রতারক। লোপাচুকের সঙ্গে ভারচুয়াল জগতে প্রেমালাপ জমিয়ে বাস্তবে অন্য একজনকে বিয়ে করে বসে রয়েছেন তিনি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আরামবাগের বাসিন্দা প্রসেনজিতের সঙ্গে ফেসবুকে লোপাচুকের পরিচয় হয়। ক্রমশ দু’জনের মধ্যে ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত চ্যাট চলত তাঁদের। আচমকা লোপাচুক জানতে পারেন প্রসেনজিতের মারাত্মক অসুখ হয়েছে। খবর পেয়ে নিজেকে আর আটকে রাখতে পারেননি বিদেশিনী।

সাত-পাঁচ না ভেবেই সুদূর ইউক্রেন থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতায় এসে পৌঁছান গত শুক্রবার। পরদিন কামারপুকুর হয়ে আরামবাগের একটি হোটেলে ওঠেন। সেখানে রাত কাটান।

রবিবার থেকে ওই হোটেলে থেকেই লোপাচুক তাঁর প্রেমিকের খোঁজ করতে থাকেন। মঙ্গলবার প্রেমিক প্রসেনজিতের দেখা মেলে। প্রসেনজিৎকে নিয়ে আরামবাগের হোটেলে হাজির হন লোপাচুক। ইতিমধ্যে দু’জনের কথাবার্তা চলাকালীন প্রেমিকা জানতে পারেন, প্রসেনজিৎ বিবাহিত।

গত ১৫ আগস্ট তিনি বিয়ে সেরে ফেলেছেন। এরপরই হোটেলের মধ্যে তুমুল বচসা শুরু হয়ে যায় দু’জনের মধ্যে। আশেপাশের বহু মানুষ কৌতূহলের বশে ভিড় করে হোটেলে।

শেষপর্যন্ত অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে খবর দেওয়া হয় আরামবাগ থানায়। বিকেলে আরামবাগ থানার পুলিশ এসে দু’জনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। পরে লোপাচুককে বুঝিয়ে কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। পুরো ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ইউক্রেনের বাসিন্দা।

ইংরেজি না পড়েও ইংরেজির মাষ্টার তিনি

মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ইংরেজী বিষয়য়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা ন্যূনতম স্নাতক দ্বিতীয় শ্রেণী/বিএড অথবা স্নাতক দ্বিতীয় শ্রেণীসহ সকল পরীক্ষায় দ্বিতীয় বিভাগ এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক পর্যায়ে পাঠ্য থাকার নির্দেশনা থাকলেও বাগাতিপাড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ইংরেজী শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম করার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযুক্ত ইংরেজী শিক্ষক জয়নুল আবেদিন ওরফে সেন্টু স্নাতক শ্রেণীতে ইংরেজী বিষয় না থাকা সত্ত্বেও সহকারী শিক্ষক (ইংরেজী) হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে চাকুরী করছেন। রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ কর্তাদের বাধ্য করার অভিযোগ করা হয়।

প্রধান শিক্ষকের করা লিখিত অভিযোগ স্মারক নং-বাগাতি/(৪৭৫)/২০১৭ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার প্রাচীনতম বিদ্যাপীঠ ও সদ্য সরকারী করণ প্রতিষ্ঠান বাগাতিপাড়া পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়’১৯৪৭ সালে স্থাপিত হয়।

২০০৩ সালে ওই বিদ্যালয়ের ইংরেজি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক আতিক হোসেন অবসর গ্রহণ করলে নতুনভাবে ওই পদে নিয়োগের সার্কুলার দেওয়া হয়। সে সময় ছয়জন আবেদনকারীর মধ্যে পাঁচজন প্রার্থী ছিল ইংরেজিতে স্নাতক।

তারপরেও তাদের মধ্যে কাউকে নিয়োগ না দিয়ে স্নাতক শ্রেণীতে ইংরেজি বিষয় না থাকা জয়নুল আবেদিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমনকি প্রথম পর্যায়ে এ বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি) ওমর আলীকে দেখানো হলেও পরে তাকে অসুস্থ দেখানো হয়।

অভিযোগে আরো বলা হয়, তৎকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের সভাপতি ও বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম আমজাদ হোসেন নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও নিয়োগ কমিটিতে নতুন বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব প্রাপ্ত উপজেলার বাঁশবাড়ীয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেন, সদস্য সচিব (প্রধান শিক্ষক বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) আব্দুল মজিদ ও অন্যান্য সদস্য নিয়োগ সম্পন্ন করেন।

তবে সে সময়ে বিএনপি নেতাদের চাপের কারণেই নিয়োগ কমিটি জয়নুল আবেদিনকে নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করে।

এদিকে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের ভিত্তি জেলা শিক্ষা অফিসার তদন্ত সম্পন্ন করে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু তিনি ওই তদন্তে কি পেয়েছেন এমন তথ্য গণমাধ্যমকর্মীদের জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন। কারণ ওই প্রতিবেদনের অফিস নথি প্রায় পনের দিন যাবৎ খুঁজে পাওয়া যায়নি জেলা শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে।

প্রধান শিক্ষক খালিদ হোসেন লিটন জানান, অভিযুক্ত ইংরেজি শিক্ষক জয়নুল আবেদিনের বিধিমোতাবেক স্নাতক পর্যায়ে পঠিত বিষয়ে ইংরেজি না থাকার পরেও তৎকালীন সময়ে অর্থের বিনিময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়োগ নেয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার অসদাচরণ করার অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত ইংরেজি শিক্ষক জয়নুল আবেদিন সেন্টুর স্নাতক পর্যায়ে পঠিত বিষয় ইংরেজি ছিলো না স্বীকার করে নিজেকে কথিত পত্রিকার সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বলেন, এতদিনের পুরনো বিষয় নিয়ে আর ঘাটা-ঘাটি করবেন না। আমি নিজেও একটি কাগজে লেখা-লেখি করি।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মতিউর রহমান শাহিন মোল্লা দাবি করেন, অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক জয়নুল আবেদিন সেন্টুর পঠিত বিষয় ইংরেজি না থাকলেও তৎকালীন বিএনপি সাবেক মন্ত্রী ফজলুর রহমান পটল ও স্থানীয় বিএনপির নেতা আমিরুল ইসলাম জামাল প্রভাব খাটিয়ে বিধি-বহির্ভূতভাবে নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করে।

আমি ওই ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় তার বেতন ভাতা বন্ধের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি তার এমপিও বাতিল করে পূর্বের সমুদয় বেতন ভাতার টাকা সরকারি খাতে ফেরতের ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার রমজান আলী আকন্দ বলেন, ইংরেজি বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগে বিধি মোতাবেক সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পাঠ্য থাকতে হবে। স্নাতক পর্যায়ে ইংরেজি বিষয়ে পাঠ্য না থাকলে নিয়োগ হবে না।

নিয়োগ কমিটি এমন কাউকে নিয়োগ প্রদান করলে তার জন্য দায়ী থাকবে। এমনকি এমপিও হলে তা বাতিল হতে পারে এবং সমুদয় অর্থ সরকারি কোষাগারে ফেরত দিতে হবে বলে জানান তিনি।