মাত্র চার দিন পর পবিত্র ঈদুল আজহা। এরই মধ্যে জমে উঠেছে ঢাকার ২৫টি ছোট-বড় পশুর হাট।
প্রতিদিনই বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে হাটে আসছে ট্রাক ভর্তি গরু-ছাগল। প্রতিদিনই হাটে গরুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চাহিদা দেশি গরুর। তবে অধিকাংশ ক্রেতাদের অভিযোগ হাটে পর্যাপ্ত গরু উঠলেও দাম গত বছরের তুলনায় ঢের বেশি। গরু প্রতি অন্তত ২০ থেকে ৪০ হাজার টাকা বেশি হবে।
অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি ও ভারতীয় গরু না আসায় দাম একটু বাড়তি। এখন বিক্রি একটু কম হলেও আগামী তিন দিন গরু-ছাগল বিক্রি বেড়ে যাবে মনে করছেন তারা।
রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়ামের পাশের খালি জায়গা, গোলাপবাগ, মেরাদিয়া ও আফতাবনগর সংলগ্ন বিভিন্ন গরুর হাট ঘুরে জানা গেছে, বেপারিরা তাদের পশুগুলো নিয়ে অনেকটা অলস সময় কাটাচ্ছেন। নিজেরা গল্প, আড্ডা ও রান্নাবান্না নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করেন। যেসব ক্রেতা হাটে আসছেন তারা দাম যাচাই-বাছাই করছেন বেশি। তাদের ধারণা কোরবানির আগের দিন ঠিকই দাম কমবে। হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে পুলিশ ও র্যাব। অনেক স্থানে ওয়াচ টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। মাঝে মাঝেই দু-একটি গরুভর্তি ট্রাক আসতে থাকে। ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এবারে ঢাকার হাটগুলোতে ২০ লাখের বেশি কোরবানির পশু ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা থেকে বিক্রেতা মাহবুব কমলাপুর হাটে বিক্রির জন্য ৩১টি গরু এনেছেন। গত বছর তেমন ভালো দাম না পেলেও এবার ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন তিনি। এরই মধ্যে ২টি গরু বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন, আগের বছর হাটে গরু বেশি ছিল। সে কারণে দাম ভালো পাইনি। কিন্তু এবার গরু গত বারের চেয়ে কম। ভারতীয় গরু না আসলে ভালো দাম পাব।
অন্য দিকে সরকারি একটি স্কুলের শিক্ষক এনায়েত হোসেন জানালেন, কোরবানির ঈদে ঢাকায় থাকা হবে। বন্ধু ও কলিগদের সঙ্গে কোরবানির গরু কেনার জন্য হাটে এসেছেন। তবে বাজেট ও সাধের সমন্বয় করতে কমলাপুর ও গোলাপবাগ হাট ঘুরেছেন। অনেক গরু উঠলেও দাম গত বারের চেয়ে বেশি। গত বছর যে গরুর দাম ৫০ হাজার সেটা ৭০-৮০ হাজার টাকা এবং লাখ টাকার গরুর দাম দেড় লাখ টাকা হাঁকা হচ্ছে।
তিনি বলেন, হাতে দুই তিন দিন সময় আছে। দাম কমার অপেক্ষায় আছি।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ঢাকায় মোট ২৫টি পশুর হাট চূড়ান্ত করেছে দুই সিটি করপোরেশন। এর মধ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মোট ১৫টি পশুর হাট চূড়ান্ত হয়েছে। সাতটি ইজারা ও আটটি খাস বা স্পট ইজারার ভিত্তিতে চূড়ান্ত করা হয়েছে।
ইজারা দেওয়া সাতটি হাট হচ্ছে মেরাদিয়া বাজার সংলগ্ন খালি জায়গা, উত্তর শাজাহানপুর খিলগাঁও রেলগেট বাজারের মৈত্রী সংঘের মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, জিগাতলার হাজারীবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, কামরাঙ্গীরচর ইসলাম চেয়ারম্যানের বাড়ির মোড় থেকে দক্ষিণ দিকে বুড়িগঙ্গা নদীর বাঁধসংলগ্ন খালি জায়গা, পোস্তগোলা শ্মশানঘাট সংলগ্ন খালি জায়গা ও শ্যামপুর বালুর মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা।
আর খাস (নিজেরাই খাজনা আদায় করবে) আটটি হাট হচ্ছে ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সামসাবাদ মাঠ সংলগ্ন সিটি করপোরেশনের খালি জায়গা, কমলাপুর লিটল ফ্রেন্ডস ক্লাব সংলগ্ন বালুর মাঠ ও কমলাপুর স্টেডিয়াম সংলগ্ন বিশ্বরোডের আশপাশের খালি জায়গা, শনিরআখড়া ও দনিয়া মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ধুপখোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউয়ার টেক মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, গোলাপবাগ মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা, দাওকান্দি ইন্দুলিয়া ভাগ্যপুর নগর (মেরাদিয়া মৌজা) লোহারপুলের পূর্ব অংশ ও খোলা মাঠ সংলগ্ন খালি জায়গা এবং ডেমরা আমুলিয়া মডেল টাউন ও আশেপাশের খালি জায়গা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকায় গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট ছাড়াও অস্থায়ী নয়টি হাট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া উত্তরা ১৫ নম্বর সেক্টরের ২ নম্বর ব্রিজের পশ্চিমে গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কের উভয় পাশের ফাঁকা জায়গা, মিরপুর ডিওএইচএসের উত্তর পাশের সেতু প্রোপার্টি সংলগ্ন খালি জায়গা, মিরপুর সেকশন-২ (ইস্টার্ন হাউজিং)-এর খালি জায়গা, মোহাম্মদপুর বুদ্ধিজীবী সড়ক সংলগ্ন (বছিলা) পুলিশ লাইনের খালি জায়গা, খিলক্ষেত বনরূপা আবাসিক প্রকল্পের খালি জায়গা, ৩০০ ফুট রাস্তার পাশে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার খালি জায়গা, ভাটারা (সাঈদনগর) হাট, তেজগাঁও শিল্প এলাকার পলিটেকনিক্যাল কলেজ মাঠ, উত্তরখান হাট এবং গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট।