সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের শনাক্তে কাজ করছে পুলিশ আইজিপি

পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, ছাত্র আন্দোলনে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য গোয়েন্দা পুলিশকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ওইসব ঘটনার ভিডিও ফুটেজ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষে তারা একটি প্রতিবেদন দেবেন। এরপর কারা সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেছে তা জানা যাবে।
গতকাল সকালে রাজধানীর ফুলবাড়িয়ায় পুলিশ সদর দপ্তরে আসন্ন ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এবং ঈদুল আজহায় পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিস্তারিত তথ্য জানাতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব বলেন। শোক দিবস ও ঈদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হলেও সাংবাদিকদের অধিকাংশ প্রশ্ন ছিল শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে।

আইজিপি বলেন, গত ২৯শে জুলাই কুর্মিটোলায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুইজন শিক্ষার্থী বাসচাপায় মারা যায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। তাদের সেই আন্দোলন যুক্তিযুক্ত ছিল। কিন্তু, দুঃখ্যজনক হলেও সত্য যে, তাদের সেই আন্দোলন হাইজ্যাক হয়ে যায়। একটি স্বার্থান্বেষী মহল ওই আন্দোলনকে ভিন্নখ্যাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় তারা নানারকম ভুয়া তথ্য দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়ায়। গুজব ছড়িয়ে তারা রাষ্ট্র ও সমাজকে অস্থিতিশীল করার অপকর্মে লিপ্ত হয়। পুলিশ ওই সময় শক্ত হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে।

পুলিশের উপস্থিতিতে গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে তারা কারা সাংবাদিকেরা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলে তিনি উত্তরে বলেন, ছাত্র আন্দোলনে সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করার জন্য গোয়েন্দা পুলিশে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজ ও বিভিন্ন পত্রিকার প্রকাশিত ছবি পর্যালোচনা চলছে। ডিবির অতিরিক্ত কমিশনারের নেতৃত্বে একটি টিম মাঠে কাজ করছে। তদন্ত শেষে আমরা বলতে পারবো কারা সাংবাদিকের ওপর হামলা করেছে। সাংবাদিকদের পাশাপাশি পুলিশও ওইসময় আক্রমণের শিকার হয়েছে। রাজারবাগ, মিরপুরে পুলিশের পিওএম, কাফরুল থানায় হামলা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। রাজধানীর বিভিন্নস্থানে পুলিশের সঙ্গে অংশ নেয়া লাঠি ও হেলমেট পরা যুবকেরা কারা অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি পুলিশ নিজ হাতে মোবাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে। আমরা সেখানে কাউকে আসতে বলিনি।

সেইদিন ঘটনাস্থলে কারা এসেছিল আমরা জানি না এবং কাউকে চিনি না। তিনি আরো বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি চক্র বিভিন্ন ভুয়া তথ্য দিয়ে গুজব ছড়িয়েছে। ঢাকাসহ দেশের প্রত্যেকটি জেলায় সাইবার নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তরে একটি বিশেষ সেল খোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বিদেশ থেকে যারা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কী-না আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে হোক আর দেশের বাইরে হোক যারাই মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে রাষ্ট্র ও সমাজকে অস্থিতিশীল করবে তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কঠোর ব্যবস্থা নিবে। ইতিমধ্যে ২১টি মামলা হয়েছে। সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতিমধ্যে অনেক আইডি ব্লক করা হলেও তারা অন্য নামে আরেকটি আইডি খুলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে আমরা বলেছি যাতে বাংলাদেশে তাদের একজন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর রাখে।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, পলাতকদের মধ্যে দুজনের অবস্থানের তথ্য আমাদের কাছে আছে। তাদের একজন যুক্তরাষ্ট্র এবং আরেকজন কানাডায় আছেন। আমরা তাদের ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীসহ সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত আছে। সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি বলেন, আসন্ন ১৫ই আগস্ট পুলিশ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ওইদিন ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ১৫ই আগস্ট উপলক্ষে যেসবস্থানে ভোজের আয়োজন করা হবে সেখানেও পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেয়া হবে। ১৫ই আগস্টের পর ২১শে আগস্টের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ঈদুল আজহায় ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা পশু কোরবানি দিয়ে থাকেন। এই ঈদে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানে পশুর হাট বসে। সেই পশুর হাটকেন্দ্রিক বিশেষ নজরদারি গড়ে তুলবে পুলিশ। প্রত্যেকটি পশুর হাটের আশপাশে পুলিশের টহল অব্যাহত থাকবে। যারা পশুর হাট ইজারা নিয়েছেন তাদের আমরা বলবো পশু বিক্রয়ের হাসিলের হার যেন দৃশ্যমানভাবে টাঙ্গানো হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে হাটগুলোতে জাল টাকা রোধে মেশিন বসানো হবে। এ ছাড়াও সড়কে কোনোরকম যাতে চাঁদাবাজি না হয় সেইদিকেও পুলিশ খেয়াল রাখবে। মহাসড়কে আমরা কোনো ফিটনেসবিহীন যান চলতে দেবো না।

সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (এসবি) মীর শহীদুল ইসলাম, অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন ও অপারেশন) মো. মোখলেসুর রহমান, এডিশনাল আইজিপি (অর্থ) মইনূর রহমান চৌধুরী, পুলিশের ডিআইজি (অপারেশন) ব্যারিস্টার মাহাবুবুর রহমান, ডিআইজি (মিডিয়া) এসএম রুহুল আমীন, ডিআইজি (হাইওয়ে) আতিকুল ইসলাম ও পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) মো. সোহেল রানা প্রমুখ।