দৈনিক সমকাল সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তি সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার আর নেই। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতরাত ৯টা ২৫ মিনিটে মৃত্যুবরণ করেন তিনি (ইন্নালিল্লাহি …রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। হৃদরোগের পাশাপাশি নিউমোনিয়া ও ফুসফুসের জটিলতার কারণে দেশবরেণ্য সাংবাদিক গোলাম সারওয়ারকে ২৯শে জুলাই রাজধানীর ল্যাবএইড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানে পরিস্থিতির অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ৩রা আগস্ট মধ্যরাতে সমকাল সম্পাদককে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়।
পরদিন সকালে তাকে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেখানে চিকিৎসার পর তার শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতিও হয়েছিল। নিউমোনিয়া সংক্রমণ হ্রাসের পাশাপাশি ফুসফুসে জমে থাকা পানিও কমে গিয়েছিল। হার্টও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল। কিন্তু গত রোববার হঠাৎ করে তার রক্তচাপ কমে যায়। কিডনিও স্বাভাবিকভাবে কাজ করছিল না। এ অবস্থায় সোমবার বিকাল স্থানীয় সময় ৫টায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়। সেখানেই বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দৈনিক সমকালের নির্বাহী সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ওদিকে সমকাল সম্পাদককে দেখতে সোমবার দুপুরে হাসপাতালে যান সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোস্তাফিজুর রহমান। এ সময় তার সঙ্গে দূতাবাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও ছিলেন। এদিকে তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর সংবাদপত্র জগতে নেমে আসে শোকের ছায়া। গোলাম সারওয়ারের মৃত্যুতে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্পিকার শিরিন শারমীন চৌধুরী, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সাবেক তথ্যমন্ত্রী এবং বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম শোক জানিয়েছেন।
বরেণ্য সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার ১৯৪৩ সালের ১লা এপ্রিল বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তার সাংবাদিকতার জীবন শুরু হয় ১৯৬৩ সালে দৈনিক পয়গম দিয়ে। এরপর তিনি দৈনিক সংবাদ, দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক যুগান্তর ও দৈনিক সমকাল পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বানারীপাড়া ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশনে কিছুদিন প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োজিত ছিলেন।
১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে যোগদান করেন। ইত্তেফাকে ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত প্রধান সহসম্পাদক, যুগ্ম বার্তা সম্পাদক ও বার্তা সম্পাদক পদে কর্মরত ছিলেন। ইত্তেফাকে দীর্ঘ দুই যুগ কর্মরত থাকার পর ১৯৯৯ সালে দৈনিক যুগান্তরের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করেন দৈনিক সমকাল। আমৃত্যু তিনি দৈনিক সমকালের সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ সরকার দেশের সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য তাকে দেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান একুশে পদকে ভূষিত করে। এছাড়া তিনি ২০১৬ সালে কালচারাল জার্নালিস্টস ফোরাম অব বাংলাদেশ (সিজেএফবি) আজীবন সম্মাননা ও ২০১৭ সালে আতাউস সামাদ স্মারক ট্রাস্ট আজীবন সম্মাননা অর্জন করেন। সাংবাদিকতা ছাড়াও তিনি সেন্সর বোর্ডের আপিল বিভাগের সদস্য এবং সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি একাধিকবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের (পিআইবি) চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।