কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস সনদকে সাধারণ শিক্ষার স্নাতকোত্তর মাস্টার্স ডিগ্রির সমমান করে স্বীকৃতি দিতে আইনের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ‘কওমি মাদরাসাসমূহের দাওয়ায়ে হাদিস (তাকমিল)-এর সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান প্রদান আইন, ২০১৮’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম এ অনুমোদনের কথা জানান। এর আগে ২০১৭ সালের ১১ই এপ্রিল গণভবনে কওমি মাদরাসার আলেম-ওলামাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের সমমানের স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণা দেন।
এরপর কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিসের সনদকে মাস্টার্সের (ইসলামিক স্টাডিজ ও আরবি) সমমান দিয়ে একই বছরের ১৩ই এপ্রিল একটি আদেশ জারি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ। ওই আদেশে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাক)-এর সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফীকে প্রধান করে একটি কমিটিও গঠন করার কথা জানানো হয়। গত বছরের ১৩ই এপ্রিল জারি করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন তুলে ধরে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে নিয়ে একটি কমিটি করা হয়।
তারা কওমি মাদরাসা শিক্ষায় বোর্ডের মতো কাজ করবে। সেটাকে অনেকটা এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। এটি ১০টি ধারার একটি আইন। খসড়া আইনে বিভিন্ন বিষয়ে সংজ্ঞা দেয়া আছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কওমির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে- আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও দারুল উলুম দেওবন্দের আদর্শ মূলনীতি ও মতপথের অনুসরণে মুসলিম জনসাধারণের আর্থিক সহায়তায় ওলামায়ে-কেরামের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত ইলমে ওহীর শিক্ষা কেন্দ্র।
কওমি মাদরাসার দাওরায়ে হাদিস সনদকে মাস্টার্স ডিগ্রি সমমান দেয়ার বিষয়টি আগেই হয়ে আসছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন সেটাকে আইনের কাঠামোতে নিয়ে আসা হয়েছে। এখানে একটা বোর্ডের বিষয় রয়েছে। এটার নাম হচ্ছে- আল হাইয়্যাতুল উলিয়ালিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ। তিনি বলেন, এখন ছয়টি কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড আছে ওনাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায়। একেক এলাকায় একেকটি। বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ, বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গা বাংলাদেশ, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল বাংলাদেশ, আজাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লীম বাংলাদেশ, তানজিমুল মাদারিস দ্বীনিয়া বাংলাদেশ ও জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশ। বাংলাদেশে যত কওমি মাদরাসা আছে, সেগুলোকে এই ছয়টি বোর্ড নিয়ন্ত্রণ করে। এই ছয়টি বোর্ড নিয়ে আল হাইয়্যাতুল উলিয়ালিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ গঠন করা হবে।
এটাই হবে কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড। এর কার্যালয় হবে ঢাকায়। হাইয়্যাতুল উলিয়ালিল জামিয়াতুল কওমিয়া বাংলাদেশ-এর কমিটিতে ৯ ধরনের ব্যক্তি থাকবেন জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-এর চেয়ারম্যান হবেন কমিটির সভাপতি। কো-চেয়ারম্যান হবেন বেফাকুল মাদারিসিলের সিনিয়র সহ-সভাপতি। বেফাকের আরো ৫ জন সদস্য, এটা পদাধিকার বলে বেফাকের মহাসচিব বা বোর্ড নির্ধারণ করে দেবে। এছাড়া কমিটিতে বেফাকুল মাদারিসিল কওমিয়া গওহরডাঙ্গার ২ জন সদস্য, আঞ্জুমানে ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়ার ২ জন সদস্য, আযাদ দ্বীনি এদারায়ে তা’লিমের ২ জন সদস্য, তানজিমুল মাদারিসিল কওমিয়ার ২ জন সদস্য, জাতীয় দ্বীনি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বাংলাদেশের ২ জন সদস্য কমিটিতে থাকবেন। চেয়ারম্যান ইচ্ছা করলে কমিটিতে যেকোনো সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। তবে সেই সংখ্যা ১৫ জনের বেশি হবে না বলেও জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। ইতিমধ্যে যত সনদকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে সেগুলো এই আইন অনুযায়ী হয়েছে বলে গণ্য করা হবে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়া আইনে কমিটির কার্যক্রম ও কার্যকাল সম্পর্কে বলা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এই কমিটি সনদ বিষয়ে যাবতীয় কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী বলে বিবেচিত হবে।
এই কমিটির মাধ্যমে নিবন্ধিত মাদরাসাগুলো দাওরায়ে হাদিসের সনদ মাস্টার্স (ইসলামিক স্ট্যাডিজ ও আরবি) সমমান বিবেচিত হবে। কমিটিতে সরকারের কোন প্রতিনিধি নেই- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এটা আসলে কমিটি যেটা ছিল সেটাকে বোর্ড আকারে নিয়ে আসা হয়েছে। ছয়টি বোর্ডকে একীভূত করে বোর্ড করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাফিলিয়েশন ছাড়া মাস্টার্স ডিগ্রি কীভাবে দেয়া হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে শফিউল আলম বলেন, এটা একটি ব্যতিক্রমী বিষয়। এটা হলো মূলত কওমি মাদরাসায় পড়ালেখা করা প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থীকে মূলধারায় নিয়ে আসা। সরকারের এই কাঠামোতে নিয়ে আসার বিষয়টি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এরা কিন্তু সবাই সরকারের আওতার বাইরে। ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয় আছে। সনদ দেয়ার দায়িত্ব তাদের দেয়া যেত- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনে এ বিষয়ে কিছু বলা নেই, ভবিষ্যতে হয়তো বিবেচনায় আসতে পারে।