প্রধানমন্ত্রীর উপর বিশ্বাস রাখো: তারানা হালিম

প্রধানমন্ত্রীর উপর- বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় অন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দশ্যে তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম ফেসবুকে একটি আবেগঘন ভিডিও পোস্ট করেছেন।

সেখানে তিনি নিজের স্বজন হারানোর বেদনার কথা তুলে ধরেছেন। একইভাবে ১৭ জন স্বজন হারিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে দেশের জন্য কাজ করে চলেছেন সেই বিষয়টিও উল্লেখ করেছেন।

অন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কাজের প্রশংসা করে তারানা হালিম ভিডিও বার্তায় বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমরা এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। কাজেই আমরা বুঝতে পারি যে, সরকার এখানে খুব সৎভাবে দায়িত্বশীলতার সাথে ঐকান্তিকভাবে তার দায়িত্বগুলো পালন করছেন।

তারানা হালিম বলেন, ‘‘আমার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা, তোমরা জানো কিনা জানি না। আমার বড় বোনের ছোট ছেলে অর্ণব ঈদের একদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়।

তারপর থেকে এখন পর্যন্ত আমি, আমার বোন, বোনের বাচ্চারা, কোনো আনন্দ, উদযাপন এমনকি কারো জন্মদিন কোথাও আমরা আর যাই না। গেলেও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে আসি। আমরা এই কষ্টটা যতদিন বেঁচে থাকবো বহন করেই নিয়ে যাবো।

তোমাদের যে সহপাঠী দু’জনকে তোমরা হারিয়েছো, সড়কে যারা প্রাণ হারিয়েছে প্রত্যেকের পরিবার অাপনজনদের কষ্টটা আমাদের মতই একই রকম। আমরা চিন্তা করলাম যে, আর যেনো কারও এরকম না হয়।

কোনো বাচ্চা যেনো আর সড়কে প্রাণ না হারায়। তখন আমরা এমন একটা কাজ করতে চাইলাম যেটাতে কারও সমস্যা হবে না। কিন্তু আমরা আমাদের দাবিগুলো তুলে আনতে পারবো।

তখন আমরা ভিকটিমদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একটা সংগঠন করলাম ফ্যামিলিস ইউনাইটেড এগনেইস্ট রোড অ্যাক্সিডেন্ট। আমরা এ কাজটা যখন করেছি তখন কিছু মিডিয়াকে পাশে পেয়েছি এছাড়া আর কাউকে পাশে পাইনি। কিন্তু তোমাদের ভাগ্য ভালো তোমরা তোমাদের সহপাঠীদের পাশে পেয়েছো।

অার একটা জায়গায় আমার খুব খারাপ লাগে আমরা কোনো কথা বলতে গেলে, মানবিক জায়গা থেকেও কোনো কথা বলতে গেলে একটা কথা আসে সরকারের মন্ত্রীতো একথা বলবেই। আমরাতো আসলে আগে মানুষ। আমাদের আত্মীয়রা সড়কে প্রাণ হারালে আমাদের বেদনা কি কম হয় মন্ত্রী বলে? হয় না।

আমি তোমাদের শুধু একটি কথাই বলতে চাই। তোমরা যা করেছো এই অান্দোলনটা যৌক্তিক। এ থেকে অনেক উপকার হয়েছে, আমরা দেখেছি যে মানুষ এখন লাইন করে যাচ্ছে। তোমরা কাঁচ পরিষ্কার করেছো। এগুলো ভালো দৃষ্টান্ত।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী এমন একজন মানুষ, তিনি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। ১৭টা স্বজনের লাশ কাঁধে নিয়ে তিনি আমাদের জন্য কাজ করছেন এবং তোমাদের যে স্বজনরা চলে গেছেন এটার যে বেদনা সেটা তার মতো কে বুঝবে?

আমরা কিন্তু আমাদের পরিবার থেকে দেখি একজন স্বজনের লাশ কাঁধে নিয়ে আমরা চলতে পারছি না। বহন করা খুব কঠিন। উনি ১৭ জনের লাশ কাঁধে বহন করে চলছেন। উনিতো মানুষ। মানুষের জায়গা থেকে কেনো আমরা এটা ভাবি না?

প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন ছাত্র-ছাত্রীদের যে ছ’টি দাবি সেটি আমি মেনে নিয়েছি এবং আমি নির্দেশনা দিয়েছি। আমি তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন এবং আমরা এর প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি।

মন্ত্রীরা বলছেন যে, সড়ক নিরাপত্তার আইনটি মহান জাতীয় সংসদে উত্থাপিত হবে। তাছাড়া এই ঘাতক চালক গ্রেপ্তার হয়েছে। হেলপার গ্রেপ্তার হয়েছে। রিমান্ড নেয়া হয়েছে তাদের। ওই কোম্পানির যে রুট পারিমিট যেটা বাতিল করা হয়েছে।

কাজেই আমরা বুঝতে পারি যে সরকার এখানে খুব সৎভাবে দায়িত্বশীলতার সাথে ঐকান্তিকভাবে তার দায়িত্বগুলো পালন করছেন।

স্বজন হারানোর বেদনা আমাদের থাকবে। কিন্তু তোমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপর একটু বিশ্বাস রাখো। সত্যি করে বলছি এই মানুষটা অন্যরকম। উনি আমাদের দু:খগুলোকে ধারণ করেন। উনার উপর আস্থা রাখো। তোমরা সুস্থ্য থাকো তোমরা নিরাপদ থাকো।

তেমরা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়েছো। ভবিষ্যতে তোমাদের আরও অনেক কাজ করতে হবে সরকারের সাথে। তোমরা যদি ছোট ছোট গ্রুপে সরকারের সঙ্গে গিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে ড্রাইভারদের লাইসেন্স দেয়া হয় সেসময় যদি ছোট ছোট ওয়ার্কশপ করো। কীভাবে কী করতে হবে। তাহলে কিন্তু সড়কের এই নিয়মতান্ত্রিক বিষয়টি অনেক সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।

নিরাপদ সড়ক শুধু তোমাদের আমাদের জন্য নয়। এই দেশের জন্য দরকার। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দরকার আর সেটা করতে হলে আমাদের সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।’’