ঝরে গেল আরও ৭ তাজা প্রাণ

সড়কে ‘হত্যা’ বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেও থেমে নেই বাসচাপায় প্রাণহানি। আন্দোলনের বিপরীতে পরিবহন মালিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে রাজধানীর সড়ক গতকাল ছিল গণপরিবহনশূন্য। এর মধ্যেই মগবাজারে মোটরসাইকেল আরোহীকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে পিষে হত্যা করেছেন এক বাসচালক। তার আগে বেপরোয়া গতিতে চলা ওই বাস একটি রিকশা এবং পরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাকে ধাক্কা দেয়।
একইদিনে সন্ধ্যায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের ধামরাইয়ের জয়পুরা বাসস্ট্যান্ডে দুই বাসের সংঘর্ষে চারজন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন। সাভারের ভাকুর্তায় শিশুর মৃত্যু হয়েছে ট্রাকচাপায়। সকালে টাঙ্গাইলের সখিপুরে পিকআপ চাপায় নিহত হয় স্কুলছাত্রী।
গতকাল দুপুরে মগবাজারের ওয়্যারলেস এলাকায় নূরজাহান টাওয়ারের সামনের দুর্ঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলাম রানা (২৮) ঢাকা কমিউনিটি মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ‘ব্রাদার’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এ ঘটনায় আহত এক রিকশাচালক ও দুই যাত্রী স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। পরে ক্ষুব্ধ জনতা সাতক্ষীরা-ঢাকা রুটের এসপি গোল্ডেন লাইন পরিবহনের ওই বাসটি আটকিয়ে ভাঙচুর করে আগুনে পুড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে চালক ইমরান সর্দারকে (২৭) গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তার বাড়ি পিরোজপুরের কুমুড়িয়ায়।
নিহত রানার খালা রোখসানা বেগম জানান, গতকাল বেলা দেড়টার দিকে মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার দিয়ে নেমে আরামবাগের দিকে যাচ্ছিল গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাসটি। বেপরোয়া গতিতে চলা যাত্রীশূন্য ওই বাস প্রথমে একটি রিকশাকে ধাক্কা দেয়। এর পর রানার মোটরসাইকেলকে ধাক্কা দিলে তিনি ছিটকে রাস্তায় পড়েন। এ সময় না থেমে রানার ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেন চালক। ঘটনার পর চালক বাস নিয়ে পালাতে গিয়ে একটি সিএনজি অটোরিকশাকেও ধাক্কা দেয়।
রানার বাবার নাম শাজাহান আলী। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার শেরেবাংলা বাজারে। সপরিবারে তিনি খিলগাঁওয়ের উত্তর গোড়ানের হাড়ভাঙ্গা এলাকায় থাকতেন। দুই বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে রানাই ছিলেন তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যরা চোখে অন্ধকার দেখছেন বলে জানান খালা।
রমনা থানার ওসি কাজী মাইনুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার শিকার রানাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রথমে সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। পরে অবস্থার অবনতি ঘটলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বেলা সোয়া ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢামেক হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যেই গত পাঁচ দিনে সড়কে আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জে নিহত হয়েছে এক ছাত্র। রাজধানীর শনিরআখড়ায় বেপরোয়া পিকআপচালক আন্দোলনরত ছাত্রকে চাপা দিয়ে গুরুতর আহত করে। গতকালই বিমানবন্দর সড়কে উঁচু ফুটপাত টপকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার দেয়াল ভেঙে ফেলে একটি পিকআপ। এর কাছেই গত রবিবার বাসচাপায় নিহত হন কলেজশিক্ষার্থী দিয়া ও রাজীব।
ধামরাই প্রতিনিধি জানান, গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জয়পুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যাত্রীবাহী দুই বাসের সংঘর্ষে চার জন নিহত ও ৩০ জন আহত হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় জানাতে পারেনি পুলিশ। আহতদের ভর্তি করা হয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, অন্তত ৩৫ যাত্রী নিয়ে সূর্যমুখী পরিবহনের একটি বাস গাবতলী থেকে জয়পুরা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পৌঁছলে বিপরীত দিক থেকে আসা সেতু পরিবহনের বাসের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মৃত্যু হয় আরেকজনের। ধামরাই ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউস ইন্সপেক্টর সাহেব আলী বলেন, আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঁচজনকে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, সখীপুরের বড়চওনা বেলতলীবাজার এলাকায় গতকাল সকাল ৯টার দিকে পিকআপ চাপায় সাদিয়া আক্তার (১৫) নামে স্কুলছাত্রী নিহত হয়েছে। বড়চওনা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির সাদিয়া ওই এলাকার আজাহারুল হকের মেয়ে। প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে বেলতলীবাজার এলাকায় একটি পিকআপ তাকে চাপা দেয়। মুমূর্ষু অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। স্থানীয়রা পিকআপটি ভাঙচুর করে ১২ বছরের শিশু চালক তানভীর হাসান লাভলুকে পুলিশে দিয়েছেন। সাগরদীঘি-সখীপুর-ঢাকা সড়কে গাছ ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভও করেন তারা।