‘একলগে এত্ত কবর খুঁড়মু কুনুদিন ভাবি নাই!’

মঙ্গলবার দুপুরে বর্ষার পানিতে ডুবে যাওয়া একটি টঙ দোকান উঠিয়ে অন্য স্থানে সরিয়ে নেওয়ার সময় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় আটজনের। তারা হলেন-কাদাই গ্রামের মেঘা শেখের ছেলে আব্দুস সাত্তার (৫০),

তার ভাতিজা আব্দুল হামিদের ছেলে ছানোয়ার হোসেন (২৫), আবু তাহেরের ছেলে আব্দুল্লাহ (১৩), কাসেমের ছেলে মমিন (৩০), আব্দুল আলীমের ছেলে সজীব, আমিনুলের ছেলে রাজু (১৪), আবুল হোসেনের ছেলে হাবিব (২৪) ও মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে রফিকুল (৩০)। নিহতদের মধ্যে চারজন তাঁত শ্রমিক, একজন ব্যবসায়ী ও তিনজন ছাত্র। সন্ধ্যায় জানাজার নামাজ শেষে তাদের কাদাই কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সন্ধ্যার দিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কালিয়া হরিপুর ইউনিয়নের কাদাই কবরস্থানে পাশাপাশি আটটি কবর খোঁড়ার সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে ৭০ বছরের ওমর আলী শেখ ও তার সহকর্মীরা বলছিলেন,

‘প্রায় চল্লিশ বছর ধইর‌্যা কবর খুঁইড়া আইসত্যাছি। এমন অবস্থায় পরমু কুনদিন ভাবি নাই। একদিনে এত্ত কবর খোঁড়ার মানুষও এই গাঁয়ে আছিল না। আল্লায়ই পাঠাইয়্যা দিলো।

আশপাশের গেরাম থেইকা পরায় (প্রায়) ২৫ জন মানুষ আইলো কবর খুঁড়তে’ । কবর খুঁড়তে খুঁড়তে ওমর আলী বলেন, বুকে পাথারচাপা দিয়্যা কবর খোঁড়ার কাম কইরত্যাছি। হেই দুপুর থেইক্যা আমরা একসাথে কবর খোঁড়া শুরু করছি।

এই গাঁয়ে আমিসহ সাত/আটজন কবর খোঁড়ার কাম করি। আমাগোরে পক্ষে এতো কবর খোঁড়া সম্ভব ছিল না। আমরা কাম শুরু করার সাথে সাথে বাঐতারা, ছাতিয়ানতলী,

দিঘলকান্দি মুলিবাড়ীসহ আশপাশের চার/পাঁচ গ্রামের প্রায় ২২/২৫ জন কবর খুঁড়িয়েরা আসছে আমাগোরে সাহায্য করে।মুলিবাড়ি গ্রামের কবর খুঁড়িয়ে খোকন শেখ, বাঐতারার আব্দুল মোমিন ও কাদাইয়ের আনোয়ার হোসেন বলেন,

জীবনে অনেক কবর খুঁড়ছি। অনেক অভিজ্ঞতা আছে আমাদের। কিন্তু এক সাথে আটটি কবর খননের অভিজ্ঞতা এখানকার কারো নাই। মর্মান্তিক এ ঘটনার কথা ভাবতেই চোখে পানি চলে আইসতেছে।