এবার নিজের সেই হাসির ব্যাখ্যা দিয়ে যা বললেন নৌমন্ত্রী!

দিন দিন নিত্যদিনের যাত্রা পথের সঙ্গী বাসের নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে। এখন প্রায়ই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গান যাত্রীদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে পাবলিক বাসে। যেন যাত্রীদের পাবলিক বাসে চড়াই এখন অনিরাপদ। তার চেয়েও ভয়াবহ ব্যাপার এখন রাস্তার পাশে থাকলেই যেন বিপদ হাতে নিয়ে ঘুরতে হয়। আর তারই খেসারত দিল দুই কলেজ ছাত্র। আর এই বিষয় নিয়ে মন্ত্রীর মন্তব্য পড়েছে তোপের মুখে।

গত রবিবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় বাসচাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু আর বাসের দরজার ধাক্কায় রক্তাক্ত তরুণীকে মৃত ভেবে নদীতে ভাসিয়ে দেয়া নিয়ে সেদিনই সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। আলোড়ন তোলা মর্মান্তিক দুটি প্রশ্নই এড়িয়ে যান মন্ত্রী।

সেদিন সচিবালয়ে একটি অনুষ্ঠানে ব্যস্ত ছিলেন নৌমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা নেই। তারপরও সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান, তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি বলে।

মন্ত্রী শুরুতে বলবেন না বলেও পরে শুরু করেন কথা। এ সময় তিনি পুরোটা সময় হাসতে থাকেন। হাসতে হাসতেই তিনি বলেন, এ প্রোগ্রামের সঙ্গে কি এটা রিলেটেড? তবে আমি শুধু বলবো, দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের শাস্তি দেয়া হবে।

বক্তব্যের সময় মন্ত্রীর মুখের সেই চওড়া হাসির কারণে উঠে তুমুল সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্ত্রীর সেই বক্তব্যের সমালোচনা করেন অনেকেই।

যার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যুগপৎ আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি পেশ করে।

এ ব্যাপারে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করলেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? বরং এই পদে থেকেই সমস্যার সমাধান করা উত্তম। আমি সব সময়ই হাসি, আমার কালো মুখ কেউ দেখেনি। এটা কি দোষের? এ ঘটনায় আমার ক্ষমা চাওয়ার কথা না, তারপরও দুঃখ প্রকাশ করছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার ঘটনায় অবশ্যই দোষী ব্যক্তির কঠোর শাস্তি হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি, বাস চালকেরই দোষ। তবে তদন্তের পরই এর বিচার হবে। আমি আন্দোলনরত ভাই-বোনদের আশ্বস্ত করে বলতে চাই, অবশ্যই দায়ীদের বিচার হবে। দুর্ঘটনা রোধে আইনে সংশোধনী আনা হবে।’

পরে দুর্ঘটনায় দায়ী বাসটির রুট পারমিট বাতিল হবে কি না জানতে চাইলে শাজাহান খান বলেন, ‘বাসের রেষারেষিতেই এ দুর্ঘটনা। তবে তা ব্রেক ফেলের জন্য কী না, খতিয়ে দেখা হবে। দোষী যেই হোক না কেন, এ অপমৃত্যুর বিচার হবেই। এ দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আগামীকাল মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে বৈঠক করব। বৈঠকে এ বিষয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তিনি আর বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সড়ক দুর্ঘটনা রোধের জন্য তিনটি মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমি যেহেতু পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে জড়িত, তাই এটা অবশ্যই আমার দায়িত্ব। আমি দুর্ঘটনা কমিয়ে বিভিন্ন সেক্টরে শান্তি ফিরিয়ে এনেছি। গার্মেন্টস সেক্টরের জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করেছি।’

এ সময় পরিবহন শ্রমিকদের সাফাই গেয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের সময় ছাত্র ভাই-বোনরা রাস্তায় ছিলেন না। সে সময় মানুষের স্বার্থে পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি নামিয়েছে, চালিয়েছে, বিএনপি-জামায়াতের হামলায় আহত, নিহত হয়েছেন। জ্বালাও-পোড়াওয়ের প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিকদের অবদানও কম নয়।’

শিক্ষার্থীদের অবরোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাদের বিক্ষোভ অমূলক বলব না। এটা তারা করতেই পারে। আমি ছাত্র ভাই-বোনদের বলব আপনারা শান্ত হোন, উচ্ছৃঙ্খল হবেন না। এ ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি দেওয়া হবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘মিনিবাস চালক যারা আছে তারা রাফটাফ গাড়ি চালায়। এটা আমার নজরে আছে। এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

জাবালে নুর মন্ত্রীর শ্যালকের গাড়ি কি না?- এ প্রশ্নের জবাবে শাজাহান খান বলেন, ‘১৯৬২ সাল থেকে আমরা গাড়ির ব্যবসা করি। তবে কোন গাড়ির মালিক কে, তা আমি জানি না। পাঁচ বছর আগে জাবালে নূরের পরিচালক ছিল আমার শ্যালক। সে এখন নেই।’

সড়ক দুর্ঘটনা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্ঘটনাপ্রবণ দেশের তালিকায় বিশ্বের মধ্যে ৯০ তম । ২০১৪ সালে যা ছিল ৯ নম্বরে।’

বাসচালকদের পক্ষে সাফাই গেয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘চালকদের বিচার হয় না এ কথা ঠিক না। এরইমধ্যে ১৩শ চালককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে।’

দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘আপনারা অপেক্ষা করেন, সরকার সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেবে। শ্রমিকদের আন্দোলনেরও কোনো সুযোগ থাকবে না।’

শাজাহান খান এ সময় সাংবাদিকদের জানান, প্রধানমন্ত্রী তার ওপর বিরক্ত, তাকে তিরস্কার করেছেন বলে ফেসবুকের যে খবর এসছে, তা গুজব।