গত রবিবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর কুর্মিটোলায় বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় তিন কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীদের গায়ের উপর গাড়িটির চালক বাসটি কিভাবে তুলে দেয়? মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনাটি কিভাবে ঘটল? এমন প্রশ্ন এখন সবার মনে!
এই প্রশ্নের খোঁজে মাঠে নামে বিডি২৪লাইভের প্রতিনিধি। অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে তিনি দেখতে পান, দুই বাসের পাল্লাপাল্লিইতেই এই মর্মান্তিক ঘটনা।
দুর্ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেল, ক্যান্টনমেন্টে রমিজউদ্দিন কলেজে ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফেরার জন্য উত্তরার দিকে চলা বাসে উঠার অপেক্ষায় সড়কে দাঁড়িয়ে ছিল ছাত্ররা। আর অন্যদিকে কে কার আগে সেখানে পৌঁছে যাত্রী নেবে, এই প্রতিযোগিতা করে দুটি বাস। এর একটি সামলাতে না পেরে তুলে দেয় শিক্ষার্থীদের গায়ে।
এ ব্যাপারে দুর্ঘটনায় উপস্থিত থাকা শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। এসময় হঠাৎ নিজেদের মধ্যে পাল্লা দিতে গিয়ে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস কয়েকজনের গায়ের ওপর উঠে আসে। এরপরও বাসটি থামছিল না, একের পর এক শিক্ষার্থীকে পিষ্ঠ করে বাসটি দ্রুত গতিতে এগোতে থাকে।’
‘বাসটি প্রচণ্ড গতিতে ছিল। আমরা দেখিও নাই, বাসটি কোথা থেকে এলো। হঠাৎ পেছন থেকে আসে আমাদের মেরে দেয়।’
সেখানে উপস্থিত সজীব নামে আরেক সহপাঠী বলেন, ‘রেস চলছিল দুই বাসের মধ্যে কে আগে আসবে। পরে হঠাৎ একটি বাস এতো জোরে এসে আমাদের বন্ধুদের গায়ে উপর দিয়ে চলে গেল যা বলে বোঝাবার না। একটু দূরে কয়েকজন দাঁড়িয়ে ছিলাম বলে অল্পের জন্য আমরা বেঁচে গেছি।’
ঘটনা স্থলে নিহত মীমের একজন সহপাঠী জানান, প্রতিদিন এই ব্রীজের নিচে তারা দাঁড়ান বাসের জন্য। ঘটনাস্থলের রাস্তার পাশে একটি গাছ ছিল, সেখানেই ছয় জন দাঁড়িয়ে ছিল। বাসটি হঠাৎ দ্রুত গতিতে এসে ছয়জনকে উড়িয়ে নিয়ে যায় গাছসহ। ঘটনার সময় ১৬ জনকে আহত অবস্থায় কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর মধ্যে মিম ও রাজু ঘটনাস্থলে মারা যায়।
রাজীব নামে ওই কলেজের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা যে ওভারব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে থাকি সেখানে কোন স্ডি ব্রেকার নেই। এর আগেও অনেকে বাস চাপা পড়েছে কিন্তু কোন ব্যবস্থা হয়নি।’
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে এই দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা আহতদের নিয়ে যায় পাশের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। সেখানে মারা যান দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র রেজাউল করিম রাজু করিম ও একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম। এই হাসপাতাল থেকে পরে ছয় জনকে নেয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে সেখানে আরও একজন মারা যায়। বাকিদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা জাবালে নূর বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং শতাধিকের বেশি বাস ভাঙচুর করে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
ভিডিওটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন