সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের আবদুল কাদের সিদ্দিকী এবং ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপি সভাপতি অলি আহমদের সঙ্গে কী নিয়ে কথা হয়েছে, সেটা খোলাসা করেছেন ওবায়দুল কাদের।
এর মধ্যে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে কথার শুরু অন্য বিষয়ে হলেও জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। সিপিবি সভাপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে তিনি এটা নিশ্চিত হয়েছেন যে, আট বাম দলের নেতৃত্বে যে জোট হয়েছে, সেটি বিএনপির সঙ্গে যাবে না। আর অলি আহমদকে কাদের বলেছেন, কোথাও তিনি সভা সমাবেশ করলে যেন তাকে জানানো হয়।
এখন থেকে সভা সমাবেশ করতে ‘স্পেস’ পাবেন বলেও ২০ দলীয় জোট নেতাকে নিশ্চিত করেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। জানিয়েছেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ।
বরিবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রণালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
জোট সম্প্রসারণের কোনো সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নে কাদের বলেন. ‘এটা কেউ যদি আসতে চায় তাহলে আমরা আমাদের পরিসরে আলোচনা করব। আমাদের জোটের শরিকদের সাথে কথা বলে সেটা আমরা বিবেচনা করব।’
জোট বাড়ানোর বিষয়ে আওয়ামী লীগের ইচ্ছার বিষয়ে এক প্রশ্নে দলের নেতা বলেন, ‘আমরা চাইলেতো হবে না। তারা চাইতে হবে। চাওয়াটা তো আমাদের ওপর নির্ভর করবে না। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। তাদের সাথে কথাবার্তা বলেছি। এটা নিয়ে ফাইনালি কিছু হয়নি। যদি এটা কোনো মেরুকরণ বা স্ট্রেটিজিক্যাল কোনো এলায়েন্সের দিকে আগায় তাহলে সেটাতো গোপন থাকবে না।’
গত ২৪ জুলাই সিপিবি সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের সঙ্গে তার দলীয় কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন কাদের। সেদিনই তিনি জানান, এটি সৌজন্য সাক্ষাৎ, অন্য কিছু নয়। পরে সেলিমও একই কথা জানান ফেসবুকে।
দুই দিন পর সচিবালয়েই নিজ দপ্তরে কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আসেন আবদুল কাদের সিদ্দিকী, যিনি গত নভেম্বরে তৃতীয় শক্তি হওয়ার বাসনা করে বিকল্প ধারা, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যকে সঙ্গে নিয়ে গঠন করেন যুক্তফ্রন্ট। অবশ্য পরে এই জোট ছেড়ে দেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ নেতা।
কাদেরের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর কী কথা?
১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ ছেড়ে নতুন দল গঠন করে বিএনপির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করা কাদের সিদ্দিকীই আগামী নির্বাচকে সামনে রেখে পুরনো দলে ফিরতে বা সম্পর্ক গড়তে চাইছেন বলে কয়েকদিন ধরে কথা হচ্ছিল। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে কাদেরের কাছে যান তিনি।
কাদের জানান, তার মন্ত্রণালয়ের কাছে ‘কিছু পাওনা আছে’ কাদের সিদ্দিকীর। এগুলোর পাশাপাশি জোট নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, ‘কাদের সিদ্দিকির সাথে আলোচনার বিষয়টি একেবারেই রাজনৈতিক নয়। আমাদের একটা সম্পর্ক আছে। তিনি বাংলাদেশের একজন বীর উত্তম মুক্তিযোদ্ধা। তাছাড়া তিনি একসময় আমাদের মন্ত্রণালয়ে কাজ করতেন। কনস্ট্রাকশনের কাজের সাথে জড়িত ছিলেন। এখানে ওনার কিছু পাওনা আছে। সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
‘আমি বলেছি আপনার যেটা পাওনা আছে সেই বিষয়ে যে কাগজপত্র আছে তা আমার পিএস এর কাছে দিতে। যেটা পাওনা আছে সেটাতো দিতে হবে।’
তবে রাজনৈতিক আলোচনা হয়েছে, সেটিও জানাতে ভুলেননি কাদের। বলেন, ‘ফাঁকে ফাঁকে তো রাজনৈতিক বিষয়ে আলোচনা হয়েছেই। রাজনীতি বিষয়ে জোট বিষয়ে ইত্যাদি কথাবার্তাতো হয়েছে। তবে আমরা কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছিনি।’
সিপিবির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা যা নিয়ে
গত মঙ্গলবার হঠাৎ করেই কাদেরের সিপিবি কার্যালয়ে যাওয়া নিয়ে যে গুঞ্জন উঠে, তাতে তিনি সেদিনই ‘পানি ঢালেন’ সৌজন্য সাক্ষাতের কথা বলে। তবে এই সাক্ষাতে কথা হয়েছে কী নিয়ে, সেটি নিয়ে বিস্তারিত জানাননি সেদিন। আজ বললেন সে কথা।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছি তার অফিসে যাব চা খেতে। সেদিন সেলিম সাহেব বিকালে যেতে বলেছেন। এর গেলাম কথা হলো। দেখা হয়েছে। কথাবার্তা হয়েছে।’
‘সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। হাইড অ্যান্ড সিক্রেটের বিষয় নয়। তারা তাদের জোট যে প্রগতিশীল বাম জোট আছে তারা তাদের মতো করেই তাদের অ্যালাইন্সে থাকবেন। তারা সেভাইে নির্বাচনে যাবেন। আর সে নির্বাচনে যাবেন তারা তাদের জোটগতভাবে।’
‘তবে তিনি (সেলিম) বলেছেন আমরা সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আমাদের স্পিরিটটা একই। একাত্তরের চেতনাটা আমাদের আছে থাকবে।’
বাম রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগ জোটে আনাতে কোনো চেষ্টা হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নও ছিল কাদেরের কছে। বলেন, ‘আমি কথা বলতে গেছি তাই বলে রাজনীতি কোনো কথা হবে না? একেবারেই প্রাথামিক পর্যায়ে আছে। তবে সিপিবি বলেছে তারা আওয়ামী জোটেও থাকবে না, বিএনপি জোটেও থাকবে না। এটা তারা ক্লিয়ারলি বলেছে। তারা তাদের আদর্শ ধারণ করে।’
‘কাদের সিদ্দিকির মেজাজও একরকই। আমাদের স্পিরিটিটা একই। আমি বলেছি অ্যালায়েন্স (জোট) করেন আর যাই করেন এ স্পিরিটট ধারণ করেই সব সিদ্ধান্ত নেন।’
এ সময় সেলিমের সঙ্গে একসঙ্গে ছাত্রলীগ করার স্মৃতিচারণ করে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে মিছিলের কথা উল্লেখ করেন কাদের। বলেন, ‘সেদিন আমরা একসাথে ছাত্রলীগে ছিলাম। কলাবাগান পর্যন্ত যেতেই আমরা খবর পেলাম জাতীয় চার নেতা কারাগারে হত্যা করা হয়েছে তার লাশ আত্মীয় স্বজনের কাছে দেওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হচ্ছে।’
‘অলি আহমদের সঙ্গে মিটিং এর স্পেইস নিয়ে আলাপ হয়েছে’
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি অলি আহমদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে বলে জানান কাদের।
‘অলি আহমদ সাহেবের সঙ্গে মিটিং এর স্পেইস এর বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কুমিল্লায় একটা মিটিংএ গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সেই ইস্যুতে আমি তার সাথে আলোচনা করেছি। বলেছি, আপনি নেক্সটে কোনো মিটিং হলে আমাকে জানাবেন। আমি আলাপ করে নেব সংশ্লিষ্টদের সাথে।’
‘ তাছাড়া এখন স্পেস দেওয়ার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা আছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় ও পুলিশের আইজির সাথে কথা বলেছি। আমি অলি আহমদ সাহেবকে বলেছি। আমরা রাজনীতি করি আমাকে জানাবেন যেকোনো জায়গায় মিটিং করতে চাইলে। আমি বিষয়টা নিয়ে কথা বলব।’