যে কৌশলে প্রেমিকার নতুন প্রেমিককে হত্যা করল স্কুলছাত্র!


টাঙ্গাইলের সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মোহাইমিনুল ইসলাম হামিম (১৬) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ১০ দিনের মাথায় চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে।

এ হত্যাকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া মূল আসামি ইমন আজ শুক্রবার (২৭ জুলাই) বিকালে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরিন মাহবুবের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে আদালতের বিচারক তা লিপিবদ্ধ করেন। প্রেমে ব্যর্থ হয়েই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আদালতকে জানায় ইমন।

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। একই সাথে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, নিহত হামিমের মোবাইল সেট ও সিমকার্ড পুলিশ উদ্ধার করে।

ইমন উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের পাছইরতা গ্রামের শামছুল হকের ছেলে।

নাগরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন বলেন, টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালতপাড়ার শফিকুল ইসলামের ছেলে টাঙ্গাইল সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মোহাইমিনুল ইসলাম হামিমের সাথে পাশের বাসার একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। ওই মেয়েকে হত্যাকারী ইমনও ভালোবাসতো। কিন্তু ইমন ওই মেয়েকে কখনও ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেনি।

সে হামিমের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। সে পরিকল্পনা করতে থাকে কিভাবে কখন হামিমকে হত্যা করা যায়। সেই সুযোগও তার কাছে চলে আসে।

ইমন হামিমের সাথে দেখা করে জানায়- তোমার ভালোবাসার মানুষটি নাগরপুর যাবে। তোমার সাথে দেখা করিয়ে দিব। তোমরা নাগরপুর ব্রিজসহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে পারবে।

অবশেষে ১৬ জুলাই নাগরপুরের পাচইরতা গ্রামে আসার জন্য হামিমকে ইমন ফোন করে। ফোন পেয়ে হামিম কোচিং করার কথা বলে নাগরপুরে চলে আসে। এসময় তাকে বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে ইমন। বিকালে হামিমের মা তার মোবাইলে ফোন করে কোথায় আছে তা জানতে চান। হামিম ঘারিন্দা রয়েছে বলে এবং প্রাইভেট পড়া শেষ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবে বলে তার মাকে জানায়।

এদিকে, ওইদিন রাত ৮টা বেজে গেলে হামিম টাঙ্গাইল চলে যাওয়ার জন্য ইমনকে তাগাদা দিতে থাকে। ইমন তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী তার কোমড়ের পেছনে একটি ছুরি নিয়ে হামিমকে পাছইরতা গ্রামের মহিসগাড়া ধান ক্ষেতের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে ইমন পেছন দিক থেকে হামিমের ঘাড়ে পরপর দুটি আঘাত করে। পরে গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। হামিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে শার্ট প্যান্ট দিয়ে হাত-পা বেঁধে ধানক্ষেতে ফেলে রেখে যায়। পরদিন খবর পেয়ে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় হামিমের পিতা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে নাগরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে নিহতের পিতা শফিকুল ইসলাম বলেন, একজন আসামি গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবে এই হত্যাকাণ্ড একজনের পক্ষে আদৌ ঘটানো সম্ভব কি না আমার সন্দেহ রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আরো যারা জড়িত রয়েছে আমি তাদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামিকে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, ১৬ জুলাই সোমবার হামিম তাদের টাঙ্গাইল শহরের আদালত পাড়ার বাসা থেকে স্কুলের উদ্দেশ্যে বের হয়ে আর ফেরেনি। পরদিন মঙ্গলবার সকালে নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের ইরতা এলাকা থেকে তার গলাকাটা লাশ উদ্ধার করা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই স্কুলছাত্রকে গলা কেটে এবং কুপিয়ে হত্যা করা হয়।