গত বুধবার (২৫ জুলাই) পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। দেশটির প্রায় ১০ কোটি ৬০ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের রায়ে সেখানে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত হয়। ব্যাপক বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে ভোটকেন্দ্রের ভেতরে-বাইরে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার সেনাসদস্যের বিতর্কিত উপস্থিতির মধ্যেই স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চলে ভোট।
পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচনের ভোটগ্রহণের ৪২ ঘণ্টা পর শুক্রবার (২৭ জুলাই) দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করে দেশটির নির্বাচন কমিশন।
এদিকে, মুসলিম লিগ ও পিপলস পার্টি এই নির্বাচনকে ‘পাতানো নির্বাচন’ আখ্যা দিয়ে ফল প্রত্যাখ্যান করলেও এ অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে কমিশন।
পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে ভিভিআইপি প্রটোকল অর্থাৎ কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ডন পত্রিকাকে জানান, বুধবারের নির্বাচনে ইমরানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করায় পাকিস্তানের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকে এই প্রটোকল দেয়া হয়েছে।
একই সঙ্গে ইমরান খান ও তার ইসলামাবাদের বানিগালায় তার বাসভবনের চারপাশে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইমরান খান বলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে গিয়ে উঠবেন না। তার মতে ওই বাসভবন ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অবকাশযাপন কেন্দ্র ভাড়া দিলে তা থেকে রাষ্ট্রের ভালো আয় হবে।
পুলিশের ডেপুটি ইন্সপেক্টর ওয়াকার আহমেদ চোহানসহ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইমরানের বাসভবনে গিয়ে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের সঙ্গে দেখা করেন। পুলিশের একটি দল তার বাসভবন ও তার আশেপাশের এলাকা ও পাহাড় পরীক্ষা করে দেখে।
পুলিশ জানায়, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট কর্মপদ্ধতি নেই। তবে যেহেতু ইমরান খান পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন এ কারণে তাকে ঘিরে, তার বাড়িতে এবং যেসব জায়গায় তিনি যাবেন সেখানে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
ইমরানের বাড়ির চারপাশে দেয়ালে ও গেটে কন্সার্টিনা ওয়্যার (বিশেষ ধরনের কাঁটাতার) লাগানো হয়েছে। বাড়ির চারপাশে পুলিশ বিশেষ করে সামনের গেটে তিন স্তরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
একটি অ্যাম্বুলেন্স, প্যারামেডিক দল এবং অগ্নিনির্বাপক দলও মোতায়েন করা হয়েছে ইমরানের বাড়ির বাইরে।
বাড়ি পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তা, এর চারপাশের এলাকা এবং গাছপালা ঘেরা জায়গায় পুলিশকে টহল দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। পুলিশের আরেকটি দল মোটরসাইকেলে করে ওই এলাকা টহল দেবে।
আশেপাশের পাহাড়ি এলাকায় রেঞ্জার্স অবজারভেশন পোস্ট বা কাঠের উঁচু মাচান তৈরি করতে বলা হয়েছে, যেন ওইসব পোস্ট থেকে ইমরানের বাড়ি সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা যায়।
তার বাড়িতে যাওয়ার রাজপথে ইসলামাবাদের ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে যেন ওইসব রাস্তায় সবসময় গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক থাকে।
এছাড়াও বানিগালার বাসভবনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ওই এলাকাকে একজন ভিভিআইপির জন্য যথেষ্ট নিরাপদ করতে রিপোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আরও ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ইমরান খান চলাচল করার সময় তার সঙ্গে সবসময় কমান্ডোদের তিনটি গাড়ি তাকে সামনে ও পেছনে থেকে সুরক্ষা দিবে।