প্রেমে ব্যর্থ হয়ে হামিমকে হত্যা করে ইমন

টাঙ্গাইলের সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মোহাইমিনুল ইসলাম হামিম(১৬) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের ১০ দিনের মাথায় পুলিশ চাঞ্চল্যকর এর রহস্য উদঘাটন সহ একমাত্র ঘাতক ইমনকে গ্রেপ্তার করেছে।

গত বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইল শহরের আকুরটাকুর পাড়া থেকে ইমনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একইসাথে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুড়ি, নিহত হামিমের মোবাইল সেট ও সিম কার্ডও উদ্ধার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারের পর ঘাতক ইমন শুক্রবার দুপুরে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নওরিন মাহবুবের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দেয়। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে আদালতকে জানায়। ইমন নাগরপুর উপজেলার সহবতপুর ইউনিয়নের পাছ ইরতা গ্রামের শামছুল হকের ছেলে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নাগরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাইন উদ্দিন জানান, টাঙ্গাইল শহরের পূর্ব আদালত পাড়ার শফিকুল ইসলামের ছেলে টাঙ্গাইল সৃষ্টি একাডেমিক স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র মোহাইমিনুল ইসলাম হামিমের সাথে পাশের বাসার একটি মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ওই মেয়েকে হত্যাকারী ইমনও ভালোবাসতো। কিন্তু ইমন ওই মেয়েকে কখনও ভালোবাসার কথা প্রকাশ করেনি। সে ঈর্ষান্বিত হয়ে হামিমকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়ার ফন্দি আটতে থাকে।

পরিকল্পনা মোতাবেক হামিমের সাথে দেখা করে ইমন বলে তোমার ভালোবাসার মানুষটি নাগরপুর যাবে। তোমার সাথে দেখা করিয়ে দিব। তোমরা নাগরপুর ব্রিজসহ বিভিন্নস্থানে ঘুরতে পারবে। অবশেষে ১৬ জুলাই ইমন নাগরপুরের পাচইরতা গ্রামে আসার জন্য হামিমকে ফোন করে। ফোন পেয়ে হামিম কোচিং করার কথা বলে নাগরপুরে চলে আসে। তখন তাকে বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকে ইমন। বিকালে হামিমের মা তার মোবাইলে ফোন করে কোথায় আছে তা জানতে চায়। হামিম ঘারিন্দা রয়েছে এবং প্রাইভেট পড়া শেষ করে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরবে বলে তার মাকে জানায়।

এদিকে, রাত ৮টা বেজে গেলে হামিম টাঙ্গাইল চলে যাওয়ার জন্য ইমনকে তাগাদা দিতে থাকে। ইমন তার পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বাড়ি থেকে একটি ছুড়ি এনে কোমড়ের পেছনে নিয়ে হামিমকে পাছইরতা গ্রামের মহিসগাড়া ধান ক্ষেতের দিকে নিয়ে যায়। সেখানে ইমন পেছন দিক থেকে হামিমের গলায় ছুড়ি দিয়ে এবং ঘাড়ে পরপর দুটি আঘাত করে। পরে গলায় ও শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাত করে। হামিমের মৃত্যু নিশ্চিত করে শার্ট প্যান্ট দিয়ে হাত-পা বেধে ধান ক্ষেতে ফেলে রেখে যায়।

পরদিন খবর পেয়ে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় হামিমের বাবা শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করে নাগরপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

নিহতের বাবা শফিকুল ইসলাম বলেন, একজন আসামি গ্রেপ্তার হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবে এই হত্যাকাণ্ড একজনের পক্ষে আদৌ ঘটানো সম্ভব কিনা তা আমার সন্দেহ রয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে আরো যারা জড়িত রয়েছে আমি তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার (এসপি) সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ‘চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত মূল আসামি ইমনকে অল্প সময়ের মধ্যে আমরা গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।’