বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির মুখ থেকে প্রায় ২৩০ কোটি টাকার কয়লা চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত বড়পুকুরিয়া খনি কোম্পানির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বর্তমানে মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির এমডি এ এস এম নূরুল আওরঙ্গজেবকে ৪২ দিনের হজ পালনের ছুটি দিয়েছে পেট্রোবাংলা। কয়লা চুরির তদন্তের মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার এ ছুটি মঞ্জুর করা হয়।
আর গতকাল রাতে সদ্য বিদায়ী বড়পুকুরিয়ার এমডি প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিনকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে পেট্রোবাংলা। কয়লা চুরির ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে দিনাজপুরের পার্বতীপুর মডেল থানায় হাবিব উদ্দিনসহ ১৯ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছিল বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত সবাই খনি কোম্পানির বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা।
গত বুধবার সরকারকে দেওয়া তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ২০০৫ সালের সেপ্টেম্বর পর থেকে ১৯ জুলাই পর্যন্ত বড়পুকুরিয়ার সব এমডি ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অভিযুক্ত করেছিল পেট্রোবাংলা। তবে প্রতিবেদনে পেট্রোবাংলার কাউকে দায়ী করা হয়নি। অথচ বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কোম্পানির চেয়ারম্যান পেট্রোবাংলারও চেয়ারম্যান। কয়লা চুরির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ð পৃথক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটির আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
গতকাল পর্যন্ত হাবিব উদ্দিন ছাড়া অন্য কারও বিরুদ্ধে মামলাও করেনি খনি কর্তৃপক্ষ। অতীতের বাকি এমডি পদে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাসের এমডি হিসেবে কামরুজ্জামান দায়িত্ব পালন করছেন। এস এম নূরুল আওরঙ্গজেব মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানির এমডি। আর এম আমিনুজ্জামান কোনো সরকারি পদে না থাকলেও তিনি কয়লা উত্তোলনকারী চীনা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম মুঠোফোনে বলেন, কয়লা চুরির ঘটনায় পেট্রোবাংলা অভিযুক্ত। সে কারণে পেট্রোবাংলা গঠিত তদন্ত কমিটিতে তাদের কারও নাম আসবে না, সেটাই স্বাভাবিক। জ্বালানি এই বিশেষজ্ঞ পক্ষপাতমুক্ত কমিটি গঠনের পক্ষে মত দেন।
অভিযুক্ত সাবেক এক এমডিকে ছুটি দেওয়া নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দিনভর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের কার্যালয়ে এই প্রতিবেদকসহ বেশ কিছু সাংবাদিক অপেক্ষা করলেও তিনি কার্যালয়েই আসেননি। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানিসচিব আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের কাছে গতকাল সন্ধ্যার পরও কয়েক দফা মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁদের পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ১৯ জুলাই পর্যন্ত কয়লার মজুত ১ লাখ ৪৭ হাজার মেট্রিক টন থাকার কথা হলেও সেখানে কয়লা পাওয়া গেছে ৩ হাজার মেট্রিক টন। চুরি যাওয়া ১ লাখ ৪৪ হাজার টন কয়লার মূল্য ২৩০ কোটি টাকা।
কয়লা আমদানি করে কেন্দ্র সচল
জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। কয়লা আমদানি করে কেন্দ্রটি ফের চালু করার চিন্তা করছে সরকার। কয়লা চুরি হওয়ায় কেন্দ্রটি জ্বালানিসংকটে পড়েছে। জ্বালানির অভাবে গত রোববার রাতে কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার বড়পুকুরিয়ার বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (উন্নয়ন) প্রধান করে ১২ সদস্যর একটি কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এদিকে সৈয়দপুর, নীলফামারী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মজুত কয়লার গরমিলের ঘটনায় খনির ১৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পার্বতীপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলার নথি দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।