মৃত্যু এক চিরন্তন সত্য। মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই তো জীবন শেষ। মৃত্যু নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক শঙ্কা কাজ করে স্বাভাবিকভাবেই; কিন্তু মৃত্যু ঘটবেই, একে এড়িয়ে যাওয়ার কোনো উপায়ও তাই নেই। মৃত্যুর পর নশ্বর দেহতে কিছু পরিবর্তন ঘটে প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গেই। আজীবন বয়ে বেড়ানো শরীর মৃত্যুর পর প্রকৃতির সঙ্গেই মিশে যায় ধীরে ধীরে। মৃত্যুর পর মানবদেহের পর্যায়ভিত্তিক পরিণতির বিবরণ দেওয়া হয়েছে-
১. মৃত্যুর পর মস্তিষ্কের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এটি ঘটবে সেকেন্ডের ব্যবধানে।
২. শরীরের তাপমাত্রা শীতল হয়ে যাবে।
৩. অক্সিজেনের অভাবে কোষগুলোর মৃত্যু ঘটতে আরম্ভ করবে। সে সঙ্গে কোষগুলোয় ভাঙন ধরবে, যা পচন প্রক্রিয়ার আগ পর্যন্ত চলবে। এটি ঘটবে মিনিটের ব্যবধানে।
৪. শরীর প্রসারিত হওয়ার কারণে পেশির মধ্যে ক্যালসিয়াম তৈরি হতে থাকে। এটি ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত হয়। এটি ঘটবে ঘণ্টার ব্যবধানে।
৫. পেশিগুলো শিথিল হয়ে যায়।
৬. ত্বক শুষ্ক, সংকুচিত দেখায়। এর কারণে চুল ও নখ বড় হয়ে যাবে বলে মনে হবে।
৭. মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে রক্তে টান পড়বে। এতে করে শরীরের চামড়ায় কালশিটে পড়া বা অনেকটা দাগের মতো দেখা যাবে।
৮. শরীরের এনজাইমগুলো নিজেদের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো হজম করতে শুরু করে, প্রক্রিয়াটি ত্বরান্বিত করে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি। এটি ঘটবে দিনের ব্যবধানে।
৯. পচনশীল দেহের থেকে পিউট্রিসিন বা ক্যাডাভেরিন নামের রাসায়নিক উপাদান নির্গত হওয়ার কারণে দুর্গন্ধ তৈরি হবে।
১০. এক সপ্তাহের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ শরীর খেয়ে ফেলতে থাকবে। সপ্তাহের ব্যবধানে এটি ঘটতে শুরু করবে।
১১. শরীর বেগুনি থেকে কালো হয়ে যাবে, কারণ ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে শরীরের বিয়োজন অব্যাহত থাকবে।
১২. চুল ঝরতে শুরু করে।
১৩. চার মাসের মধ্যে বাকি রইবে শুধু কঙ্কাল, বাকি সবটাই মিশে যাবে মাটির সঙ্গে।
তবে সম্প্রতি ঘটল এক বিরল ঘটনা। মাদারীপুরের শিবচরের মাদবরচর এলাকায় দাফনের দুই বছর পর নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠু নামের এক ব্যক্তির অক্ষত লাশ উত্তোলন করেছেন তার পরিবারের লোকজন।
মঙ্গলবার বিকেলে তার লাশ উত্তোলন করা হয়। পরে দ্বিতীয় বার জানাজার নামাজ শেষে বাড়ির পাশে লাশটিকে দাফন করা হয়।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পদ্মা সেতুর রেলসংযোগ প্রকল্পের রেল লাইনের সীমানায় পড়ার কারণে নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠুর কবরটি অন্যত্র সরানো জন্য কবরটি খোঁড়া হয়। খোঁড়ার পর দেখা যায়, কবরে দাফনকৃত লাশটি সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এমনটি লাশে কোনো পচন ধরেনি। দাফনের সময় কাফনের কাপড়টি যেরকম ধবধবে ছিল ঠিক সেরকমই ধবধবে রয়েছে।
এ ঘটনা শুনে এলাকার সাধারণ মানুষ লাশটি দেখতে আসেন। পরে লাশটি উত্তোলন করে নতুন করে জানাজা নামাজ পড়ানো হয় এবং বাড়ির পাশে দাফন করা হয়। মৃত নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠু শিবচর উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদে থাকা অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতবরণ করেছিলেন।
নাজমুল হুদা চৌধুরী মিঠুর আত্মীয় মোশাররফ মুন্সী বলেন, মিঠু চৌধুরীর কবরের উপর দিয়ে রেলসেতু পড়ায় আমরা কবরটি অন্যত্র সরাতে খুঁড়ছিলাম। খোঁড়ার পর দেখি লাশটি সম্পূর্ণ অক্ষত। আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না; কীভাবে দুই বছর পর্যন্ত একটি লাশ অক্ষত অবস্থায় থাকে।
এ বিষয়ে জানতে মৃত মিঠু চৌধুরীর স্ত্রী নাদিরা চৌধুরীকে ফোন দিলে তার ফোন বন্ধ থাকায় মতামত জানা সম্ভব হয়নি।