ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চুমুর ছবি ভাইরাল, অবশেষে বোমা ফাটালো ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ

সপ্তাহব্যাপী অতিষ্ঠ গরমের পর ২৩ জুলাই নেমে আসে স্বস্তির বৃষ্টি। বৃষ্টিতে প্রকৃতি শীতল হয়ে এলেও সেই বৃষ্টিতে তোলা একটি ছবি নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) এক যুগলের চুম্বন দৃশ্য নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছে বিভিন্ন মহলে। সমালোচনাও কম হয়নি।

আর এই আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন ফটো সাংবাদিক জীবন আহমেদ।

২৩ জুলাই, সোমবার দুপুরে বৃষ্টিভেজা ক্যাম্পাসে ওই তরুণ-তরুণীর এমন একান্ত মুহূর্ত ক্যামেরায় ধারণ করেন জীবন আহমেদ। পরে তিনি ছবিটি ‘বর্ষা মঙ্গল কাব্য, ভালোবাসা হোক উন্মুক্ত’ ক্যাপশনে নিজের ফেসবুক পেইজে পাবলিক পোস্ট হিসেবে শেয়ার করেন।

বৃষ্টিস্নাত এই যুগলের ছবিটি ধারণ করার আগে বা পরে তাদের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না, বিশেষ করে এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যবহারের ক্ষেত্রে তাদের কোনো অনুমোদন আছে কি না এমন প্রশ্নও উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

এ বিষয়ে জীবন আহমেদ জানান, তিনি এই ছবিটি তোলার সময় বা ছবিটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা নিয়ে ওই জুটির কারো থেকে কোনো অনুমতি নেননি।

ছবিটি নিয়ে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর স্ট্যাটাস। ছবি: সংগৃহীত
ছবিটি নিয়ে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারীর স্ট্যাটাস

জীবন আহমেদ বলেন, ‘তবে ওই যুগল দেখতে পেয়েছেন যে তাদের ফ্রেমবন্দী করা হচ্ছে এবং ছবি তোলা হচ্ছে জেনেও এ বিষয়ে তারা কোনো আপত্তি জানাননি।’

আপত্তি না জানানোকে অনুমোদন ভাবা কতটা যৌক্তিক—এমন প্রশ্নের জবাবে জীবন বলেন, ‘পোস্টটি দেওয়ার সময় ভাবতেও পারিনি এটি এমনভাবে ভাইরাল হয়ে যাবে।’

পরে জীবন আহমেদ নিজস্ব অ্যাকাউন্ট থেকে ছবিটি সরিয়ে নিলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি।

‘নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িত’

কারো এমন ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি ধারণ এবং সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশের আগে ওই ব্যক্তির অনুমোদন নেওয়ার অবশ্যই প্রয়োজন ছিল বলে মত দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ফাহমিদুল হক।

ফাহমিদুল হক বলেন, ‘এ ধরনের ছবির কারণে ওই দুইজন সামাজিকভাবে নানা সমস্যার মুখে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে ছবি তোলার মুহুর্তে না হলেও, ছবিটি তোলার পর অবশ্যই তাদের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। কেননা, এই ছবির সঙ্গে ওই দুজনের নিরাপত্তার বিষয়টিও জড়িত।’

বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে একে অপরকে চুম্বনের এই ছবি নিয়ে ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পক্ষে-বিপক্ষে চলছে নানা মন্তব্য।

অনেকেই দুষছেন ফটোগ্রাফাকে।
অনেকেই দুষছেন ফটোগ্রাফারকে

অনেকেই বাংলাদেশের সামাজিক মূল্যবোধ টেনে নানা নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। ফটোগ্রাফারের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি জনসমাগম স্থানে এভাবে আবেগের বহিঃপ্রকাশের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন কেউ কেউ।

তাওহীদ নিশান নামের একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘একটা সম্পর্কের মধ্যে এমনটা হওয়া স্বাভাবিক। তবে সেটার প্রাইভেসিও থাকা উচিত।’

আতিকুর রহমান তমাল নামের আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘তারা কি চেয়েছেন, কেউ ছবি তুলুক আর সবাই সেটা ভাইরাল করুক? যদি না চান তাহলে আপনার উদারতা তাদের জন্য বিব্রতকর।’

আবার কেউ এই ছবিকে ভালোবাসার নিষ্পাপ অভিব্যক্তি আখ্যা দিয়ে প্রশংসা করেছেন।

অমিত শীল অমি লিখেছেন, ‘দুর্নীতি করলে কিছু হয় না, ফেসবুক সরগরম হয় ভালোবাসার প্রকাশ করলে।’

ফারজানা সুমনা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘রাষ্ট্র, সমাজ, ধর্ম ভালোবাসার কারণে রসাতলে যায় না। ঘৃণার কারণে যায়, বিবাদ-বিসংবাদের কারণে যায়।’

ছবিটি ফটোশপে তৈরি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন অনেকে। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
ছবিটি ফটোশপে তৈরি করা হয়েছে বলেও দাবি করেন অনেকে। ছবি: ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

এ ছাড়া ছবিটির সত্যতা নিয়ে জল ঘোলা কম হয়নি। অনেকেই কাছাকাছি সময়ে একই স্থান থেকে আরও কয়েকটি ছবি তুলে দাবি করেছেন যে, ছবিটির ব্যাকগ্রাউন্ড কয়েক লেয়ারে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এমন দাবি অস্বীকার করেছেন আলোকচিত্রী জীবন আহমেদ, তিনি জানান, এই ছবিটিতে কোনো ধরনের এডিট করা হয়নি। ছবিটি তুলতে তিনি বিশেষ ধরনের লেন্স ব্যবহার করেছেন, সে কারণে ব্যাকগ্রাউন্ডটা কিছুটা ভিন্নভাবে এসেছে।

জীবন আহমেদ এর আগেও বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায়ের ওপর হামলার পর ঘটনাস্থলের ছবি তুলে। তিনি সেই ছবি ধারণের পাশাপাশি অভিজিত রায় ও তার স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন।

সূত্র: বিবিসি বাংলা