আজ থেকে কমে যাবে ইন্টারনেটের গতি

আজ থেকে কমে যাবে- দেশের প্রথম সাবমেরিন কেবল ‘সি-মি-উই-৪’র মেরামত কাজ আজ বুধবার (২৫ জুলাই) থেকে আবার শুরু হচ্ছে। এবার সিঙ্গাপুরের খুব কাছে দ্বিতীয় ‘রিপিটার’ বদল করা হবে। এতে বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের ইন্টারনেট যোগাযোগ বিঘ্ন ঘটতে পারে। তবে বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) বিকল্প পথে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ইন্টারনেট যোগাযোগ রক্ষা করার কথা জানিয়েছে। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা বড় কোন ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন না। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অন্য সব কাজই সহজে করার ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসসিসিএল।

বিএসসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, আগামি ২৫ থেকে ৩০ জুলাই সিঙ্গাপুরে প্রথম সাবমেরিন কেবলের রিপিটার স্থাপন ও অন্যান্য মেরামত কাজ চলবে। তবে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ও আইটিসি থাকায় এ সময়ে ইন্টারনেটের গতির কোন সমস্যা হবে না। ইতোমধ্যে চেন্নাই থেকে ভারতী এয়ারটেল কেবলটির মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। কেবলটির ‘লাইফ টাইম’ ২০ বছর। এরমধ্যে ১৩ বছর পার হয়ে গেছে। বাকি আছে মাত্র ৭ বছর। কেবল যত পুরনো হয় মেরামতের কাজ তত বেশি করতে হয়। পুরনো কেবল মেরামতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। এই টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে কনসোটিয়ামকে। ১৬ দেশ প্রথম সাবমেরিন কেবলের মালিক।

মশিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল ‘সি-মি-উই-৪’ যুক্ত হয় ২০০৫ সালে। তখন এই কেবলের মাধ্যমে মাত্র ২৫০ জিবিপিএস (গিগাবিট পার সেকেন্ড) ব্যান্ডউইথ পাওয়া যেত। কেবলটি বার বার আপগ্রেড করা হচ্ছে। একটি মাত্র সাবমেরিন কেবল থাকার কারণে আমরা একটা ঝুঁকিতে ছিলাম। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চালু হয় বাংলাদেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন। এরপর থেকে এই ঝুঁকি অনেকটা কেটে যায়। কারণ একটি কেবল বিকল হলে অন্য কেবল দিয়ে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ ঠিক রাখা যাবে। এর বাইরে বেসরকারি উদ্যোগে সাবমেরিন কেবল ছাড়াও বাংলাদেশ এখন ছয়টি বিকল্প মাধ্যমে (আইটিসি বা ইন্টারন্যাশনাল টেরিস্ট্রিয়াল কেবল) ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাই কোন কারণে একটি কেবলে সমস্যা দেখা দিলে ভয়ের কিছু নেই। কারণ বিকল্প অনেক কেবল বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। ভারতে বেসরকারিভাবেই বেশ কয়েকটি কেবল আছে, যেগুলো আমরা সহজেই ব্যবহার করতে পারি। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্টেশনের মাধ্যমে সাউথইস্ট এশিয়া-মিডলইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ (এসইএ-এমই-ডব্লিউ-৫) আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামের সাবমেরিন কেবল থেকে সেকেন্ডে ১ হাজার ৫শ’ গিগাবিট (জিবি) গতির ইন্টারনেট পাওয়ার কথা রয়েছে। এটা পাওয়া গেলে দেশে ব্যবহার করে বিদেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ রফতানি করা যাবে।

বিএসসিসিএল জানিয়েছে, বিকল্প ব্যবস্থা থাকায় আন্তর্জাতিক ভয়েস এবং ডেটা ও ইন্টারনেট সার্ভিসে উল্লেখযোগ্য কোন সমস্যা হবে না বলেই কোম্পানি মনে করছে। তারপরও রক্ষণাবেক্ষণ কাজ চলাকালীন দিনগুলোতে ইন্টারনেট গ্রাহকগণ সাময়িকভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের সামান্য ধীরগতি বা এ ধরনের কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এ জন্য বিএসসিসিএল কর্তৃপক্ষ আন্তরিকভাবে দুঃখিত। তবে ইন্টারনেট সরবরাহে যাতে কোন সমস্যা না হয় সে দিকটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে।

সূত্র জানিয়েছে, সি-মি-উই-৪ চেন্নাইতে ‘রিপিটার’ পরিবর্তনের কাজ শেষ হওয়ার এক মাসের মাথায় সিঙ্গাপুরে রিপিটার বদলের কাজ শুরু হয়েছে। গত ১৮ মে চেন্নাইতে কেবলটির মেরামত কাজ হয়েছে।

তখনও ব্যান্ডউইথের সরবরাহ ঠিক রাখতে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের (এসইএ-এমই-ডাব্লিউই-৫) সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছিল। একই সঙ্গে কয়েকটি বিকল্প পথে প্রথম সাবমেরিন কেবলের ব্যান্ডউইথ সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল থেকে ১৫০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়। আপৎকালীন সময়ে বাড়িয়ে ২৪০ জিবিপিএস করা হয়েছিল। এবারও এমন প্রস্তুতি রয়েছে বিএসসিসিএলের।

উল্লেখ্য, সি-মি-উই-৪ কেবলের (সাউথ এশিয়া-মিডলিস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ) মালিক হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া ও ফ্রান্স। সি-মি-উই-৫ এর মালিক হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মালিকও এই ১৬ দেশ।