‘বৃষ্টি ভেজা প্রেম’ ভাইরাল ছবি তোলা সেই আলোকচিত্রশিল্পীকে মারধর!

বৃষ্টি ভেজা প্রেম- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় বৃষ্টিভেজা একটি যুগল ছবি তুলে রাতারাতি আলোচনায় চলে আসেন আলোকচিত্রশিল্পী জীবন আহমেদ। গতকাল সোমবার দিনব্যাপী ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় ছিল।

সাম্প্রতিককালের মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবচেয়ে ভাইরাল ছিল ছবিটি। কিন্তু সেই ছবি তোলার অপরাধে নিজের পেশার লোকদের হাতেই মারধরের শিকার হয়েছেন এই চিত্রশিল্পী- এমনতাই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবারের মারধরের ঘটনায় জীবন আহমেদ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আজ থেকে সাংবাদিকতা থেকে বিদায় নিলাম।’

জানা গেছে, টিএসসির যে স্থানে ছবিটি তোলা হয়েছে সেখানেই তাঁকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে জীবন আহমেদকে। লাঞ্ছনাকারীরা সকলেই আলোকচিত্রশিল্পী বলে জানা গেছে। একটি ইংরেজি দৈনিকের এক আলোকচিত্র সাংবাদিকেরও নাম যুক্ত রয়েছে এই ঘটনায়।

বিষয়টি নিশ্চিত করে জীবন আহমেদের সহকর্মী মাকসুদুল হক ইমু বলেন, আজ জীবন আহমেদকে মারধর করা হয়েছে। যারা মেরেছে তারাও একই পেশার সাথে যুক্ত। জীবনকে মারধরের সময় তাঁকে বলা হয়েছে এই পেশাকে নাকি জীবন কলঙ্কিত করেছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় আলোকচিত্রশিল্পী জীবন আহমেদের সঙ্গে। তিনি বিষয়টি সম্পর্কে প্রথমে কোনো কথা বলতে রাজি না হলেও এক পর্যায়ে বলেন, আমি কার বিরুদ্ধে কথা বলবো? তিনি বলেন, আমার পেশার লোকেরাই আমাকে মেরেছে। আমি কিছু বলতাম না তারা যদি আমাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে মারধর করতো। কিন্তু তারা আমাকে মেরেছে প্রকাশ্যে টিএসসিতে।

জীবন আহমেদ বলেন, আমাকে মারার সময় তারা আমাকে বলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নির্দেশে মারছে। আমি নাকি কলঙ্কিত করেছি আলোকচিত্রশিল্পী সমাজকে। কিন্তু প্রক্টর স্যার একটু আগে ফোন দিয়ে বললেন, এরকম নির্দেশনা তিনি দেননি দিতে পারেন না। আমিও জানি তারা গায়ের ঝাল মিটিয়েছে।

উল্লেখ্য, গতকাল জীবন আহমেদের তোলা আলোকচিত্রটি প্রথমে তার নিজস্ব কর্মরত অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়। এরপর তার ফেসবুক হ্যান্ডেল থেকে তা ছড়িয়ে পড়ে।

গতকাল জীবন আহমেদ ছবিটির বিষয়ে বললেন, কে কীভাবে নিলো সেটা তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মতামত থাকতেই পারে। যেকোনো ছবির ভালো খারাপ দুটি দিকই থাকে।

যে যেভাবে গ্রহণ করে। তবে এই ছবি বেশির ভাগ মানুষই ভালোভাবে গ্রহণ করেছে, এবং নির্মল ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই দেখছে। জীবন আহমেদ বলেন, প্রকাশ্য ভালোবাসায় নোংরামি থাকতে পারে না। ছবিটা দেখলে খেয়াল করবেন, তাদের শরীরী ভাষায় শুধুই ভালোবাসা এবং তাদের সততার বিষয়টাও স্পষ্ট।

‘ভালোবাসা বিশুদ্ধ এবং প্রকাশ্যই হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি,’ বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ফেসবুকে পোস্ট দেওয়ার সময় জীবন আহমেদ ছবিটি ট্যাগ দেন প্রচ্ছদ শিল্পী চারু পিনটুকে। এতে করে অনেকে মনে করেন ছবির পুরুষ লোকটা চারু পিনটু। জীবন আহমেদ জানান, ছবির লোকটা চরু পিনটু নন।

ছবি তোলার সময় চারু পিনটু তার সঙ্গে ছিলেন বলেই তাকে ট্যাগ দেওয়া হয়েছে। পূর্ব-পশ্চিম নামে একটি পোর্টালের ফটো সাংবাদিক জীবন এর আগে কাজ করেছেন ইত্তেফাক, বাংলার চোখ, নিউজ নেক্সট বাংলাসহ বেশ কিছু সংবাদ মাধ্যমে।

জীবন আহমেদ এর আগেও বেশ কিছু আলোচিত ছবি তুলেছেন। কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষকের সামনে আঙ্গুল নাচিয়ে হুমকি দেওয়ার ছবি, অভিজিৎ রায়ের রক্তাক্ত ছবিসহ বেশকিছু ছবি এর আগে ভাইরাল হয়েছে। তবে এই ছবিটি আগের সব ছবিকে ছাড়িয়ে গেছে বলে জানান তিনি।