খারাপ কাজ না করলে সুঁই দিত’

অনেক আশা নিয়ে সৌদিতে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন জোছনা (ছদ্মনাম)। কিন্তু প্রবাসে পৌঁছানোর পর একে একে তার স্বপ্নগুলো সব দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে লাগল। সৌদিতে একটি বাসায় সাত মাস ছিলেন জোছনা। কিন্তু সেখানে মালিকের স্ত্রী ও সন্তানরা জোছনার ওপর অকথ্য নির্যাতন চালান বলে অভিযোগ তার। নির্যাতনে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছেন না তিনি।

নির্যাতনের শিকার সৌদি ফেরত জোছনা আবেগ তাড়িত বলছিলেন তার কষ্টের কথা, ‘তারা আমার লগে খারাপ কাজ করতে চাইত। খারাপ কাজ না করলে সুঁই দিত। হাত মিলাইবার কথা কইয়া সুঁই (ইনজেকশন) দিত। যখন সুঁইগুলা দিত, তখন মাথা ঘুইরা পইরা যাইতাম, অজ্ঞান হইতাম; কিচ্ছু কইতে পারতাম না’

গত ২১ জুলাই, শনিবার রাত ৯টার দিকে এয়ার এরাবিয়ার একটি বিমানে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হওয়া ৪৩ জন নারী দেশে ফিরেছেন। তারা সকলে সৌদির ইমিগ্রেশন ক্যাম্পে ছিলেন। তাদের মধ্যে জোছনাও ছিলেন।

সৌদি ফেরত অন্য নারীদের অবস্থা স্বাভাবিক মনে হলেও জোছনা ছিলেন পুরোপুরি অস্বাভাবিক। শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট থেকে নামার পর তাকে এক নারীর মাধ্যমে বের করে আনা হয়। এরপর তাকে কিছুক্ষণের জন্য একটি মালবাহী স্ট্রেচারে বসিয়ে রাখা হয়।

জোছনার ভাষ্য, তাকে কেন ইনজেকশন দেওয়া হতো, তা তিনি বুঝতে পারতেন না। তারা (সৌদির ওই বাসার লোকেরা) খারাপ কাজ করতে চাইলে বাঁচার জন্য তিনি সবার সামনে বসে নামাজ পরতেন। তার শরীরে ৩০টা ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে। তার মালিক বলতেন, ইদরা (আরবিতে ইনজেকশন) ভালো, এটা বলেই ইনজেকশন পুশ করত।

ইনজেকশন তার শরীরে পুশ করার পর কেমন অবস্থা হতো এমন প্রশ্নের জবাবে জোছনা বলে, ‘আমার মাথা ঘুরান দিয়া পইরা যাইতাম। মাটিত পইড়া অজ্ঞান হইয়া যাইতাম। ওরা আমারে মাইরা পাগল বানাইছে। আল্লাহ ওগো বিচার কইরবে।’

জোছনা জানান, তার কোনো একসময় বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু স্বামীর সঙ্গে সংসার করা হয়নি। সৌদি যাওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত বাবার বাড়িতেই থাকতেন। বাড়তি আয়ের আশায় দালালের মাধ্যমে সৌদি পাড়ি জমান তিনি। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে জোছনা যে দেশে ফিরছেন, খবরটি সে আসার দিন পর্যন্ত জানতে না তার পরিবারের সদস্যরা।

জোছনার সঙ্গে থাকা পাসপোর্টের তথ্যমতে, তার গ্রামের বাড়ি ভোলা সদরের দক্ষিণ চরপাতা।