কয়লা গায়েবের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা খনিতে ২২৭ কোটি মূল্যের ১ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা গায়েব হওয়ার ঘটনায় দুর্নীতির প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। সোমবার বিকালে খনিতে প্রবেশ করে কাগজপত্র যাচাই-বাছাই এবং কোল ইয়ার্ড এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তারা।

দুদক কর্মকর্তারা আরও জানান, খনির অনিয়মের বিষয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে তদন্ত কার্যক্রম শেষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) দিনাজপুর সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক বেনজীর আহমেদ জানান, আমরা কয়লা খনির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখেছি, খনির কোল ইয়ার্ডে ১ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদ থাকার কথা। কিন্তু কোল ইয়ার্ডে রয়েছে মাত্র ২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। বাকি ১ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন কয়লার কোনও হদিস নেই। বিপুল পরিমাণ কয়লা উধাও হয়ে যাওয়ায় এখানে প্রাথমিক তদন্তে দুর্নীতির আলমত পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই আমরা এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় দুদক অফিসে জানিয়েছি।

তিনি আরও জানান, সম্পূর্ণ তদন্ত শেষ করতে ৬০ দিন সময় লাগবে। কেন্দ্রীয় দুদক অফিসের তদন্ত শেষেই আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনায় খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দফতরে সংযুক্ত করা হয় এবং মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানী সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে তাৎক্ষনিক বদলি করা হয়। বড়পুকুরিয়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খানকে। ঘটনায় গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

এদিকে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের সদ্য অপসারণ হওয়ায় ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হাবিবউদ্দীন আহমদ জানান, যে পরিমাণ কয়লা পাওয়া যাচ্ছে না তা সিস্টেম লস। তিনি দাবি করেন, গত ১১ বছরে এক কোটি ১০ লাখ টন কয়লা উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে দেড় শতাংশ হিসেবে প্রায় দেড় লাখ মেট্রিক টন কয়লা সিস্টেম লস। রোদ্রে পুড়ে, বাতাসে উড়ে, পানিতে ভিজে, মাটিতে মিশে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে এই সিস্টেম লস হয়ে থাকে। এখনও অনেক কয়লা রয়েছে যা মাটিযুক্ত। এর আগে কোল ইয়ার্ড কখনই খালি না হওয়ায় তারা এই সিস্টেম লস আগে বুঝতে পারেননি। আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে এই লসের পরিমাণ ৫ শতাংশ পর্যন্ত বলে জানান তিনি।