স্ক্যানার বা রাডার দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আবারও ‘গুপ্তধন’ উদ্ধার কাজ শুরু করা হবে। তবে মাটির নিচ থেকে স্বর্ণ বা রৌপ্য উদ্ধারে বাংলাদেশে তেমন কোনো যন্ত্র বা মেশিন নেই। তাই গুপ্তধন উদ্ধারে একমাত্র গ্রাউন্ড রাডার বা স্ক্যানারেই অবলম্বন হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে মাটির নিচে যদি গুপ্তধন থাকেও স্ক্যানারে দিয়ে তেমন সুফল আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞ।
সম্প্রতি মিরপুর-১০ নম্বরের সি-ব্লকের বাড়িতে কথিত গুপ্তধন উদ্ধারে ২০ জন শ্রমিকের সহায়তায় ছয় ঘণ্টা ধরে সাড়ে চার ফুট গভীরে ফলশূন্য খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়। ‘গুপ্তধন’ উদ্ধারে এতে কোনো নমুনা না পাওয়ায় অভিযান আপাতত স্থগিত রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে চলতি সপ্তাহে আবারও অভিযান শুরু করা হবে। তবে ওই বাড়ির মেঝের নিচে আদৌ ‘গুপ্তধন’ আছে কিনা- সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত কোনো তথ্য নেই।
অন্যদিকে, মাটি খননের পরও কথিত ‘গুপ্তধন’ না পেয়ে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের কাছে সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা জেলা প্রশাসন। এছাড়া কথিত গুপ্তধন সন্ধানে আরও কী কী পদ্ধতি/প্রক্রিয়া আছে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা চলছে।
ভূতত্ত্ব ও পরিবেশবিদরা বলছেন, যেসব জায়গা খোঁড়াখুঁড়ির অনুপযোগী অথবা ঝুঁকিপূর্ণ, সেসব জায়গায় প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়। মিরপুরের ওই বাড়িতে প্রযুক্তি ব্যবহারের আগেই খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে, কিন্তু কিছুই পাওয়া যায়নি। আসলে গুপ্তধন না থাকলে তো খুঁড়েও কিছু পাওয়া যাবে না।
ঢাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তাজওয়ার আকরাম সাকাপি ইবনে সাজ্জাদ জাগো নিউজকে বলেন, মিরপুরের ওই বাড়ির কাঠামো দুর্বল, তাই সেখানে ‘গুপ্তধন’ লুকায়িত রয়েছে তা নিশ্চিত না হয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করা ঝুকিপূর্ণ। যদি স্ক্যানার মেশিন দিয়ে পরীক্ষা করার পর তা শনাক্ত করা সম্ভব হয় তবেই সেখানে আবারও খনন কাজ শুরু করা হবে। প্রয়োজনে একতলা বাড়িটি ভেঙে ফেলা হতে পারে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের কাছে এধরনের যন্ত্রপাতি রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা সেসব যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তার করবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গেও আমরা পরামর্শ করছি। সব মিলিয়ে আরও দুই থেকে চারদিন সময় লাগতে পারে। এরপর আমরা আবারও কাজ শুরু করবো।’
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের বিশেষজ্ঞরা জানান, যদি মাটির নিচে মেটাল জাতীয় কিছু থাকে, তবে স্ক্যান করলে সেটি বোঝা যাবে বা ধরা পড়বে। এটা একটি পদ্ধতি। আবার ‘গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার (জিপিআর)’ দিয়ে মাটির ওপর থেকেও দেখা হয়। যদি নিচে কোনো কঠিন বস্তু থাকে, তবে ওই মেশিনে সেটার সংকেত দেবে। এটি আরেকটি পদ্ধতি। কাদা মাটিতে এ যন্ত্রগুলো কম কার্যকর। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দুটি পদ্ধতি ব্যবহার করে দেখা হবে।
বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. রেশাদ মহম্মদ ইকরাম আলী বলেন, ‘এই বিষয়ে আমাদের কাছে তেমন কিছু নেই। তবে আমাদের কাছে একটি গ্রাউন্ড পেনিট্রেটিং রাডার (জিপিআর) ও স্ক্যানার আছে, সেটি দিয়ে মিরপুরের ওই বাড়িতে ‘গুপ্তধন’ সন্ধানে কাজ করার চিন্ত-ভাবনা চলছে। তবে এই স্ক্যানারটি ভেজা মাটিতে খুব একটা কার্যকর নয়।’
এদিকে স্ক্যানার দিয়ে স্বর্ণ বা রৌপ্য শনাক্ত করা যাবে না বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, মাটির নিচে গুপ্তধন পরীক্ষা-নিরীক্ষার করার জন্য বাংলাদেশে কোনো যন্ত্র নেই। পেনিট্রেটিং রাডার ও স্ক্যানার দিয়ে মাটির নিচে লোহা শনাক্ত করা সম্ভব হবে, কিন্তু গুপ্তধন (স্বর্ণ বা রৌপ্য) শনাক্ত হবে না।
তিনি বলেন, মিরপুরের ওই বাড়ির নিচে যদি এক টুকরো লোহা পড়ে থাকে তবে স্ক্যানার বা পেনিট্রেটিং মেশিন সিগনাল দেবে। এখন তার ওপর ভিত্তি করে গুপ্তধন উদ্ধারে যতই খোঁড়াখুঁড়ি করুক তাতে কোনো লাভ হবে না। গুপ্তধন পরীক্ষায় দেশে বিভিন্ন ধরণের এক্সেরে মেশিন পাওয়া যেতে পারে। খনন শুরু করার আগে সেসব দিয়ে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। এছাড়াও নির্ধারিত স্থানের মাটিতে গ্রাউন্ডিং বা ব্লাস্টের মাধ্যমে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরীক্ষা করার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছেন বুয়েটের এই অধ্যাপক।
এ বিষয়ে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাদন ফকির জাগো নিউজকে বলেন, মিরপুরের বাড়িটিতে যান্ত্রিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আবারও গুপ্তধন উদ্ধার কাজ শুরু করা হবে। আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। দ্রুতই আবারও উদ্ধার কাজ শুরু করা হবে। বর্তমানে ৩০ জন পুলিশ সদস্যের পাহারায় বাড়িটিকে ঘিরে রাখা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই রাজধানীর মিরপুর-১০ নং সেকশনের বাড়িতে গুপ্তধনের খোঁজে মাটি খোঁড়াখুঁড়ি করে প্রশাসন ও পুলিশ। বাড়িটির নিচে কমপক্ষে দুই মণ স্বর্ণালংকার আছে- এমন দাবি ওঠায় এর সত্যতা নিশ্চিত করতে শুরু হয় এই অভিযান। বাড়ির ভিত্তিপ্রস্তর দুর্বল হওয়ায় খোঁড়াখুঁড়ি স্থগিত রাখা হয়েছে। এরপর পুনরায় ২২ জুলাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন।
এর আগে গত ১০ জুলাই মোহাম্মদ আবু তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি মিরপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এরপর ১২ জুলাই রাতে কয়েকজন লোক ওই বাড়ির ভেতরে গুপ্তধন আছে বলে জোরপূর্বক ঢোকার চেষ্টা করেন। এ বিষয়ে ১৪ জুলাই বাড়ির মালিক মুনিরুল ইসলাম থানায় জিডি করেন। পরে তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই বাড়িটিতে খননের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।