যে চার রুটে চলবে ‘বুলেট ট্রেন’

ঢাকা থেকে চারটি রুটে দ্রুতগামী বুলেট ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রুটগুলো হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-দিনাজপুর এবং ঢাকা-পায়রা বন্দর।

আজ শনিবার (২১ জুলাই) বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দেয়া গণসংবর্ধনায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে সরকারের ভবিষ্যত পরিকল্পনাও তুলে ধরেন সরকার প্রধান।

মহাকাশে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের সফল উৎক্ষেপণ, বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ, অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড এবং সর্বশেষ ভারতের কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিলিট ডিগ্রি অর্জন করায় শেখ হাসিনাকে এই সংবর্ধনা দেয় আওয়ামী লীগ।

এই আয়োজনে বঙ্গবন্ধু হত্যা, জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসন, ১৯৯৬ সালে তার সরকারের ক্ষমতায় ফেরা, গত নয় বছরে দেশের উন্নয়নে নেয়া পদক্ষেপের পাশাপাশি ভবিষ্যত পরিকল্পনাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

‘রাজধানীর সাথে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-দিনাজপুর, ঢাকা-পায়রা বন্দর পর্যন্তসহ বুলেট ট্রেন দ্রুতগামী ট্রেন নির্মাণ করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুরক্ষিত করব।’

‘রেল সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। আলাদা মন্ত্রণালয় করে রেলকে উন্নত করে যাচ্ছি। নতুন নতুন সংযোগ আমরা দিয়ে যাচ্ছি।’

সড়ক পথেও ব্যাপক উন্নয়নের কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করে যাচ্ছি। সমস্ত বাংলাদেশে সড়ক পথে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা- ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেন করার কথা তুলে ধরে বলেন, ‘ঢাকা সিলেটে চার লেনের কাজ শুরু হবে। ঢাকা-পায়রা বন্দর, ভবিষ্যতে উত্তরবঙ্গকে চার লেনে উন্নীত করে দিয়ে যোগাযোগ আরও তড়িৎ গতিতে যেন হয় সে ব্যবস্থা করে যাচ্ছি।’

‘নৌ পথ সচল করে যাচ্ছি। সকল নদী ড্রেজিং করে প্রকৃতিকে রক্ষা করা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করা এবং সেই সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য আমাদের ব্যাপক কর্মসূচি রয়েছে, আমরা তা বাস্তবায়ন করে যাব।’

রেল, সড়ক ও নৌ পথের মতো আকাশপথেও সরকার উন্নয়ন করে যাচ্ছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘আমাদের বিমান ধ্বংসপ্রাপ্ত ছিল। ইতিমধ্যে আমরা নতুন বিমান কিনেছি, আরও সাত খানা বিমান ক্রয় করব। যা আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগকে আরও উন্নত করব।’

‘চট্টগ্রাম, সিলেট এয়ারপোর্টকে আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে গিয়েছিলাম প্রথমবার যখন ক্ষমতায় আসি।

‘ফরিদপুর, রাজশাহী, সিলেট, বরিশাল, প্রত্যেকটা এয়ারপোর্টকে আরও উন্নত করব।’

বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের ব্যাপক সাফল্যও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘৯৬ সালে বিদ্যুৎ পেয়েছিলাম ১৬০ মেগাওয়াট। আজকে প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতা অর্জন করেছি। কিছু দিনের মধ্যে ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। সেই সাথে সাথে সঞ্চালন লাইনও করে দিচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশকে আগামীতে কীভাবে উন্নত করব, সে পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। সে কথা চিন্তা করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

‘আমাদের এই দেশ কারও মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ যেমন মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে সারা বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল, আজকে উন্নয়নের ফলে, প্রবৃদ্ধি অর্জনের ফলে, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ আবার বিশ্বের দরবারে মর্যাদা ফিরে পেয়েছে।’

‘আজকে অন্নের জন্য হাহাকার নেই। খাদ্য নিরাপত্তা দিয়েছি। এখন পুষ্টির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি যাতে আমাদের দেশের ছেলে মেয়েরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।’

‘তাই মাতৃত্বকালীন ভাতা দিচ্ছি, মাতৃদুগ্ধ দানকারী মায়ের ভাতা দিচ্ছি। যাতে করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয় সে ব্যবস্থা করছি।’

গ্রামেও শহরের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম শহরে গড়ে তুলব আমরা, প্রতিটি গ্রাম হবে উন্নয়নের জায়গা। প্রতিটি গ্রামের মানুষ পাবে নাগরিক সুবিধা। শহরের মানুষ যে সুবিধা পায়, গ্রামের মানুষও সেই সুবিধা পাবে।’

‘আমরা গ্রামের মানুষের উন্নতি করতে চাই, শিক্ষা-দীক্ষায় সব দিক থেকে গ্রাম বাংলার মানুষ উন্নত জীবন যাবে।’

‘ক্ষুধার হাহাকার থাকবে না। একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না, প্রত্যেকটা মানুষ উন্নত জীবন পাবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমার রাজনীতি, সেই লক্ষ্য নিয়েই আমার কাজ।’