এখনো আমাদের সমাজে অনেক যৌথ পরিবার আছে। যেই পরিবারে বাবা-মা ভাই, বোন মিলে এক সাথে থাকেন। তবে বর্তমানে এই ধরণের পরিবারের সংখ্যা কমে এসেছে। তবুও আছে। শহরে না থাকলেও গ্রাম অঞ্চলে আছে। এই ধরণের পরিবারে বসবাস করা অন্য এক ধরণের মজা আছে। আজ যারা বিভিন্ন কাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে তারা বড় হয়েছেন যৌথ পরিবার বা একান্নবর্তী পরিবারে।
সমাজে এখনো এমন অনেক লোক আছেন যারা যৌথ পরিবার হিসেবেই থাকতে চায়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন পরিবারে নতুন পত্রবধুর আগমন ঘটে আর কোন কারণে তিনি যৌথ পরিবারে থাকতে চান না। স্ত্রী দিনের পর দিন স্বামীকে চাপ দিতে থাকে তিনি যেন এই যৌথ পরিবারে আর না থাকেন। কিন্তু ছেলে মুখ ফুটে মা-বাবাকে কিছু বলতে পারেন না। যৌথ পরিবার থেকে আলাদা হওয়ার কথা শুনলেই হয়তো মা-বাবা রাগ করবেন। এমনকি মা-বাবা ধারণা করেন ছেলে বিয়ের আগে ভালো ছিলো বিয়ের পরে ছেলে আর আগে মত ভালো নেই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে আপনি কোন দিকে যাবেন? স্ত্রীর কাথা শুনবেন না মা-বাবা ও ভাই বোন নিয়ে যৌথ পরিবারে থাকবেন। আপনার স্ত্রী কোনভাবেই যৌথ পরিবারে থাকতে চাচ্ছে না। এমনও হতে পারে যৌথ পরিবারে না থাকলে আপনার বৈবাহিক সম্পর্ক আর দীর্ঘস্থায়ী হবে না। তো আপনার করণীয় কী? ইসলাম তো সব বিষয়েই দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। এই বিষয়ে ইসলাম কি বলেছে?
ইসলামের দিক-নিদের্শনা হচ্ছে বিবাহের পরে স্বামীর প্রথম কতর্ব্য হলো স্ত্রীর জন্য এমন একটি বাসস্থানের ব্যবস্থা করা যেখানে স্ত্রী মানুষের দৃষ্টি থেকে নিরাপদ থাকবে। কেননা পর্দা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান। আর এই বিধান পালন করার জন্য স্বামীর কতর্ব্য স্ত্রীকে সাহায্য করা। সেই সাথে অন্যান্য সকল কষ্ট থেকে স্ত্রীর আরামের ব্যবস্থা করতে হবে। তবে স্ত্রীকে শ্বশুর ও শাশুড়ির সাথেই থাকতে হবে এমন বাধ্যও করা যাবে না। কেননা এমন কোন অধিকার স্বামীর নেই। তবে এই ক্ষেত্রে স্বামী স্ত্রী উভয়কে সামাজিক অবস্থার উপর বিবেচনা করেও কিছু কাজ করতে হবে।
একটি হাদিসে নবী (সা.) তার স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের থেকে স্ত্রীকে সাবধান করে দিয়েছিলেন। স্ত্রী যেন স্বামীর আত্মীয়-স্বজন থেকে সাবধান থাকে কেননা স্বামীর পরিবারের কেউ স্ত্রীর মাহরাম নয়। (বুখারী ও মুসলিম)
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যে রকম বাসগৃহে থাকো তাদেরকেও (ইদ্দতকালে) সেখানে থাকতে দাও। তাদেরকে বিপদগ্রস্ত করার জন্য উত্যক্ত করো না। আর তারা গর্ভবতী হলে সন্তান প্রসব না হওয়া পর্যন্ত তাদের জন্য খরচ করো। তারপর তারা যদি তোমাদের সন্তানদের বুকের দুধ পান করায় তাহলে তাকে তার বিনিময় দাও এবং (বিনিময়দানের বিষয়টি) তোমাদের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে উত্তম পন্থায় ঠিক করে নাও। কিন্তু (বিনিময় ঠিক করতে গিয়ে) তোমরা যদি একে অপরকে কষ্টকর অবস্থার মধ্যে ফেলতে চেয়ে থাক তাহলে অন্য মহিলা বাচ্চাকে দুধ পান করাবে। (তালাক: ৬)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে হাজম (রা.) বলেন বলেছেন, এই আয়াতটি তালাকপ্রাপ্ত নারীর ক্ষেত্রে সুতরাং যে নারী তালাকপ্রাপ্ত নয় সে তার অনুযায়ী বাসস্থান পাবে। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। (আল-মুহাল্লা, ৯/২৫৩) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে কুদামা (রা.) বলেছেন, যদি তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রীদের জন্য বাসস্থান প্রদান করা বাধ্যতামূলক হয় তবে যে নারী এখনো স্ত্রী অবস্থায় আছে তার জন্য তো বসবাসের ব্যবস্থা করা খুবই যুক্তিযুক্ত। সেই সাথে তার পরিপূর্ণ রক্ষণাবেক্ষণ করা একজন স্বামীর জন্য কতর্ব্য।
পবিত্র কুরআনে আরো এসেছে যে, হে ঈমানদারগণ! তোমাদের জন্য জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হয়ে বসা মোটেই হালাল নয়। আর তোমরা যে মোহরানা তাদেরকে দিয়েছো তার কিছু অংশ তাদেরকে কষ্ট দিয়ে আত্মসাৎ করাও তোমাদের জন্য হালাল নয়। তবে তারা যদি কোন সুস্পষ্ট চরত্রহীনতার কাজে লিপ্ত হয় (তাহলে অবশ্যি তোমরা তাদেরকে কষ্ট দেবার অধিকারী হবে) তাদের সাথে সম্মানজনকভাবে জীবন যাপন করো। যদি তারা তোমাদের কাছে অপছন্দনীয় হয়, তাহলে হতে পারে একটা জিনিস তোমরা পছন্দ করো না কিন্তু আল্লাহ তার মধ্যে অনেক কল্যাণ রেখেছেন। (নিসা: ১৯)
এই আয়াতে আল্লাপাক বলেছেন স্ত্রীদের সাথে সম্মানজনকভাবে বসবাস কর। সতরাং স্ত্রীকে যেভাবে রাখলে সম্মানজনকভাবে বসবাস করা হবে সেইভাবেই স্ত্রীকে রাখতে হবে। একজন স্বামীকে অবশ্যই এই বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে (আল মুগনি, ৯/২৩৭)
ফোতওয়ার কিতাব বাদায়ে সানায়ে এমনও এসেছে যে, যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীকে স্বামীর পরিবারের সাথে অথবা অন্য আত্মীয়ের সাথে থাকার কথা বলে কিন্তু স্ত্রী কারো সাথে থাকার কথা রাজি না হয় তাহলে স্ত্রীকে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা স্বামীর কতর্ব্য। কেননা স্ত্রীর সকল কিছু রক্ষা করা ও নিরাপদে বসবাস করার দায়িত্ব স্বামীর।