ভারতের উত্তরপ্রদেশ রাজ্যে ইসলাম ধর্মের তিন তালাক ও ‘নিকা হালালা’ বা হিল্লাহ্ বিয়ের প্রথার শিকার হয়েছেন দু’জন নারী। ওই দু’জন মুসলিম নারীর বিরুদ্ধে ধর্মীয় নেতারা ফতোয়া জারি করার পর তারাও রুখে দাঁড়িয়ে বলেছেন ইসলাম থেকে তাদেরকে বের করার অধিকার কারও নেই।
বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, বেরিলির গৃহবধূ শাহবিনাকে তার স্বামী তিন তালাক দেয়ার পর হিল্লাহ্ বিয়ের মাধ্যমে তার শ্বশুরের সঙ্গে এক রাতের জন্য তাকে থাকতে (শুতে) বাধ্য করা হয়েছিল। যাতে তিনি নিজের স্বামীকে আবার বিয়ে করতে পারেন।
কিন্তু, সেই স্বামী আবার তাকে তালাক দিলে যখন তাকে বলা হয় দেবরের সঙ্গে রাত কাটালে তবেই তিনি আবার স্বামীকে বিয়ে করতে পারবেন, তখন শাহবিনা প্রতিবাদে ফেটে পড়েন।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেবরের সঙ্গে শাহবিনা শুতে না চাইলে তাকে বাড়ি থেকেও বের করে দেয়া হয়।
এরপর গৃহবধূ শাহবিনা যোগাযোগ করেন লখনৌতে ‘আলা হজরত হেল্পিং সোসাইটি’র প্রতিষ্ঠাতা নিদা খানের সঙ্গে- যার জীবনের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই রকম।
উত্তরপ্রদেশের একটি অভিজাত মুসলিম পরিবারের সন্তান উসমান রেজা খানের সঙ্গে নিদা খানের বিয়ে হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালে তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়।
নিদা খান তার স্বামীর দেয়া তিন তালাকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আদালতে যান আর সেই মামলায় জিতে যান তিনি।
পার্সোনাল ল-তে হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ভারতের মুম্বাইতে মুসলিমদের বিক্ষোভ সমাবেশ (ফাইল ফটো)
আদালতে তিনি বলেছিলেন, তার স্বামী এত শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করতেন যে তার গর্ভপাতও হয়ে গিয়েছিল।
বিবিসি’র ওই প্রতিবেদনে এও জানা যায়, বিবাহ-বিচ্ছেদের শিকার নিদা খান অবশ্য তার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজের এনজিও তৈরি করে তিনি তিন তালাক ও নিকা হালালের ভিক্টিমদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আর এরই ধারাবাহিকতায় বেরিলির গৃহবধূ শাহবিনার পাশে দাঁড়াতেও তিনি এগিয়ে গিয়েছিলেন।
কিন্তু এরপরই গত সোমবার বেরিলির শহর ইমাম মুফতি খুরশিদ আলম নিদা খান ও শাহবিনা- দু’জনের বিরুদ্ধেই ফতোয়া জারি করে প্রকাশ্য বিবৃতি দিয়েছেন, যাতে বলা হয়েছে ইসলামকে অপমান করার জন্য তাদের ধর্ম থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে।
‘নিদা খান অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কোনো ওষুধ দেয়া যাবে না। সে মারা গেলে তার জন্য কেউ নামাজ পড়বে না, কেউ তার জানাজায় যেতে পারবে না।’ ওই ফতোয়ায় আরো বলা হয়েছে, ‘এমন কি, কবরস্থানেও তাকে দাফন করা যাবে না। যারা তাকে সমর্থন করবে বা তার পাশে দাঁড়াবে, তাদেরও ঠিক এই একই শাস্তি হবে।’ এমনটাই বলা হয়েছে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে।
দারুল উলুম দেওবন্দের স্বীকৃত দারুল ইফতা ওই ফতোয়া জারি করার পর থেকেই শাহবিনা ও নিদা খানকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও তারা অভিযোগ করেছেন।
পাঁচ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তারা একটি এফআইআর-ও দায়ের করেছেন।
এ ঘটনায় বেরিলির পুলিশ প্রধান অভিনন্দন সিং জানান, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে তারা ইতোমধ্যে তদন্তও শুরু করেদিয়েছেন।
প্রতিবাদী নিদা খান নিজে অবশ্য দাবি করেছেন, এই সব হুমকি-ধামকিকে তিনি মোটেই ভয় পাচ্ছেন না।
তিনি বলেছেন, ‘যারা এই সব ফতোয়া দিচ্ছে তারা পাকিস্তানে গিয়ে ওসব করুক, এ দেশে ওসবের ঠাঁই হবে না। আর আমাদের ইসলাম থেকে বের করে দেয়ার অধিকারও কারও নেই।’
তিন তালাকের বিরুদ্ধে একটি বিল এখন ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিবেচনাধীন আছে। নিকা হালালা বা হিল্লাহ্ বিয়ে প্রথার বিরুদ্ধে একটি আবেদনের শুনানি চলছে সুপ্রিম কোর্টেও।
এদিকে, গত কয়েক মাসে শুধুমাত্র উত্তরপ্রদেশের বেরিলিতেই অন্তত ৩৫টি তিন তালাক ও নিকা হালালার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।