মহান আল্লাহর ঘরের মেহমানদের সৌভাগ্য যে, তারা মক্কা-মদিনার পবিত্র স্থানগুলো দেখার সুযোগ পাবেন। মক্কা-মদিনায় দর্শনীয় পবিত্র স্থানগুলো প্রিয়নবী (সা.)-এর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আজও সুসংরক্ষিত।
যেমন মসজিদে হারামের আনুমানিক ৫০ মিটার দূরে ‘সুক-আল-লাইল্’ মহল্লার ‘আবদুল মুত্তালিবে’র বাড়ি। যেখানে দু’জাহানের বাদশাহ জন্মগ্রহণ করেছিলেন- তা একটি দর্শনীয় স্থান।
নবীর দুধ মাতা হজরত হালিমা সাদিয়ার (রা.) বাড়ি। ‘বনু সাআদ’ গোত্রের একটি সাধারণ বাড়ি ও এর কাছের একটি কূপ প্রিয় নবী (সা.)-এর স্মৃতিধন্য। হালিমা সাদিয়া (রা.)-এর সৌভাগ্য যে, তিনি নবী করমি (সা.) কে দুধপান করিয়েছিলেন। আর রাহমাতুল লিল আলামিনের শুভাগমনে ধূসর ও মৃতপ্রায় খেজুর বাগানে জেগেছিল সবুজের সমারোহ।
মক্কার কাবা ঘরের অদূরে অবস্থিত ‘জাবালে নুর’ যা হেরা পর্বত হিসেবে খ্যাত- এখানেই পবিত্র কোরআন নাজিলের শুভ সূচনা হয়। সর্বপ্রথম সূরা আলাকের প্রথম পাঁচটি আয়াত নাজিল হয় এখানেই- ‘পাঠ কর, তোমার প্রভুর নামে…।’
পবিত্র মক্কার ৯৫ কি.মি. উত্তর-পূর্বে অবস্থিত ‘তায়েফ প্রান্তর।’ নবুওয়তের দশম বর্ষে প্রিয়নবী (সা.) এখানে ইসলাম প্রচারের জন্য এসে লাঞ্ছিত ও রক্তাক্ত অবস্থায়, ওত্বা ইবনু রাবিয়াহর আঙ্গুর বাগানে আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।
‘জাবালে সওর’ প্রিয় নবী (সা.)-এর হিজরতের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। হিজরতের সময় প্রিয় নবী (সা.) ও হজরত আবু বকর সিদ্দীক (রা.) তিন দিন তিন রাত অবস্থান করেছিলেন। এখানেই হজরত আবু বকর (রা.) প্রিয় নবী (সা.)-এর নিরাপত্তার জন্য সাপের গর্তের মুখে নিজের পা চেপে ধরেছিলেন এবং সাপের দংশনেও অস্থির হননি বরং শত্রুর পদধ্বনি শুনে অস্থির হয়েছিলেন। তখন প্রিয় নবী (সা.) বলেছিলেন, পবিত্র কোরআনের ভাষায়- ‘তিনি আপন সঙ্গীকে বললেন, বিষন্ন হয়ো না, আল্লাহ আমাদের সঙ্গেই আছেন…।’ –সূরা তওবা: ৪০
প্রিয় নবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত মসজিদে জ্বীন
মক্কা-মদিনায় প্রিয় নবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত অনেক মসজিদ রয়েছে- মসজিদে কুবা, মসজিদে নব্বী, মসজিদে কিবলাতাইন, মসজিদে জুময়া ও মসজিদে জ্বীন ইত্যাদি।
মদিনা থেকে তিন মাইল দূরের আলিয়া বা কোবায় প্রিয় নবী (সা.) কে স্বাগত জানান আমর ইবনু আউফ গোত্রের প্রধান কুলসুম ইবনু হাদাম (রা.)। মদিনায় প্রবেশের আগে প্রিয় নবী (সা.) এখানে চৌদ্দ দিন অবস্থান করেছিলেন। এখানে প্রিয় নবী (সা.) একটি মসজিদ নির্মাণ শুরু করেন। এই ‘মসজিদে কুবা’ হলো প্রিয় নবী (সা.)-এর তৈরি প্রথম মসজিদ। এই মসজিদের প্রশংসায় মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার (ধর্মভীরুতা) ওপর…।’ –সূরা তওবা: ১০৮
মসজিদে জুময়া কুবায় দু’সপ্তাহ অবস্থানের পর প্রিয় নবী (সা.) মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে তার উট বনি সালাম গোত্রের এলাকায় থামলো- সেখানে প্রিয় নবী (সা.)-এর খুতবা ও ইমামতিতে সর্বপ্রথম জুমার নামাজ আদায় করা হয়। প্রিয় নবী (সা.)-এর স্মৃতিচিহ্ন এ স্থানেই নির্মিত হয় মসজিদে জুময়া।
‘মসজিদে নব্বী’ যে মসজিদকে প্রিয় নবী (সা.) সব সময় বলতেনড়- আমার মসজিদ। হিজরতের পর টানা ১০ বছরের অধিকাংশ সময় প্রিয় নবী (সা.) এখানেই অবস্থান করেছিলেন।
প্রিয় নবী (সা.)-এর স্মৃতিবিজড়িত মসজিদে কিবলাতাইন
হজরত আবু আইয়ুব আনসারী (রা.)-এর বাড়ি সংলগ্ন একটি পড়ো জমির মালিক সহল ও সুহাইল বালকদ্বয়। এখানেই নির্মিত হয়- ‘মসজিদে নব্বী।’ এ মসজিদটি ছিল- নবী করিম (সা.)-এর আবাসস্থল, প্রশাসনিক কেন্দ্র ও জীবনের সর্বশেষ বিশ্রামস্থল। যার সৌন্দর্য ছিল ঈমান, ইনসাফ ও আধ্যাত্মিকতা।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে নবী! আপনি নিজের মুখ মসজিদে হারামের (কাবা) দিকে ফেরান…।’ –সূরা বাকারা: ৪৯
কেননা, নবী করিম (সা.) ২য় হিজরি সালের শাবান মাস পর্যন্ত বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে ফিরে নামাজ আদায় করতেন। একদিন বনী সালমায় প্রিয় নবী (সা.) ইমামতিতে নামাজরত অবস্থায় কেবলা পরিবর্তনের নির্দেশ নাজিল হয়।
একারণে একই নামাজে প্রিয় নবী (সা.) ও সাহাবিরা প্রথম দু’রাকাত বায়তুল মুকাদ্দাস ও শেষ দু’রাকাত কাবার দিকে ফিরে আদায় করেছিলেন।
প্রিয় নবী (সা.)-এর স্মৃতিধন্য এ মসজিদকে দু’কিবলা বিশিষ্ট মসজিদ বা মসজিদে কিবলাতাইন বলে।
‘মসজিদে জ্বীন’ এখানে জ্বীনরা প্রিয় নবী (সা.)-এর কণ্ঠে পবিত্র কোরআন শুনে, ঈমান আনে।
মদিনায় বৃষ্টির জন্য ‘ইসতেসকা নামাজ’ (বৃষ্টির নামাজ) আদায় করার কারণে প্রিয় নবী (সা.)-এর স্মৃতিধন্য ঐতিহাসিক মসজিদের নাম- ‘মসজিদে গামামাহ।’
প্রিয় নবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠতম স্মৃতিচিহ্ন তার ‘রওজাতুল আতহার’ বা ‘পবিত্র সমাধি।’
প্রিয় নবী (সা.)-এর শ্রেষ্ঠতম স্মৃতিচিহ্ন- রওজাতুল আতহার
উম্মতে মুহাম্মদির সর্বকালীন সর্বাত্মক ঐক্যমত হলো- ‘বায়তুল্লাহর পর দুনিয়ার বুকে সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বাপেক্ষা মর্যাদাপূর্ণ স্থান হলো- রওজাতুল আতহার বা পবিত্র সমাধি।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আকাঙ্ক্ষায় থাকেন, জীবনে একটিবারের জন্য হলেও যেন রওজা শরিফ জিয়ারতে যেয়ে বলতে পারেন; ‘আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলুল্লাহ।’
কারণ, প্রিয় নবী (সা.) নিজে বলেছেন, ‘যে আমার কবর জিয়ারত করবে, তার জন্য শাফায়াত করা আমার কর্তব্য হয়ে যায়।