চলতি বছরের জানুয়ারিতে তাদের আলাপ। এরপর প্রেম। নারীতে রূপান্তরিত আলিয়ার সঙ্গে স্বেচ্ছায় ঘর বাঁধতে চেয়েছিলেন পুরুষে রূপান্তরিত হতে ইচ্ছুক ২১ বছরের রুমি পোদ্দার। দু’জনেই প্রাপ্তবয়স্ক।
কিন্তু সম্পর্কটা মেনে নেয়নি রুমির পরিবার। বকাবকি, মারধর চলছিলই। অত্যাচার মাত্রা ছাড়ালে বাড়ি ছাড়েন রুমি। ১১ জুলাই চলে আসেন ভারতের দমদমে আলিয়ার বাড়িতে। বিয়েও করেন। ১৩ জুলাই রুমির বাবা ফোনে যোগাযোগ করে মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চান।
বিরাটি দুর্গানগরের বাড়িতে আর ফিরবেন না, এই শর্তে বাবার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হন রুমি। পরিবার কথা রাখেনি। রুমির অভিযোগ, তাঁকে মেরেধরে টেনেহিঁচড়ে জোর করে তুলে নিয়ে যান বাবা-ভাইয়েরা। জোর করে পাঠানো হয় সোদপুরের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে।
সেখানে বলা হয়, রুমি মাদকাসক্ত, মানসিক সমস্যা রয়েছে। এমনটা হতে পারে বলে আন্দাজ করেছিলেন রুমি। তিনি যে স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছেন, আগেই তা জানিয়ে রেখেছিলেন থানায়।
তিন দিনেও রুমির খোঁজ না-পেয়ে মঙ্গলবার দমদম ক্যান্টনমেন্ট থানায় নিখোঁজ মামলা করেন তাঁর স্ত্রী আলিয়া। বিষয়টি জানান রাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডে। রূপান্তরকামীদের নিয়ে কর্মরত এক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যে নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার কাছে সাহায্যের আবেদন করা হয়। রুমিকে দ্রুত মুক্ত করার আশ্বাস দেন মন্ত্রী।এ দিন বিকেলে রুমিকে নিয়ে থানায় হাজির হন ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্তারা। থানায় পৌঁছন রুমির পরিবারের লোকেরাও।
সকলের সামনে রুমি-আলিয়া জানান, তাঁরা পরস্পরকে ভালোবাসেন। একসঙ্গে থাকতে চান। নেশামুক্তি কেন্দ্রের কর্তা সৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, ”রুমি মাদকাসক্ত নন। মানসিক বিকারও কিছু দেখিনি ওঁর মধ্যে। তাই ওঁকে ফিরিয়ে দিয়েছি।” থানা জানায়, জোর করে আটকে রাখার অভিযোগ এসেছে।
বুধবার (১৮জুলাই) আদালতে রুমির বয়ান রেকর্ড করা হবে। মঙ্গলবার রাতে তিনি থাকছেন পুলিশের হেফাজতেই।
রাজ্যের ট্রান্সজেন্ডার বোর্ডের সদস্য এবং ওই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মী অপর্ণা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ”সংবিধানে রূপান্তরকামীদের বিয়ে নিয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। তবু ওঁরা বিবাহিত। জোর করে কাউকে এ ভাবে আটকে রাখা যায় না।”
অপর্ণা নিজেও রূপান্তরিত নারী। তাঁর অভিযোগ, রূপান্তরকামী মেয়ের যৌন পরিচয় পরিবারের সম্মানহানি করবে, এই আশঙ্কায় রুমির মতো বহু মেয়ের জোর করে বিয়ে দিয়ে দেন আত্মীয়েরা। অনেক সময়েই পাচার করে দেওয়া হয়।
রুমি শৈশব থেকেই ছেলেদের মতো পোশাক পরেন। চুলের ছাঁটে, হাবেভাবে মেয়েলিপনা নেই। বাবা-দাদা-মা মনে করতেন, এটা মানসিক রোগ। পরে ঠিক হয়ে যাবে।
অপর্ণার আক্ষেপ, ”রূপান্তরকামীদের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন হচ্ছে। অথচ তাঁরা বাড়ির গণ্ডিতেই সব চেয়ে বেশি লাঞ্ছিত। সত্তার স্বীকৃতিটুকুও নেই।”