আপনি হজ্জ আদায় করার জন্য মক্কায় যাবেন। যাওয়ার আগে অবশ্যই ভাবছেন নারী হিসেবে হজ্জের বিধি-বিধান কি? এই লেখাটি আপনার জন্য-
হজ্জ আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার উপর ফরজকৃত ইবাদত। এটি ইসলামের পঞ্চম বুনিয়াদ। এ ইবাদত নারীদের জন্য জিহাদতুল্য। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন: “তোমাদের জিহাদ হচ্ছে-হজ্জ।” [সহিহ বুখারী]
নীচে কিছু উপদেশ, পরামর্শ ও নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হজ্জের বিধিবিধানগুলো উল্লেখ করা হলো। এগুলো অনুসরণের মাধ্যমে মাকবুল ও মাবরুর হজ্জ পালন করা সম্ভব হবে। মাবরুর হজ্জের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “এর প্রতিদান হচ্ছে-জান্নাত”।[সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিম]
১. আল্লাহর জন্য ইখলাস বা একনিষ্ঠতা যে কোন ইবাদত শুদ্ধ হওয়া ও কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত। এর মধ্যে হজ্জও রয়েছে। সুতরাং হজ্জ করার ক্ষেত্রে আপনি মুখলিস হোন। রিয়া বা লৌকিকতা থেকে দূরে থাকুন। কারণ রিয়া আমলকে বিনষ্ট করে দেয় এবং শাস্তি অবধারিত করে।
২. ইবাদত পালনে সুন্নাহর অনুসরণ করা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ মোতাবেক হওয়া আমল শুদ্ধ হওয়া ও কবুল হওয়ার দ্বিতীয় শর্ত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসে এসেছে- “যে ব্যক্তি এমন আমল করে যা আমাদের শরিয়তে নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত।”[সহিহ মুসলিম] এ হাদিস নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ মোতাবেক হজ্জের বিধিবিধান শিক্ষা করার প্রতি আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনি কুরআন-সুন্নাহর সহিহ দলিলের ভিত্তিতে রচিত গ্রন্থগুলোর সহায়তা নিতে পারেন।
৩. শির্কে আকবর, শির্কে আসগর ও সকল প্রকার গুনাহর ব্যাপারে সাবধান থাকুন। কারণ শির্কে আকবর ব্যক্তিকে ইসলাম থেকে বহিষ্কার করে দেয়, আমল নষ্ট করে দেয় এবং শাস্তি অবধারিত করে। শির্কে আসগর আমল নষ্ট করে দেয় ও শাস্তি অবধারিত করে। আর গুনাহ শুধু শাস্তি অবধারিত করে।
৪. নারীর জন্য মোহরেম ছাড়া হজ্জের সফর বা অন্য কোন সফরে বের হওয়া জায়েয নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “কোন নারী মোহরেম ছাড়া সফরে যাবে না”[সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম] মোহরেম হচ্ছে- নারীর স্বামী এবং যাদের সাথে নারীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হারাম এমন পুরুষগণ। বিয়ে যে কারণেই হারাম হোক না কেন – সেটা নিকটাত্মীয়তা, দুগ্ধপান বা বৈবাহিক আত্মীয়তা এর যে কোনটি। মোহরেম সঙ্গে থাকা নারীর উপর হজ্জ ফরজ হওয়ার শর্ত। যদি নারীর সঙ্গে যাওয়ার মত কোন মোহরেম না পাওয়া যায় তাহলে তার উপর হজ্জ ফরজ হবে না।
৫. নারী যে কোন ধরনের পোশাকে ইহরাম বাঁধতে পারেন। সেটা কালো রঙের হোক অথবা অন্য যে কোন রঙের হোক। তবে অশ্লীল ও উত্তেজক পোশাক থেকে বেঁচে থাকবে। যেমন- সংকীর্ণ, স্বচ্ছ, কাটা বা ছেঁড়া, ডিজাইন করা ইত্যাদি পোশাক। অনুরূপভাবে পুরুষের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ পোশাক বা কাফেরদের পোশাক পরিধান করবে না। এ থেকে আমরা জানতে পারি সাধারণ মানুষের মধ্যে যারা নারীদের উপর বিশেষ রঙের পোশাকে ইহরাম করা অনিবার্য করে দেন যেমন- সবুজ বা সাদা রঙের পোশাক তাদের পক্ষে কোন দলিল নেই। বরং এটি নবতর বিদআত।
৬. ইহরাম বাঁধার পর নারীর জন্য সব ধরনের সুগন্ধি ব্যবহার করা নাজায়েয। সেটা গায়ে হোক অথবা পোশাকে হোক।
৭. ইহরামকারী নারীর জন্য মাথার চুল বা শরীরের যে কোন চুল যে কোন মাধ্যমে তুলে ফেলা নাজায়েয। তদ্রূপ নখ কাটাও হারাম।
৮. ইহরামকারী নারীর জন্য নিকাব পরা, হাত মোজা পরা হারাম। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “নারী নিকাব পরবে না, মোজা পরবে না।”[সহিহ বুখারি]
৯. ইহরাম অবস্থায় নিকাব পরা বা মোজা পরা নিষিদ্ধ এ অজুহাতে কোন নারী তার চেহারা বা হাত বেগানা পুরুষের সামনে প্রকাশ করবে না। কারণ যে কোন কাপড় দিয়ে বা আঁচল দিয়ে নারী তার চেহারা ও হাত ঢেকে রাখতে পারেন। উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ) বলেন: “আমরা যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ইহরামরত ছিলাম তখন আরোহীরা আমাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমরা মাথার উপর থেকে মুখের উপর ওড়না ফেলে দিতাম। তারা পার হয়ে গেলে আমরা মুখ খোলা রাখতাম।”[সুনানে আবু দাউদ, আলবানী ‘হিযাবুল মারআ আল-মুসলিমা’ গ্রন্থে হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন]
১০. কিছু কিছু নারী ইহরাম অবস্থায় তাদের মাথার উপর পাগড়ী বা এ জাতীয় কিছু দিয়ে ওড়না বা চাদর উঁচু করে রাখেন যাতে করে ওড়না মুখমণ্ডল স্পর্শ না করে। এটা অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি; এর কোন প্রয়োজন নেই। কেননা কোন আবরণ ইহরামকারী নারীর মুখমণ্ডল স্পর্শ করলে কোন অসুবিধা নেই।
১১. ইহরামকারী নারীর জন্য কামিজ, সেলোয়ার, পায়ের মোজা, স্বর্ণের চুড়ি, আংটি, ঘড়ি ইত্যাদি পরা জায়েয। তবে হজ্জ অবস্থায় অথবা হজ্জ বেগানা পুরুষ থেকে তাদের সৌন্দর্য লুকিয়ে রাখা তাদের উপর ফরজ।
১২. হজ্জ ও উমরার উদ্দেশ্য নিয়ে মিকাত পার হওয়ার সময় যদি নারী হায়েযগ্রস্ত হয়ে যান তখন কেউ কেউ এ ধারণা করে ইহরাম করেন না যে, পবিত্র অবস্থায় ইহরাম করা শর্ত। তাই ইহরাম ছাড়া তারা মিকাত অতিক্রম করেন। এটি স্পষ্ট ভুল। কারণ হায়েয ইহরামের প্রতিবন্ধক নয়। বরং হায়েযগ্রস্ত নারীও ইহরাম করবেন এবং অন্যেরা যা যা করে তিনিও তা তা করবেন শুধু বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করবেন না; পবিত্র হওয়ার পরে তাওয়াফ করবেন। যদি তিনি ইহরাম না বেঁধে মিকাত পার হয়ে যান তাহলে তার উপর ওয়াজিব হল পুনরায় মিকাতে ফিরে আসা। যদি তিনি ফিরে না আসেন তাহলে একটি ওয়াজিব ছেড়ে দেয়ার কারণে তার উপর দম (পশু উৎসর্গ) দেয়া ওয়াজিব।
১৩. নারী যদি কোন কারণে নুসুক (হজ্জ বা উমরা) সম্পন্ন করতে না পারার আশংকা করেন তাহলে তিনি ইহরামকালে শর্ত করে নিবেন এবং বলবেন: “ইন হাবাসানি হাবিস ফা মাহিল্লি হাইছু হাবাসতানি” (অর্থ- যদি কোন প্রতিবন্ধকতা আমাকে আটক করে তাহলে আমি প্রতিবন্ধকতা স্থলে হালাল হয়ে যাব)। যদি তিনি এ রকম কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তাহলে তিনি হালাল হয়ে যাবেন এবং তার উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না।
১৪. আপনি হজ্জের কাজগুলো আবার একটু স্মরণ করে নিন:
এক: তারবিয়ার দিন অর্থাৎ জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখে গোসল করুন, ইহরাম বাঁধুন এবং এই বলে তালবিয়া পড়ুন: “লাব্বাইকাল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমাতা লাকা ওয়াল মুল্ক। লা শারিকা লাক।” (অর্থ: হে আল্লাহ! আমি হাজির। আমি আপনার দরবারে হাজির। আপনি নিরঙ্কুশ। আমি আপনার দরবারে হাজির। নিশ্চয় যাবতীয় প্রশংসা ও নেয়ামত আপনার-ই জন্য এবং রাজত্ব আপনার-ই জন্য। আপনি নিরঙ্কুশ।)
দুই: মীনায় যাবেন। সেখানে গিয়ে যোহর, আসর, মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায স্ব স্ব ওয়াক্তে চার রাকাত নামাযগুলো কসর (দুই রাকাত দুই রাকাত) করে আদায় করবেন।
তিন: ৯ই জিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর আরাফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। সেখানে যোহর ও আসরের নামায একত্রে যোহরের ওয়াক্তে কসর করে আদায় করবেন। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার মাঠে দোয়া, যিকির ও তওবারত অবস্থান করবেন।
চার: ৯ই জিলহজ্জ সূর্যাস্তের পর আরাফা থেকে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। মুযদালিফাতে পৌঁছে মাগরিব ও এশার নামায একত্রে ও কসর করে আদায় করবেন। ফজরের নামায পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করবেন। ফজরের পর আকাশ ভালভাবে ফর্সা হওয়া পর্যন্ত যিকির, দোয়া ও মুনাজাতের মাধ্যমে কাটাবেন।
পাঁচ: ঈদের দিনের সূর্যোদয়ের পূর্বে মুযদালিফা থেকে মিনার উদ্দেশ্য রওয়ানা হয়ে যাবেন। মিনায় পৌঁছে নিম্নোক্ত কাজগুলো করবেন:
ক. জমরা আকাবাতে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবেন। প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলবেন।
খ. সূর্য কিছুটা উপরে উঠার পর হাদি (হজ্জে উৎসর্গযোগ্য পশু) জবাই করবেন।
গ. মাথার সবগুলো চুলের অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের এক কর পরিমাণ (প্রায় ২ সে.মি.) কর্তন করবেন।
ঘ. মক্কায় গিয়ে তাওয়াফে ইফাযা (ফরজ তাওয়াফ) আদায় করবেন। তামাত্তু হজ্জকারী হলে অথবা ইফরাদ ও ক্বিরানকারী তাওয়াফে কুদুমের সাথে সাঈ করে না থাকলে সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঈ করবেন।
ছয়: ১১, ১২ ও ১৩ ই জিলহজ্জ সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার পর জমরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করবেন; যদি আপনি বিলম্বে মিনা ত্যাগকারী হন। আর যদি অবিলম্বে মিনা ত্যাগকারী হন তাহলে ১১ ও ১২ ই জিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপ করবেন এবং এ রাতগুলো মিনাতে অবস্থান করবেন।
সাত: যখন আপনি নিজে দেশে ফিরে যেতে চাইবেন তখন বিদায়ী তাওয়াফ আদায় করবেন। এর মাধ্যমে আপনার হজ্জের কার্যাবলী সমাপ্ত হবে।
১৫. নারীগণ উচ্চস্বরে তালবিয়া পড়বেন না। বরং নিম্নস্বরে তালবিয়া পড়বেন; যাতে নিজ কানে শুনেন ও আশপাশের মহিলারা শুনতে পায়। ফেতনা থেকে বাঁচতে ও কারো নজরে পড়া থেকে দূরে থাকার জন্য বেগানা পুরুষদেরকে শুনাবেন না। হজ্জের ইহরাম বাঁধার পর থেকে ঈদের দিন জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করা পর্যন্ত তালবিয়া পড়তে থাকবেন।
১৬. যদি কোন নারী তাওয়াফ শেষ করার পর সাঈ করার পূর্বে হায়েযগ্রস্ত হয়ে পড়েন তাহলে তিনি সে অবস্থায় হজ্জের বাকী কাজগুলো শেষ করবেন। ঐ অবস্থাতেই সাঈ সম্পন্ন করবেন। কেননা সাঈর জন্য পবিত্রতা শর্ত নয়।
১৭. যদি নারীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর না হয় তাহলে হায়েয রোধকারী ট্যাবলেট খাওয়া বৈধ।
১৮. হজ্জের সকল কার্যাবলী পালনের ক্ষেত্রে পুরুষদের ভিড় এড়িয়ে চলবেন। বিশেষতঃ তাওয়াফকালে হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়েমানীর কাছে। তদ্রূপ সাঈ ও কংকর নিক্ষেপকালে। যে সময়গুলোতে ভিড় কম থাকে আপনি সে সময়গুলো নির্বাচন করবেন। উম্মুল মুমেনীন আয়েশা (রাঃ) পুরুষদের থেকে দূরে একাকী তাওয়াফ করতেন। ভিড় থাকলে তিনি হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়েমানী স্পর্শ করতেন না।
১৯. নারীদের উপর তাওয়াফের রমল ও সাঈর দৌড় নেই। রমল হচ্ছে- তাওয়াফের প্রথম তিন চক্করে ছোট ছোট কদমে দ্রুত হাঁটা। আর সাঈর দৌড় হচ্ছে- সাঈর প্রতিটি চক্করে সবুজ রঙে চিহ্নিত স্থানটি দৌড়িয়ে পার হওয়া। এ দুটি পালন করা পুরুষদের জন্য সুন্নত।
২০. ছোট্ট একটি বই পাওয়া যায় যে বইটির মধ্যে কিছু বিদআতি দোয়া আছে এবং তাওয়াফ ও সাঈর প্রত্যেক চক্করের জন্য বিশেষ বিশেষ দোয়া লেখা আছে এ বইটি বর্জন করবেন। অথচ এরকম বিশেষ দোয়ার সপক্ষে কোন কুরআন হাদিসের দলিল সাব্যস্ত হয়নি। ব্যক্তি তাওয়াফ ও সাঈর মধ্যে যা খুশি দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনা করে দোয়া করতে পারেন। যদি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত কোন দোয়া দিয়ে দোয়া করেন সেটা উত্তম।
২১. হায়েযগ্রস্ত নারীর জন্য দোয়া ও যিকিরের বই পড়া জায়েয যদি সে বইয়ের মধ্য কিছু কুরআনের আয়াত থাকে তবুও। অনুরূপভাবে স্পর্শ না করে কুরআন শরিফ পড়াও তার জন্য জায়েয।
২২. আপনার শরীরের কোন অংশ উন্মুক্ত করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকবেন বিশেষতঃ যে স্থানগুলোতে কোন পুরুষ আপনাকে দেখে ফেলতে পারে। যেমন- সাধারণ ওজুখানা। কারণ কিছু কিছু নারী এ স্থানগুলোতে পুরুষের অতি কাছাকাছি উপস্থিতিকে পরোয়া করে না। তিনি তার মুখ, হাতের কনুই, পায়ের গোছা পর্যন্ত উন্মুক্ত করে ফেলেন। ক্ষেত্রে বিশেষে মাথার ওড়না খুলে ফেলেন এতে তার মাথা ও গর্দান উন্মুক্ত হয়ে যায়। অথচ এগুলো উন্মুক্ত করা হারাম। এতে করে সে নারী নিজে ও তার দ্বারা অন্য পুরুষেরা ফেতনাগ্রস্ত হতে পারে।
২৩. নারীদের জন্য ফজরের আগে মুযদালিফা ত্যাগ করা জায়েয: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু কিছু নারীকে বিশেষতঃ দুর্বলদেরকে এই অবকাশ দিয়েছিলেন যে, তারা শেষ রাতে চন্দ্র অস্ত যাওয়ার পর মুযদালিফা ত্যাগ করতে পারবে যাতে করে ভিড়ের আগে তারা জমরা আকাবাতে কংকর নিক্ষেপ করতে পারেন। সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে এসেছে- “মীনার রাত্রিতে সাওদা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট লোকদের আগে মীনা ত্যাগ করার অনুমতি চাইলেন। তিনি শরীর ভারী মহিলা ছিলেন। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অনুমতি দিলেন।”
২৪. নারীর অভিভাবক যদি মনে করেন জমরা আকাবার চতুর্দিকে খুব ভিড় হচ্ছে এবং এ অবস্থায় নারীদের নিয়ে কংকর নিক্ষেপ করতে যাওয়া আশংকাজনক সেক্ষেত্রে নারীরা দেরী করে রাতের বেলায় কংকর নিক্ষেপ করা জায়েয। যাতে ভিড় কমে যায় অথবা একেবারে ভিড় না থাকে। এই বিলম্বের কারণে তাদের উপর কোন কিছু আবশ্যক হবে না।
একই বিধান তাশরিকের দিনগুলোতে কংকর নিক্ষেপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। নারীরা আসরের পর জমরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ করতে পারেন। এটা সবাই জানে যে, এ সময়ে ভিড় কিছুটা কম থাকে। যদি এ সময়ের মধ্যেও কংকর নিক্ষেপ করতে না পারেন তাহলে রাতে কংকর নিক্ষেপ করতে কোন দোষ নেই।
২৫. সাবধান সাবধান:
পরিপূর্ণ হালাল হওয়ার আগে কোন নারীর জন্য তার স্বামীকে সহবাস করার বা আলিঙ্গন করার সুযোগ দেয়া জায়েয নেই। পরিপূর্ণ হালাল তিনটি কাজের মাধ্যমে অর্জিত হয়:
এক: জমরা আকাবাতে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করা।
দুই: মাথার সমস্ত চুল এক কর পরিমাণ (প্রায় ২ সে.মি.) কর্তন করা।
তিন: হজ্জের তাওয়াফ (তাওয়াফে ইফাযা) আদায় করা।
এ তিনটি কাজ সম্পন্ন করলে ইহরামের পর নারীর জন্য যা কিছু হারাম হয়েছিল সবকিছু হালাল হবে এমনকি সহবাসও। যদি এ তিনটির মধ্যে দুটি সম্পন্ন করেন তাহলে তার জন্য সহবাস ছাড়া বাকী সবকিছু হালাল হবে।
২৬. চুলের আগা কর্তনকালে বেগানা পুরুষদেরকে চুল দেখানো নাজায়েয। অনেক নারী মারওয়া পাহাড়ের উপর এ কাজটি করে থাকেন। কারণ চুল সতরের অন্তর্ভুক্ত বেগানা পুরুষকে চুল দেখানো জায়েয নেই।
২৭. পুরুষদের সামনে ঘুমানো থেকে সাবধান। যে সব পরিবার তাবু ছাড়া অথবা মানুষের চোখ থেকে আড়াল নেয়ার মত কোন ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া হজ্জ করে থাকেন আমরা সেসব পরিবারের মহিলাদের অনেককে দেখি তারা রাস্তায়, ফুটপাতে, ওভার ব্রিজের নীচে, মসজিদে খাইফে পুরুষদের সাথে একসঙ্গে অথবা পুরুষদের কাছাকাছি স্থানে ঘুমিয়ে থাকেন। এটি বড় ধরনের গুনার কাজ। এ কাজে বাধা দেওয়া ও করতে না দেওয়া কর্তব্য।
২৮. হায়েয ও নিফাসগ্রস্ত নারীর উপর বিদায়ী তাওয়াফ নেই। এটি নারীদের জন্য ইসলামী শরিয়তের বিশেষ ছাড়। হায়েযগ্রস্ত নারীর জন্য বিদায়ী তাওয়াফ না করে তার ফ্যামিলির সাথে দেশে ফিরে যাওয়া বৈধ। সুতরাং হে মুসলিম বোন, এ সহজীকরণ ও এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুন।