মানসিক অসুস্থতার মিথ্যা সনদ দিলেই জেল-জরিমানা

কোনো চিকিৎসক মানসিক অসুস্থতার মিথ্যা সনদ দিলে জেল-জরিমানার বিধান রেখে আইন করতে যাচ্ছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল সোমবার তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন-২০১৮’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়।

পরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) এন এম জিয়াউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ১৯১২ সালের একটি আইনকে হালনাগাদ করে নতুনভাবে বাংলায় রূপান্তর করে এই আইন করা হচ্ছে। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাসংক্রান্ত নাগরিকদের মর্যাদা সুরক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা দেয়া, সম্পত্তির অধিকার ও নিশ্চিতকরণ, পুনর্বাসন ও সার্বিক কল্যাণ নিশ্চিতে একটি যুগোপযোগী আইন প্রণয়নের অংশ হিসেবে এই আইন।

প্রস্তাবিত আইনে ৩১টি ধারা রয়েছে জানিয়ে জিয়াউল আলম বলেন, প্রস্তাবিত আইনে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক সব কার্যক্রম পরিচালনা, উন্নয়ন, সম্প্রসারণ, নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব সরকারের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রদান এবং এ সংক্রান্ত সংক্ষুব্ধতায় প্রতিকারের লক্ষ্যে মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ মনিটরিং কমিটি গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য চিকিৎসাবিষয়ক হাসপাতাল স্থাপন, পরিচালনা ও মানসম্মত সেবা দেয়ার বিষয়েও খসড়া আইনে প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় পেশাজীবী হিসেবে নিয়োজিত কোনো ব্যক্তি মানসিক অসুসস্থতা নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মিথ্যা সনদ দিলে ৩ লাখ টাকা জরিমানা, এক বছর কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়া হবে। অভিভাবক বা ব্যবস্থাপক মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা বা সম্পত্তির তালিকা প্রণয়ন বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে অবহেলা বা আদালতের কোনো নির্দেশ বাস্তবায়ন না করলে ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত হবেন। এ ছাড়া, কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীনে কোনো বিধান না মানলে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড ৬ মাস কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় একটি অধিদপ্তর গঠনের বিধান রেখে গত ৩ জানুয়ারি ‘মানসিক স্বাস্থ্য আইন’-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। আইনের খসড়ার নীতিগত অনুমোদনের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেছিলেন, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের জন্য পরিচালক পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে একটি অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করা হবে।

জেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য রিভিউ মনিটরিং কমিটি গঠনের কথা বলা হয়েছে, যার সভাপতি হবেন জেলা প্রশাসক। এই আইন কার্যকরের ৯০ দিনের মধ্যে যে মানসিক হাসপাতালগুলো আছে সেগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে। এই আইন লঙ্ঘন করলে শাস্তি পেতে হবে। বেসরকারি মানসিক হাসপাতাল স্থাপনের লাইসেন্স দেয়া, নবায়ন, ফি- এগুলো বিধি দিয়ে নির্ধারণ করা হবে।